কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সারা দেশের ন্যায় কক্সবাজারেও কারফিউ চলছে। কারফিউতে আটকা পড়েছে কয়েক হাজার পর্যটক। ইতোমধ্যে প্রশাসনের বিশেষ ব্যবস্থাপনায় কক্সবাজার ছেড়েছে ৩ হাজার পর্যটক। এছাড়া বিশেষ পাস নিয়েও নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরেছে আরও কয়েক হাজার পর্যটক। যার ফলে পর্যটনে আবারও অশনি সংকেত বিরাজ করছে। এ নিয়ে পর্যটন ব্যবসায়ীদের মাঝে ভর করেছে দুঃশ্চিন্তা।
গতকাল বৃহস্পতিবার সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, সুনসান নীরবতা। অলস সময় পার করছেন কিটকট, জেটস্কি, বীচ বাইক, ঘোড়া চালক, ঝিনুকসহ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। গুটি কয়েক পর্যটক বালিয়াড়িতে অবস্থান করছে। কেউ কেউ সমুদ্র স্নানে ব্যস্ত। স্থানীয় কিছু লোকজন সৈকতের অবস্থা দেখার জন্য বেরিয়েছেন। পর্যটক না থাকায় অলস সময় পার করছেন হোটেল কর্মচারীরা। অধিকাংশ হোটেল কর্তৃপক্ষ ছুটি দিয়েছে কর্মচারীদের। সি ভিউ রিসোর্টের কর্মচারী মো. জসিম উদ্দিন বলেন, অবসর সময় কাটাচ্ছি। কারফিউর কারণে পর্যটকদের আনাগোনা নেই। ফলে অলস সময় কাটাচ্ছি।
রিগ্যাল প্যালেসের ফ্রন্ট অফিসার নজরুল ইসলাম বলেন, কারফিউর কারণে আমার হোটেলে প্রায় ১৫ পর্যটক আটকা পড়েছিলেন। তাদের সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এখন পুরো হোটেলের রুম ফাঁকা পড়ে আছে। কবে নাগাদ আবার পর্যটক আসবে সেটা বলা মুশকিল।
হোটেল সি ক্রাউনের কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর জানান, পর্যটন ক্ষেত্রে সবার আগে ধাক্কা লাগে। এ ধাক্কা কাটতে সময় লাগে অনেক দিন। রাজনৈতিকসহ নানা সমস্যা তৈরি হলেই আমাদের হোটেল বন্ধ হয়ে যায়।
ক্যামেরাম্যান মো. মাসুদ বলেন, প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫ শ টাকা আয় হতো। গত কয়েক দিনে ১০০ টাকাও আয় হয় না। বৌ–বাচ্চা নিয়ে সংসার চালানো, মাস গেলে বাড়ি ভাড়া দিয়ে টিকে থাকা এখন কষ্ট হচ্ছে। সৈকতে চা বিক্রেতা মামুন বলেন, মানুষ অস্থিরতা দেখে ভয় পাচ্ছে ঘর থেকে বের হতে। ফলে চা বিক্রি হয় না। কষ্ট করে দিন পার করি।
কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম ডালিম আজাদীকে বলেন, শুধু মাত্র আবাসিক হোটেলের রেস্তোঁরাগুলো খোলা রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে পর্যটকদের জন্য আমরা খাবারে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছি। কিন্তু তবুও পর্যটকেরা থাকছে না।
কক্সবাজার হোটেল–মোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার আজাদীকে বলেন, দেশের মধ্যে কোনো অস্থিরতা থাকলে মানুষ ঘর থেকে বের হয় না। এ সংকট দূর না হলে আমরা পথে বসে যাব। আমাদের সংকট উত্তরণে সময় লেগে যায় অনেক। আয় না হলেও আমাদের কর্মচারীদের বেতন, বিদ্যুৎ বিলসহ নানা খরচ কিন্তু কমে না।
জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান দৈনিক আজাদীকে বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারও পর্যটকের সংখ্যা বাড়বে। আটকে পড়া পর্যটকদের আমরা বিশেষ পাস দিচ্ছি, যাতে তারা নিরাপদে কক্সবাজার ত্যাগ করতে পারেন।