সাজেকে রিসোর্ট কটেজসহ ৯৫ স্থাপনায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পর্যটকদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। জানা গেছে, রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ভ্যালি পর্যটনকেন্দ্রের ‘অবকাশ ম্যানুয়েল রিসোর্ট’সহ আশপাশের এলাকায় আগুনে পুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সাজেকে পর্যটক ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করে জারি করা আদেশে প্রত্যাহার করেছে প্রশাসন। মঙ্গলবার ২৫ ফেব্রুয়ারি দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিক উল্লাহ। তিনি বলেন, ‘সাজেকের ব্যবসায়ীদের আবেদনে ও সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, দেশে ১৬৭৫টি পর্যটনকেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে ৩২ জেলার ১০৪টি স্পটে পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। বাকি ১৫৭১টিতে নিরাপত্তার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। এসব পর্যটন স্পট অনিরাপদ থেকে যাচ্ছে। এ চিত্র পর্যটকদের জন্য উদ্বেগের বিষয়। দেশে দিন দিন পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে। ভ্রমণ পিয়াসীরা প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য দেখার জন্য দুর্গম এলাকায় যাচ্ছে। নিজেরাই এসব পর্যটন কেন্দ্র আবিষ্কার করছে। সেখানে গিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছে। ধীরে ধীরে সেসব স্থান পর্যটন স্পটে পরিণত হচ্ছে। সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে, তারা যেসব স্পটে যাচ্ছে, সেখানে যাতায়াত, থাকা–খাওয়ার পর্যাপ্ত সুযোগ–সুবিধা নেই। তার চেয়েও বড় কথা, নিরাপত্তার সংকট রয়েছে। মিরসরাইয়ের নাপিত্তাছড়া ঝরনা দেখতে গিয়ে তিন তরুণ নিখোঁজ হয়। পরে ঝরনার নিচে তাদের লাশ পাওয়া যায়। এছাড়া পরিচিত ও জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রগুলোতেও নিরাপত্তাসহ পর্যাপ্ত সুযোগ–সুবিধার অভাব রয়েছে। সেসব কেন্দ্রে পর্যটকরা কখনো কখনো স্থানীয় দুর্বৃত্তদের দ্বারা হেনস্থার শিকার হয়। এমনকি মহিলা পর্যটকরা শ্লীলতাহানির শিকার হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, পর্যটনকেন্দ্রে গিয়ে বিদেশি পর্যটকরাও হয়রানি থেকে রেহাই পাচ্ছে না। পর্যটনকেন্দ্রে গিয়ে ধর্ষণ, শ্লীলতাহানি, ছিনতাই, হয়রানি বা উত্ত্যক্ত হওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটছে।
‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও ঐতিহ্য প্রদর্শনে ট্যুরিস্ট পুলিশের ভূমিকা’ শীর্ষক ওয়ার্কশপে বক্তারা বলেন, নিরাপত্তা, অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতার অভাবে বাংলাদেশে পর্যটন শিল্প গড়ে উঠছে না। মালয়েশিয়া ১৯৯৯ সালে যে গাইডলাইন মেনে পর্যটন খাতের সূচনা করেছিল তার ফল এখন পাচ্ছে সরকার। বাংলাদেশে প্রায় ৭শ নদী রয়েছে, তাই নদীনির্ভর পর্যটনের সম্ভাবনা মালয়েশিয়ার চেয়েও বেশি। দেশে ৬৬টি চা বাগান এবং প্রায় ৫ হাজার প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান রয়েছে। যা দর্শনে প্রতিবছরে দেশ–বিদেশের বহু লোক আসেন। প্রচুর সম্ভাবনা থাকলেও নিরাপত্তা, অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতার অভাবে তা ভেস্তে যাচ্ছে। একই সঙ্গে সমন্বয়ের অভাব, কার গাইডলাইন কে মানবে সে নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রত্যেক এলাকায় পর্যটন পুলিশের তত্ত্বাবধানে একটি করে হেরিটেজ সাইড স্থাপন করা যেতে পারে। পুলিশ এসব উদ্যোগ নিলে ভালো কিছু করা সম্ভব। তবে পর্যটন নদী কেন্দ্রিক বা নৌ–জাহাজ কেন্দ্রিক প্রসার করা যেতে পারে। একই সঙ্গে সেন্টমার্টিন এবং কক্সবাজারের দূষণ রক্ষায় পর্যটন পুলিশকে দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে বলে অভিমত দেন তাঁরা।
বিশ্লেষকরা বলেন, প্রায় প্রতিনিয়তই পর্যটকদের নানা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। খাতটিতে শৃঙ্খলার বড়ই অভাব রয়েছে। শুধু পর্যটনকেন্দ্রেই মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে না, পরিস্থিতি এখন এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে সড়ক–মহাসড়ক, গ্রাম–গঞ্জ থেকে শুরু করে শহরেও মানুষ এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে। অথচ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাজই হচ্ছে, জননিরাপত্তায় সবসময় সজাগ থাকা। তাদের দায়িত্বই হচ্ছে, সার্বক্ষণিক জনগণের সেবা দেয়া। দুঃখের বিষয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিষয়ে অভিযোগ– তারা তাদের মূল দায়িত্ব পালন করছে না। অনেক ক্ষেত্রে নীরব ভূমিকা পালন করছে।
মূলত অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও দ্রুত পরিবর্তনে মানুষ আতঙ্কিত। এর প্রভাব পড়েছে সাজেকসহ পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে। পর্যটন সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, টাঙ্গুয়ার হাওরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, শ্রীমঙ্গলের চা বাগান ও জাফলংয়ের জলপ্রপাত অনেক পর্যটককে আকৃষ্ট করলেও দ্রুত পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য কাজ না করলে নিরুৎসাহিত হবেন পর্যটকরা। চলমান পরিস্থিতি পর্যটন ব্যবসায় প্রভাব ফেলেছে। কক্সবাজার হোটেল–মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ মনে করেন, পর্যটকের নিরাপত্তা প্রদান করা গেলে প্রচুর পর্যটকের আগমন ঘটবে।