পরীক্ষা করা হল কর্মীদের মোবাইল, ল্যাপটপ

ভারতে বিবিসি’র কার্যালয়ে তল্লাশি

| শুক্রবার , ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৭:১৪ পূর্বাহ্ণ

ভারতের রাজধানী দিল্লি ও মু্‌ম্বাইয়ে বিবিসি’র কার্যালয়ে কর কর্মকর্তাদের অভিযানের তৃতীয় দিনে জব্দ করা মোবাইল ও ল্যাপটপ পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুইজনের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে। গত মঙ্গলবার সকালে হঠাৎ করে ভারতের আয়কর অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা দিল্লি ও মুম্বাইয়ে বিবিসি’র কার্যালয়ে হানা দেন। শুরুতেই তারা সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীদের মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ জব্দ করেন। বুধবার মধ্যরাত পর্যন্ত তল্লাশি অভিযান চলেছে। যদিও কর্মকতর্রা বলেছেন, তল্লাশি নয় বরং আয়কর জরিপের অংশ হিসেবে তারা বিবিসি’র কার্যালয় পরিদর্শনে গেছেন। খবর বিডিনিউজের।

কর কর্মকর্তারা বিবিসি কার্যালয়েই অবস্থান করছেন। কেউ কেউ রাতে সেখানেই ঘুমাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। মঙ্গলবার রাতে বিবিসির কয়েকজন কর্মীকে তাদের আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলেও জানান কেউ কেউ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, তারা (কর্মকর্তারা) আমাদের কাউকে কাউকে তাদের ল্যাপটপ খুলে দিতে এবং ফোন তাদের কাছে দিতে বলে। পরে তারা ফোন ফেরত দেয়।

দ্বিতীয় আরেকজনও রয়টার্সকে প্রায় একই কথা বলেছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে বিবিসি’র বিতর্কিত তথ্যচিত্র যুক্তরাজ্যে সমপ্রচারের কয়েক সপ্তাহ পর এ অভিযান চালানো হয়। ওই তথ্যচিত্রে ২০০২ সালে ভারতের গুজরাটে হিন্দুমুসলিম দাঙ্গার ঘটনায় মোদীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। ওই সময় মোদী গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদী কোশ্চেন’ শিরোনামের ওই তথ্যচিত্র ভারতে প্রদর্শন নিষিদ্ধ করেছে মোদী সরকার। তথ্যচিত্রটিকে কেন্দ্র করে ভারতে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিও উত্তপ্ত হয়েছে। ভারতজুড়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি করেছে এ তথ্যচিত্র। তথ্যচিত্রটি বিতর্কিত কাহিনী ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে বানানো অপপ্রচার বলে অ্যাখ্যা দিয়েছে ভারত সরকার।

ফলে তথ্যচিত্রটি কেবল যুক্তরাজ্যের টিভিতে সমপ্রচারিত হলেও ভারত সরকার স্যোশাল মিডিয়ায় এর শেয়ার ঠেকানোর চেষ্টা করেছে। সমস্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে তথ্যচিত্রটি তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেয় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। টুইটার, ইউটিউবকেও এ সংক্রান্ত সব টুইট এবং ভিডিও মুছে ফেলতে বলা হয়। এ নিয়ে ভারতে তোলপাড় শুরু হয়। বিরোধীরা বিভিন্ন জায়গায় সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে তথ্যচিত্রটি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করে। ছাত্রছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে তথ্যচিত্রটি দেখায়। তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে তারা। গতমাসে দিল্লি পুলিশ তথ্যচিত্র দেখতে জড়ো হওয়া ছাত্রদেরকে গ্রেপ্তারও করেছে।

এই পরিস্থিতির মধ্যে তথ্যচিত্র সমপ্রচারের প্রতিশোধ নিতেই বিবিসি দপ্তরে আয়কর কর্মকর্তারা হানাএমন কথা অস্বীকার করেছেন ভারত সরকারের এক কর্মকর্তা। আয়কর বিভাগও এ বিষয়ে কোনও বিবৃতি দেয়নি বা কোনও মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, বেশ কয়েক বছর ধরে, লভ্যাংশের আদানপ্রদান এবং অন্যান্য আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য দিচ্ছে না বিবিসি। এজন্য বিবিসি কর্তৃপক্ষকে নোটিশও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, তারা কোনও সদুত্তর দিতে পারেনি। এর পরিপ্রেক্ষিতেই আয়কর আইন অনুযায়ী এই জরিপ। এটি কোনও তল্লাশি অভিযান নয়।

এ ধরনের সমীক্ষা নিয়মিত করা হয়। এর সঙ্গে তল্লাশি বা অভিযানকে গুলিয়ে ফেলা ঠিক নয়। অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার জন্য আর্থিক লেনদেন বা কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে কি না, তা এই সমীক্ষায় খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে ভাষ্য কর্মকর্তাদের। ভারতে সমপ্রতি কয়েকবছরে আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো আয়কর কর্মকর্তাদের পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসন্ধানের মুখে পড়েছে। তবে বিবিসি তে যে তল্লাশি অভিযান চলছে তার সমালোচনা করেছে কয়েকটি গণমাধ্যম সংগঠন এবং মানবাধিকার গোষ্ঠী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআইএমএফের মন পেতে বিদ্যুতের দাম ৬৬% বাড়াল শ্রীলঙ্কা
পরবর্তী নিবন্ধঢাবিতে ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীর ওপর ছাত্রলীগের হামলা