পলি জমে অকেজো ১১ বছর বর্ষায় পাঁচ বছর চাষাবাদ বন্ধ

ছোট কুমিরা খালের স্লুইচ গেইট

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি | রবিবার , ৩০ এপ্রিল, ২০২৩ at ৭:৫৬ পূর্বাহ্ণ

সীতাকুণ্ডের সৈয়দপুর ইউনিয়নের বশরতনগর গ্রামে ছোট কুমিরা খালের উপর নির্মিত স্লুইচ গেইটটি গত ১১ বছরেরও বেশি সময় ধরে সংস্কার না হওয়ায় অকেজো হয়ে পড়ে আছে। প্রতিবছর বর্ষায় টানা বৃষ্টিতে কেবল কৃষিপ্রধান সৈয়দপুর ইউনিয়ন নয়, পার্শ্ববর্তী বারৈয়ারঢালা, মুরাদপুর ইউনিয়ন ও সীতাকুণ্ড পৌরসভার বেশিরভাগ গ্রাম ডুবে যায়। শুষ্ক মৌসুমে পানি ধরে রেখে কৃষিতে সেচের জন্য ২০০৩ সালে স্লুইচ গেইটটি নির্মাণ করেছিল স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি)। গেইটটি দিয়ে আটকানো পানি কয়েকবছর সেচের কাজেও ব্যবহার করেছিল কৃষকেরা।

স্থানীয়রা জানান, ১০০ ফুটের খাল দখল হতে হতে সেটি এখন কোথাও ৩০ ফুটের নিচে নেমে গেছে। এছাড়া বর্ষায় পলি জমে সেটির গভীরতা একেবারে কমে গেছে। ফলে খালটি দখলমুক্ত, খননকাজ ও রাবার ড্যামটি অপসারণ করে সেখানে সেতু নির্মাণ করতে হবে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য, খালটি খননের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবটি পাশ হলে জুনের মধ্যে খননকাজ শুরু হবে। উপজেলা প্রশাসন বলছে, খনন কাজ শুরু হলে সিট অনুযায়ী দখলমুক্ত করে খালটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে।

সরেজমিনে দেখা যায়, স্লুইচ গেইটটির সামনে খালের পানিতে ভাসমান ময়লার স্তূপ। যা পানির প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করছে। রাবার ড্যামটির তিনটি দরজার একটিরও কপাট নেই। কপাট আটকানোর রড ছাড়া অন্যান্য যন্ত্রাংশ উধাও। খালের পানি আটকে রাবার ড্যামের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় বলে সেখানে চারটি সিমেন্টের পাইপ বসানো হয়েছে।

স্লুইচ গেইটটির পাশে আটকানো নামফলকে লেখা রয়েছে, এটির নির্মাণকাল ২০০২ সাল থেকে ২০০৩। এতে ব্যয় হয়েছিল ১৯ লাখ ২১ হাজার ৫৯৬ টাকা। বাস্তবায়ন করেছিল এলজিইডি। স্থানীয় বাসিন্দা আবুল বশর, প্রদীপ, মোহন ও গোবিন্দ জলদাস বলেন, চোরের দল রাতের আধারে স্লুইচ গেইটটির কপাটসহ যাবতীয় যন্ত্রাংশ খুলে নিয়ে গেছে। ফলে শীতে সেখানে পানি জমে থাকে না। বর্ষায় পৌরসভার ময়লা এসে স্লুইচ গেইটটির দরজায় জড়ো হয়ে পানি চলাচলে বাধাগ্রস্ত করে। ফলে পানি জমে প্লাবনের সৃষ্টি হয়। তারা আরও বলেন, খালটির দুই তৃতীয়াংশ দখল করে নিয়ে সেখানে গাছ লাগিয়েছে স্থানীয়দের অনেকে। ফলে পাহাড়ি ঢলের পানি দ্রুত সাগরে নেমে যেতে পারে না। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। আবদুল জলিল, সেকান্দর মিয়াসহ স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, গত ১১ বছর বর্ষায় তাদের ধান চাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রতিবারই ঢলের পানিতে ডুবে ধান পচে যায়।

গত পাঁচ বছর ধরে বেশিরভাগ কৃষক বর্ষায় চাষাবাদ করতে পারেনি। সৈয়দপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এইচ এম তাজুল ইসলাম নিজামী বলেন, তার ইউনিয়নটি কৃষি প্রধান। দুটি খালের মুখে স্লুইচ গেইট অকেজো থাকার কারণে বর্ষায় তার ইউনিয়নের বাসিন্দারা ডুবে মানবেতর জীবন যাপন করে। সীতাকুণ্ড পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা বদিউল আলম বলেন, স্লুইচ গেইটটির কারণে বর্ষায় তার পৌরসদরের বেশিরভাগ এলাকা ডুবে যায়। এমনকি পৌরসভা কার্যালয়, উপজেলা পরিষদসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তর, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সরকারি অন্যান্য কর্মকর্তারদের বাসভবন ডুবে যায়। বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হন কৃষকসহ দিনমজুরেরা। তবে স্লুইচ গেইটটির অবস্থান পৌরসভা সীমানার বাইরে হওয়ায় এক্ষেত্রে তাদের করার কিছু নেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএসএসসি পরীক্ষার্থীদের মাঝে মহানগর ছাত্রদলের শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ
পরবর্তী নিবন্ধরাঙ্গুনিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভা