১৯৭১ সালের মার্চ মাস ছিল প্রতিরোধ আর সংগ্রামের। একাত্তরের মার্চের তৃতীয় দিন ঢাকা ছিল প্রতিরোধের নগরী, ঘোষিত হয় স্বাধীনতা সংগ্রামের রূপরেখা। পল্টনে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ আয়োজিত বিশাল সমাবেশ থেকে অসহযোগের ডাক দিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেখানে পাঠ করা হয় স্বাধীনতার ইশতেহার। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সমস্ত আনুষ্ঠানিক ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এই দিনেই নির্ধারণ করা হয় সাড়ে সাত কোটি মানুষের স্বপ্নের লালিত দেশের নাম হবে ‘বাংলাদেশ’। কবিগুরুর ‘আমার সোনার বাংলা’ হবে জাতীয় সংগীত। সেদিনের জনসভার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তৎকালীন ছাত্রলীগ সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘৩ মার্চ পল্টনে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের জনসভা ছিল : নেতা (বঙ্গবন্ধু) প্রায় পৌনে দুইটার সময় আমাকে ডেকে বললেন, তিনি পল্টনের জনসভায় বক্তৃতা করবেন। নেতা এসেছিলেন বাংলার জনতাকে সুশৃঙ্খল মরণজয়ী সংগ্রামের ডাক দিতে। মন্ত্রমুগ্ধ বাংলা তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিল। দুষ্কৃতকারীদের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর সে সভা ছিল অনির্ধারিত, কিন্তু জনতা ছিল অগণিত। সেদিনের ঘটনা বর্ণনাতীত। সভায় ১ নম্বর ইশতেহার দেওয়া হয়। জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা নির্ধারণ, বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীন বাংলার সর্বাধিনায়ক ঘোষণা ছাড়াও বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শনের আলোকে বর্তমান চারটি রাষ্ট্রীয় নীতির কথা সুস্পষ্টভাবে দফাওয়ারী ঘোষণা করা হয়।’
এদিন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান আগামী ১০ মার্চ ঢাকায় নেতৃবৃন্দের সম্মেলন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। রাওয়ালপিন্ডির প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে ঘোষণা করা হয়, এই সম্মেলন অনুষ্ঠানের পর দুই সপ্তাহের মধ্যে জাতীয় পরিষদ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। বঙ্গবন্ধু প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার আমন্ত্রণ তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাখ্যান করেন। বঙ্গবন্ধু ভুট্টোর উদ্দেশে বলেন, গণতান্ত্রিক নিয়মে প্রণীত এক শাসনতন্ত্র যদি না চান তাহলে আপনাদের শাসনতন্ত্র আপনারা রচনা করেন। বাংলাদেশের শাসনতন্ত্র আমরাই রচনা করব।