আসন্ন কোরবানির পশুর বাজারকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের পশুর হাট কেন্দ্রিক প্রস্তুতি চলছে প্রান্তিক থেকে ছোট বড় খামারিদের। ক্ষুদে প্রান্তিক কৃষকরা যেমন দু-চারটি কোরবানির পশু নিয়ে স্বপ্ন দেখছে আবার বড় খামারিরা ও বিগত দিনের লাভ-লোকসান খতিয়ে স্বপ্ন বাঁধছে নতুন প্রত্যয়ে। আবার গেল বছরের লোকসান কাটাতে মরিয়াও বেপারীরা।
চট্টগ্রাম জেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, আসন্ন কোরবানি ঈদে চট্টগ্রাম শহরসহ পুরো জেলায় ৭ লক্ষ গরুর চাহিদা রয়েছে। জেলার বিভিন্ন খামারি ও প্রান্তিক পশুপালনকারীদের থেকে প্রাপ্ত তথ্যে ৫ লক্ষ গরুর যোগান রয়েছে এবার। ঘাটতি রয়েছে আরো ২ লক্ষ প্রায়। তবে এই চাহিদা খুব সহজেই পূরণ হয়ে যাবে দেশের অভ্যন্তরের উত্তরাঞ্চলের গরু দিয়ে। বিশেষ করে নোয়াখালী, সিরাজগঞ্জ, মাদারীপুর জেলা থেকে আসা গরুতেই প্রায় বছরই ঘাটতি চাহিদা পূরণ হয়।
চট্টগ্রাম জেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগের উপ পরিচালক ডা. মো. রেজাউল হক বলেন, চট্টগ্রামের চাহিদার তুলনায় যে পরিমাণ গরু রয়েছে তাও কম নয়। তবে শিল্প ও বাণিজ্যিক এলাকার কারণেই শহরের জন্য ঘাটতিটা বেশি থাকে। ইতিমধ্যে জেলার মীরসরাই, চন্দনাইশ ও ফটিকছড়ি উপজেলায় গড়ে ওঠা খামারের গরুতে ঘাটতি আর থাকবে না এমনটাই আশা করছি। তিনি আরো বলেন, আর বেশি দূরে নয় চট্টগ্রাম থেকেই দেশের অন্যান্য স্থানে কোরবানির পশু সরবরাহ করা হবে। আবার মীরসরাই অঞ্চলের খামারেও এখন ভালো জাতের বড় গরু লালন হচ্ছে।
মীরসরাই উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. শ্যামল চন্দ্র পোদ্দার জানান, মীরসরাই উপজেলায় বর্তমানে ২৬৬টি ছোট বড় খামার রয়েছে। এবারও কোরবানির জন্য প্রায় ৩৩ হাজার ষাঁড়, বলদ ও মহিষ বিক্রির জন্য প্রস্তুতি রয়েছে। যা এই অঞ্চলের কোরবানির পশুর চাহিদা থেকেও পরিমাণে কয়েক হাজার বেশি। তবে উন্নত ও ভাল জাতের গরুগুলো ঢাকা-চট্টগ্রামে বিক্রির জন্য নেয়া হতে পারে। বিশেষ করে শীর্ষ গরুর খামারী নাহার এগ্রো, ওয়াহেদপুরের নাছির ও জসিম উদ্দিনের খামার, ফারদিন এগ্রোসহ কিছু শীর্ষ স্থানীয় খামারে হৃষ্টপুষ্ট উন্নত জাতের গরু এলাকা ও এলাকার বাইরের বিভিন্ন হাটে তোলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে। উপজেলার করেরহাটের নলখো গ্রামের নাহার এগ্রোর খামারি রাকিবুর রহমান টুটুল বলেন, করোনার কারণে আমরা গত বছর অনলাইনে প্রচার করেই শহরে প্রায় দুইশত গরু বিক্রি করেছি। দামও পেয়েছি ভাল। সর্বোচ্চ ৭ লক্ষ টাকায়ও বিক্রি হয়েছে আমাদের দৃষ্টিনন্দন এবং ওজনে সেরা গরু। র্স্বোচ্চ ৯শত কেজি ওজনের গরু ছিল গত বছর। এবারও গতবারের চেয়ে ভাল প্রস্তুতি চলছে। ফারদিন এগ্রোর খামারি মাস্টার রেজাউল করিম বলেন, আমি গতবছর করোনার জন্য বাজারে আশানুরূপ দাম পাইনি, তাই এবার অনলাইনে প্রচারণার কথা ভাবছি। এবার করোনার আতংক কিছুটা কম বলে আশা করছি লাভবান হতে পারবো। মীরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শ্যামল পোদ্দার বলেন, বাজারে অসুস্থ বা কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা অসুস্থ পশুর দিকে আমাদের নজরদারি রয়েছে। তবে তিনি কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা ওষুধ সেবনে গরুর যে কোনো সময় প্রাণহানি ঘটতে পারে বলে খামারিদের সতর্ক করে দেন। এতে লাভের বিপরীতে লোকসানের ঝুঁকিই বেশি থাকবে।
হাইতকান্দি ইউনিয়নের প্রান্তিক গরু খামারি মিয়া চান বলেন, গত কয়েক বছর ধরে অনেক শ্রম ও ত্যাগের পর খামারটা দাঁড় করেছি। গেল বছর নানা প্রতিকূলতায় বেশি সুবিধা হয় নি; এবার আশা করছি গরুর দাম ভালো পাব।
মেহেদীনগরের মহিষ খামারের মোশাররফ বলেন, দিনে দিনে মহিষের মাংসের চাহিদা বাড়ছে। তাই গত বছরের তুলনায় এ বছর বেড়েছে মহিষের খামারও।
পশু সম্পদ কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে এবার মীরসরাই উপজেলায় ৫ হাজারের বেশি মহিষের লালন পালন হয়েছে। খামারগুলোতে ছাগল-ভেড়াও রয়েছে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার।
উল্লেখ্য, গত বছর করোনা মহামারীতে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা লোকসান গুনেছিলেন। এবছর সেই লোকসান পুষিয়ে নিতে আশাবাদী তারা।