সাজতে ভালোবাসতো শিশু আয়াত। মাদরাসায় যাওয়ার সময় হোক কিংবা বেড়াতে যাওয়ার সময় পছন্দের জামা তার চাই–ই চাই। সাথে বায়না ধরতো মায়ের কাছে, তাকে সাজিয়ে দিতে। ১৫ নভেম্বর মাদরাসায় পড়তে যাওয়ার সময় মা আলো বেগম মেয়েকে সাজিয়ে দেন। তার চুলগুলো বুঝি তার মতোই চঞ্চল; হাওয়ায় উড়তে চায় কেবল। বেনী করে দেওয়ার পাশাপাশি তাই মাথার সামনে ক্লিপ দিয়ে আটকানো ছিল এলোমেলো চুল। গতকাল তার খণ্ডিত মাথা উদ্ধারের পর দেখা গেল বিভিন্ন স্থান থেকে চুল উঠে গেলেও দুটি ক্লিপ ঠিকই আটকে আছে মাথার সামনের অংশে চুলের সাথে। মাথার চুল ও ক্লিপ দেখে দেহাংশ শনাক্ত করেন আয়াতের পিতা সোহেল রানা। হত্যার ১৭ দিনের মাথায় গতকাল বৃহস্পতিবার আকমল আলী স্লুইচ গেট এলাকার সাগরপাড় থেকে পলিথিন মোড়ানো মাথাটি উদ্ধার করে পিবিআই।
আগের দিন বুধবার আয়াতের খণ্ডিত ‘দুই পা’ উদ্ধারের পর যখন পিবিআই কর্মকর্তা ও সাংবাদিকরা তার পিতা সোহেল রানাকে সান্তনা জানাচ্ছিলেন, তখন তার আকুতি ছিল– ‘মেয়ের মাথাটা খুঁজে দেবেন? শেষবারের মতো একবার চেহারাটা দেখবো।’ সন্তানের চেহারাটি দেখার জন্য বাবার এই আকুতির জবাবে নিরুত্তর ছিলেন সবাই। তার দাবি, মেয়ে আয়াতের মাথাটিও এই স্লুইস গেটের ভেতরে আছে। তিনি বলেন, খুনি আবির তিনটি পুটলি এই স্লুইস গেটে ফেলেছে। এর মধ্যে দুইটা উদ্ধার হলে আরও একটি পুটলি থাকবে। গতকাল আয়াতের খণ্ডিত মাথাটি উদ্ধারের
পর সে কথাটাই আলোচিত হচ্ছিল ঘটনাস্থলে ভিড় জমানো মানুষের মাঝে।
পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা বলেন, অভিযুক্ত আবিরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী আয়াতের দেহ অনুসন্ধানে আকমল আলী খালের স্লুইসগেট এলাকায় সকাল থেকে অভিযান চালায় পিবিআই। তল্লাশির একপর্যায়ে খালের স্লুইসগেট থেকে আধা কিলোমিটার দূরে সাগরের কাছাকাছি একটি পলিথিন ব্যাগে কিছু আছে বলে আমাদের জানান এক জেলে। পরে অভিযানে থাকা পিবিআই সদস্যরা আবির আলীর বর্ণনা অনুযায়ী স্কচটেপ মোড়ানো পলিথিন দেখে আয়াতের দেহাংশ থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি আরও বলেন, হত্যার ১৭ দিন হয়ে যাওয়ায় অনেকটা বিকৃত হয়ে গেছে আয়াতের চেহারা। তবে মাথার চুল ও ক্লিপ দেখে দেহাংশ শনাক্ত করেন আয়াতের বাবা। উদ্ধার হওয়া খণ্ডিত অংশগুলোর ডিএনএ টেস্ট করা হবে।
এদিকে আয়াত হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মনোজ কুমার দে আজাদীকে বলেন, আয়াতের লাশের তিনটি খণ্ড ময়নাতদন্তের পর তার বাবার কাছে দেয়া হয়েছে।
আয়াতের পরিবারের পক্ষ থেকে জানা গেছে, গাউসিয়া কমিটি নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্সযোগে আয়াতের দেহাংশ এলাকায় নিয়ে যায়। রাত সাড়ে নয়টার দিকে বন্দরটিলা নয়ারহাট আলী শাহ জামে মসজিদে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।
সাগরপাড় পর্যন্ত আয়াতের খণ্ডিত মাথাটি কীভাবে গেল– এমন প্রশ্নের উত্তরে পিবিআই পরিদর্শক মো. ইলিয়াস খান বলেন, আমরা গতকাল স্লুইচ গেটটি খুলেছিলাম। তখন আমরা আয়াতের দুইটি পা উদ্ধার করি। হয়ত স্লুইচ গেটের নিচ দিয়ে ভাটার টানে মাথাটি সাগড় পাড়ে গিয়ে আটকায়। উদ্ধার হওয়া খণ্ডিত অংশগুলোর ডিএনএ টেস্ট করা হবে এবং বাকি অংশগুলোর সন্ধানে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
এদিকে মাথা উদ্ধারের ঘটনায় স্লুইসগেট এলাকায় আসেন আয়াতের স্বজনরা। দেহাংশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন শিশুটির পরিবারের সদস্যরা। এর আগে, বুধবার দুপুরে একই এলাকা থেকে আয়াতের খণ্ডিত দুই পা উদ্ধার করে পিবিআই। এ নিয়ে শরীরের তিনটি খণ্ডিতাংশ উদ্ধার করা হলো। আয়াত ইপিজেড থানার নয়ারহাট ওয়াছমুন্সী বাড়ি এলাকার সোহেল রানার মেয়ে। তাদের বাড়িতে দীর্ঘদিন ভাড়া থাকে খুনি আবিরের পরিবার।