ওয়াসিম আকরাম চট্টগ্রাম কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। গতকাল বুধবার ওয়াসিমের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ফলাফল প্রকাশ হয়েছে। ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী ওয়াসিম প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়েছেন। কিন্তু সেই ফলাফল দেখে যেতে পারেননি ওয়াসিম। ১৬ জুলাই বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের ষোলশহর স্টেশনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে শহীদ হন ওয়াসিম। গতকাল ওয়াসিমের ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা প্রকাশ করে ওয়াসিমকে স্মরণ করেছেন তার সহপাঠী ও বন্ধুরা।
সেই ফলাফল ফেসবুকে দিয়ে তার বন্ধু জাহেদুল ইসলাম লিখেছেন, আজ ওয়াসিমের পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশিত হয়েছে। তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে পাশ করেছে সে। কিন্তু রেজাল্ট শোনার আগেই ঘাতকের বুলেট তার জীবন প্রদীপ কেড়ে নিয়েছে।
জানা যায়, ওয়াসিম আকরাম বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শুরু থেকেই সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ১৬ জুলাই বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের ষোলশহর স্টেশনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্ব নির্ধারিত বিক্ষোভ কর্মসূচি ছিলো। কিন্তু ছাত্রলীগ ও যুবলীগ আগেই স্টেশন চত্ত্বর দখলে নেয়। সংঘর্ষ এড়াতে শিক্ষার্থীরা এক কিলোমিটার দূরে মুরাদপুরে সমবেত হয়। বিকেল পৌনে তিনটা দিকে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতারা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালালে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। ওইদিন অস্ত্রধারীদের গুলিতে ওয়াসিমসহ তিনজনের মৃত্যু হয়। আহত হয় অন্তত দেড়শ ছাত্র–জনতা। গুলিতে নিহত বাকি দুইজন হলেন, নগরের ওমর গণি এমইএইচ কলেজের শিক্ষার্থী ফয়সাল হোসেন শান্ত ও ফার্নিচার দোকানের কর্মচারী ফারুক হোসেন।
নিহত ওয়াসিম আকরামের সৌদি প্রবাসী বাবা শফিউল আলম ও মা জ্যোৎস্না আক্তার। দুই ভাই ৩ বোনের মধ্যে ওয়াসিম দ্বিতীয়। তিনি ২০১৭ সালে কঙবাজারের পেকুয়ার সদর ইউনিয়নের মেহেরনামা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০১৯ সালে বাকলিয়া সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। পরে তিনি চট্টগ্রাম কলেজে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে অনার্সে ভর্তি হন। তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা শেষে ফলের অপেক্ষায় ছিলেন ওয়াসিম। কিন্তু সেই ফল প্রকাশের আগেই অস্ত্রধারীদের গুলিতে নিহত হন। ওয়াসিম চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম–আহ্বায়ক ছিলেন। আন্দোলনে যোগ দেওয়ার ১৪ ঘণ্টা আগে ওয়াসিম ফেসবুকে লিখেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে আমার প্রাণের সংগঠন। আমি এই পরিচয়ে শহীদ হব।’ এই ঘটনায় গত ১৮ আগস্ট নিহত ওয়াসিমের মা জোসনা নগরের পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।