পল্লী বিদ্যুতের আন্দোলনকারীদের কড়া বার্তা সরকারের

| বুধবার , ২৮ মে, ২০২৫ at ৮:২৬ পূর্বাহ্ণ

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির চলমান আন্দোলনকে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা হিসেবে দেখছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এই আন্দোলনের সঙ্গে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নিবেদিত কর্মকর্তা কর্মচারীদের কোনো সম্পর্ক নেই দাবি করে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আন্দোলন প্রত্যাহার করে কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকার গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে, পল্লী বিদ্যুৎ সংস্কার বিষয়টিকে অজুহাত হিসেবে সামনে এনে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কিছু কর্মচারী দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন যা অভিপ্রেত নয়। তথাকথিত ‘বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ এসোসিয়েশন’ নামক অনিবন্ধিত একটি সংগঠনের প্রেস বিজ্ঞপ্তি সরকারের গোচরীভূত হয়েছে। এরূপ সংগঠন বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কোনো বৈধ সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব করে না। দেশব্যাপী নিয়োজিত পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নিবেদিত কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে এ আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই।

সরকারি বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) মাধ্যমে দেশের গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। এসব সমিতির কয়েক হাজার কর্মী চাকরিবিধি বাস্তবায়ন, হয়রানি বন্ধ, মামলা প্রত্যাহারসহ সাত দফা দাবিতে গত সাত দিন ধরে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করে আসছেন। তাদের দাবি, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীদের ‘ফ্যাসিবাদী কায়দায় দমনপীড়নের মাধ্যমে কর্মপরিবেশ অস্থিতিশীলকারী ও অত্যাচারী’ আরইবি চেয়ারম্যানকে অতি দ্রুত অপসারণ করতে হবে।

গত বছরের অক্টোবরে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। তাতে কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন ছিলেন ওই সব এলাকার গ্রাহকরা। এবার তারা বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রেখে কর্মসূচি পালন করলেও বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত গ্রাহকসেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। সরকার এই আন্দোলনকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে জানিয়ে মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উদ্ভূত পরিস্থতি সুষ্ঠুভাবে সমাধানের জন্য নিচের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে

. পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ভূমিকা ও কাঠামোগত সংস্কারের জন্য সরকার ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করেছে। আসন্ন ঈদুল আজহার ছুটির আগেই সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিয়ে এ কমিটি একটি উপস্থাপনার মাধ্যমে রিপোর্ট চূড়ান্ত করবে এবং রিপোর্ট পাওয়ার পর সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। ২. পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মচারীদের সাথে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের কর্মচারীদের পদমর্যাদার বিষয়টি একটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় আনার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি কাজ করছে এবং আগামী সপ্তাহেই এ বিষয়ে নির্দেশনা জারি করা হবে। ৩. শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির যে কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে যারা নাশকতামূলক কাজের সঙ্গে জড়িত নন, তাদের বিরুদ্ধে গৃহীত ব্যবস্থা পুনঃবিবেচনা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ৪. পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এর ক্রয়, নিয়োগ ও পদোন্নতি প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান এবং অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ৫. পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কিছু পদে কর্মরতরা ঝুঁকিপূর্ণ ও জরুরি সেবামূলক কাজের সঙ্গে জড়িত। এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিযুক্ত হতে নির্দিষ্ট বয়সসীমা এবং শারীরিক সক্ষমতা রক্ষা করতে হয়। ঝুঁকিপূর্ণ কাজের জন্য তারা বাংলাদেশের বিদ্যমান শ্রম আইন অনুযায়ী বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকেন। বাংলাদেশের শ্রম আইনটি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) স্বীকৃত। ৬. গত আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীদের মধ্যে ৬ হাজার ২৫ জনকে নিয়মিত করা হয়েছে এবং এই প্রক্রিয়া পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে চলমান। ৭. কর্মচারীদের বদলি একটি নিয়মিত কার্যক্রম। যে কোনো কর্মচারী কোনো একটি কর্মস্থলে ৩ বছর অতিক্রান্ত হলেই তিনি বদলিযোগ্য হবেন এবং এটি একটি স্বাভাবিক চর্চা। এছাড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মী পর্যায়ের বদলি সমিতির নিজস্ব প্রক্রিয়াতেই করা হয়। পাশাপাশি মানবিক দিক বিবেচনা করে যেসব কর্মচারী স্বামীস্ত্রী হয়েও ভিন্ন ভিন্ন কর্মস্থলে কর্মরত ছিলেন এরকম ৩ হাজার ৭৯ জন কর্মচারী দম্পতিকে সমপ্রতি একই কর্মস্থলে বদলি করা হয়েছে। তাছাড়া সংযুক্ত কর্মচারীদের বেলায় এ পর্যন্ত ৬ জনকে তার স্ব স্ব কর্মস্থলে ফেরত পাঠানো হয়েছে এবং বাকিদের বিষয়টিও বিবেচনাধীন। ৮. পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কিছু কর্মচারীর বিরুদ্ধে যেসব মামলা দায়ের করা হয়েছে, সেই মামলাগুলো সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে করা হয়েছে এবং তা আদালতে বিচারাধীন। অভিযোগ বিবেচনা ও বিচারের ক্ষেত্রে আদালত স্বাধীন এবং অভিযুক্ত কর্মচারীরা আদালতের বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্দোষ প্রমাণিত হতে পারে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এসব পদক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আন্দোলনকারী কর্মচারীরা তাদের রাষ্ট্রীয় কর্তব্য সম্পর্কে সচেতনতা ও দায়বদ্ধতা থেকে এবং দেশের স্বার্থ বিবেচনায় রেখে আন্দোলন প্রত্যাহার করে স্ব স্ব কর্মস্থলে ফেরত যাবে এবং অহেতুক সভা সমাবেশ থেকে বিরত থাকবে বলে সরকার আশা করে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১২ গরু ভাটিয়ারী থেকে উদ্ধার গ্রেপ্তার ১
পরবর্তী নিবন্ধকাপ্তাই হ্রদে নতুন প্রজাতির আইড় মাছের সন্ধান