পরীক্ষার্থী সংগ্রহ করতেন দুইভাই, চলতেন দামি গাড়িতে

পিএসসির প্রশ্নফাঁস

| সোমবার , ১৫ জুলাই, ২০২৪ at ৮:১০ পূর্বাহ্ণ

ঢাকায় পানি বিশুদ্ধকরণ ফিল্টার মেশিন বিক্রির আড়ালে পিএসসির বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন সাখাওয়াত হোসেন এবং তার ছোট ভাই সাইম হোসেন। একসময় পরিবারের অবস্থা খুব খারাপ থাকলেও এখন দুই ভাই গ্রামের বাড়ি আসেন প্রাইভেটকারে। সাখাওয়াত নানা সময়ে বিদেশে যাতায়াত করেন বলেও জানালেন গ্রামের মানুষেরা। খবর বিডিনিউজের।

প্রশ্নফাঁসে ঢাকায় গ্রেপ্তার ১৭ জনের মধ্যে দুই সহোদর সাখাওয়াত (৩৪) ও সাইমের (২০) বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ইচাইল গ্রামে। ওই মামলার ‘মূলহোতা’ ৪ নম্বর আসামি সাজেদুল ইসলাম পিএসসির উপপরিচালক আবু জাফরের মাধ্যমে প্রশ্ন পেতেন। পরে তার সহযোগী সাখাওয়াত ও সাইমের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে চাকরিপ্রার্থী সংগ্রহ করতেন। সেসব চাকরি প্রার্থীদের ঢাকায় ভাড়া বাসায় বা হোটেলে জড়ো করতেন। অর্থের বিনিময়ে প্রশ্ন ও উত্তরপত্র বিতরণ করা হত। রেলের সাব এসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার (ননক্যাডার) পরীক্ষার নিয়োগের সময় আবেদ আলীকে টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন ও উত্তরপত্র দিয়েছিলেন বলে মামলার এজাহারে বলা হয়েছে।

জানা যায়, প্রায় সাতআট বছর ধরে সাখাওয়াত ঢাকায় পানি বিশুদ্ধকরণ ফিল্টার মেশিনের ব্যবসা করে আসছেন। তার ছোট ভাই সাইম পড়াশোনার পাশাপাশি ব্যবসায় তাকে সহযোগিতা করতেন। তাদের বাবা সাহেদ আলী ময়মনসিংহ নগরীর দিঘারকান্দা এলাকায় ওয়েল্ডিং মিস্ত্রির কাজ করেন। এ পেশা তিনি ৪০ বছরের অধিক সময় ধরে করছেন। সাহেদ আলীর দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। সবার বড় সাখাওয়াত হোসেন। চার ভাইবোনের মধ্যে এক বোন ঢাকায় একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন। ছোট বোন ময়মনসিংহ শহরে নার্সিংয়ে লেখাপড়া করেন।

সরেজমিন ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সাধারণ মানুষ তাদের বাড়ির সামনে ভিড় জমিয়েছে। সাখাওয়াত ও সাইম সম্পর্কে জানতে চান তারা। এ সময় অনেকেই বলতে শোনা যায়, কোনো মানুষকেই সহজে বিশ্বাস করা যায় না। তাদের মধ্যে একজন নুরুল ইসলাম বলেন, সাখাওয়াত পড়াশোনা জানে না। তাহলে সে কেমনে এই প্রশ্নফাঁসে জড়িয়ে পড়লো? তাদের আর্থিক অবস্থা খারাপ হলেও মাঝে মধ্যে তাদের দুই ভাই গাড়ি চড়ে বাড়িতে আসত। তবে তারা বেশিক্ষণ বাড়িতে থাকত না। দোকানে বসে চা খেত। শুনেছি সে নাকি প্রায় সময় বিদেশেও যেতো।

ওই গ্রামের সাইদুল ইসলাম নামে আরেকজন বলেন, সাহেদ আলীর খুব কষ্টের সংসার। তার স্ত্রী মারা যাওয়ার পর চার সন্তানকে আগলে রেখেছেন তিনি। ব্যবসা করার জন্য সাখাওয়াত ঢাকায় পাড়ি জমায় বেশ কয়েক বছর ধরে। সঙ্গে তার ছোট ভাইকেও নিয়ে যায়। তাদের সংসারটা একটু উন্নতির দিকে গেলেও প্রশ্নফাঁসে দুইজন গ্রেপ্তার হওয়ায় আমরা হতবাক। আমাদের দাবি হচ্ছে, বিষয়টি যেন সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করা হয়।

সাখাওয়াতের ফুফাতো বোন আছিয়া বেগম বলেন, সাখাওয়াত ও সাইমের মা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ১২ বছর আগে মারা যান। তারা চার ভাইবোন। তাদের বাবার পাশাপাশি সাখাওয়াত সংসারের হাল ধরে। ভাইবোনকে পড়াশোনা করানোর পাশাপাশি বিয়ে সবই তারা করেছে। কিন্তু তারা অপরাধ করতে পারে বলে বিশ্বাস হচ্ছে না।

সাখাওয়াতের চাচি জমিলা খাতুন বলেন, সাখাওয়াত মতিঝিলে ব্যবসা করে। স্ত্রী দুই সন্তান ও ভাই সাইমনকে নিয়ে সেখানেই থাকতো। বাড়িতে কোনো সম্পত্তি নেই। দুই বছর আগে প্রাইভেটকার কিনেছেন। এবার ঈদে বাড়িতে আসে নাই। শুনেছি ব্যবসার কাজে বিদেশ যেত।

ছেলেরা ষড়যন্ত্রের শিকার জানিয়ে বাবা সাহেদ আলী বলেন, আমি ৪০ বছরেরও অধিক সময় ধরে ওয়েল্ডিং মিস্ত্রির কাজ করি। ছেলেরা আমার ১৭ কাঠা জমি বিক্রি করে ঢাকায় বিশুদ্ধ পানির ফিল্টার মেশিনের ব্যবসা করতো। ব্যাংক লোনও আছে। তারা ব্যবসার সুবিধার জন্য পুরাতন একটি প্রাইভেটকার কিনে। ছোট ছেলে একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার পাশাপাশি বড় ছেলেকে সহযোগিতা করত। তাদের ভাইবোনদের মধ্যে সবাই পড়াশোনা করলেও সাখাওয়াত প্রাইমারি পাশও করতে পারেনি। তিনি বলেন, ছেলেদের অবস্থার পরিবর্তন হওয়ায় তাদের পেছনে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমার ছেলেরা ষড়যন্ত্রের শিকার। আমি সরকারের সহযোগিতা চাই।

ফুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন বাদল বলেন, সাখাওয়াত হোসেন ও সাইমন হোসেনকে আগে চিনতাম না। প্রশ্ন ফাঁসে তারা ঢাকায় গ্রেপ্তার হলে খোঁজখবর নেই। একটা সময় তারা সংগ্রাম করে চললেও এখন পারিবারিক অবস্থা ভালো হয়েছে। তবে আমার দাবি হচ্ছে, তারা যদি নিরপরাধ হয় তাহলে যেনো তাদের প্রতি অন্যায় করা না হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধখালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে : ডা. রফিকুল
পরবর্তী নিবন্ধজি-৩ রাইফেল ও গুলিসহ আরসা সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার