বান্দরবানে সদর উপজেলার সুয়ালক ইউনিয়নে ম্রো আবাসিক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে পরীক্ষা চলাকালীন অনুমতি ছাড়াই ১৫ দিনব্যাপী কুটির শিল্পমেলা শুরু হয়েছে। ‘রেড জুলাই’ নামে একটি সংগঠনের উদ্যোগে জুলাই আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে এই মেলা আয়োজন করা হয়েছে বলে আয়োজকদের পক্ষ থেকে দাবি করা হলেও গতকাল বুধবার সকালে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা মাঠ ব্যবহারের কোনো অনুমতি দেননি।
সরেজমিনে দেখা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে পরিচালিত ম্রো আবাসিক বিদ্যালয়টির খেলার মাঠ চারদিকে টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে। ভেতরে অস্থায়ী বিভিন্ন পণ্যের দোকান, খাবারের স্টল এবং প্রদর্শনী সাজানো হয়েছে। স্থানীয় কুটিরশিল্পের পরিবর্তে এসব পণ্য বান্দরবানের বাইরে বিভিন্ন জেলা থেকে আনা হয়েছে।
স্থানীয় অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী মহলে প্রশ্ন উঠেছে, পরীক্ষাকালীন আবাসিক বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে মেলা আয়োজন শিক্ষা পরিবেশের জন্য বড় ধরনের বিঘ্ন সৃষ্টি করছে। এছাড়া জেলা প্রশাসন ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্যের বিরোধ প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে আরও নানা জিজ্ঞাসার।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ম্রো আবাসিক উচ্চ বিদ্যালয়ে বর্তমানে ২৯৮জন আবাসিক শিক্ষার্থী রয়েছে। ২০ নভেম্বর থেকে মাধ্যমিকের বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়ে এখনও চলছে। আজ ২৭নভেম্বর থেকে ২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের নির্বাচনী পরীক্ষা এবং ১ ডিসেম্বর থেকে প্রাথমিক স্তরের বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
ক্রীড়া শিক্ষক মো. শাহ নেওয়াজ বলেন, ‘শীত মৌসুমে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস ও বার্ষিক পরীক্ষা শেষে শিক্ষার্থীদের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এজন্য মাঠে নিয়মিত অনুশীলন জরুরি। মেলা বসে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা মাঠ ব্যবহার করতে পারবে না। অথচ মাঠ ব্যবহারের অনুমতি বিদ্যালয় থেকে দেওয়া হয়নি। কিভাবে মেলা আয়োজন করা হলো, তা আমরা জানি না।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মহিন উদ্দিন বলেন, ‘মেলা আয়োজকরা মাঠের অনুমতি নিতে এসেছিলেন। কিন্তু পরীক্ষা চলমান থাকার বিষয়টি বিবেচনা করে অনুমতি দেওয়া হয়নি। বিষয়টি পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে রেড জুলাই আন্দোলনের সাবেক আহ্বায়ক ছাত্রনেতা আসিফ ইকবাল দাবি করেন, প্রধান শিক্ষকের অনুমতি সাপেক্ষেই মেলা আয়োজন করা হচ্ছে। এই মেলায় মূলত জুলাই আন্দোলন ও শহীদদের বিভিন্ন চিত্র প্রদর্শনী করা হবে। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা থাকায় প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মেলা পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রেড জুলাই আন্দোলনের সঙ্গে এই আয়োজনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। শুধু প্রশাসনিক অনুমোদনের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা হয়েছে।
১৫ দিনব্যাপী মেলার আহ্বায়ক মো. রমজান আলী বলেন, ‘আমরাই মেলা আয়োজন করছি। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতি নেওয়া হয়েছে।’ বিস্তারিত আলোচনার জন্য তিনি ‘চায়ের আড্ডা’ করার প্রস্তাব দেন।
সুয়ালক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উক্যনু মারমাকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি ফোন না ধরায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ প্রসঙ্গে বান্দরবান জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি বলেন, মেলা আয়োজনের জন্য মাঠ ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনুমতি না দেওয়া সত্ত্বেও পরীক্ষা চলাকালে কীভাবে মাঠ ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হলো– এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর জেলা প্রশাসক দেননি।
এদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য ও স্কুলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য হারুনুর রশিদকে মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্যও পাওয়া যায়নি।












