সিআরবিতে স্থাপনা হতে পারে না
নাজিমুদ্দীন শ্যামল
প্রকৃতি ধ্বংস করে কোনো হাসপাতাল কিংবা স্থাপনা হতে পারে না। সিআরবিতেও হতে পারে না।
সিআরবিতে রয়েছে সাত রাস্তার মোড়, আরেক পাশে রয়েছে রেলওয়ে হাসপাতাল, আর রয়েছে হাতির বাংলো অপূর্ব স্থাপত্য নিদর্শন। রয়েছে শিরীষ তলা, যেখানে প্রতিবছর বৈশাখের অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। এখানে ব্রিটিশ বিরোধি আন্দোলনের অগ্নিপুরুষ সূর্যসেন এবং অগ্নিকন্যা প্রীতিলতারও কিছু স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। এমন একটি স্থানে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। এমন একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা স্থানে তৈরি হবে হাসপাতাল?
চট্টগ্রাম প্রাচ্যের রানী; এর প্রকৃতিক সৌন্দর্য কোনভাবে নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না। পরিবেশ নষ্ট করে হাসপাতাল নির্মাণ কোনভাবেই কাম্য নয়
ইনশাল্লাহ আমরা সফল হবোই
শাহ নেওয়াজ
একটি দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির কিছু নিদর্শন থাকে। চট্টগ্রামের বুকে সিআরবি তেমনই একটি ঐতিহাসিক স্থান। সেই সাথে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আড়ত। কর্মক্লান্ত দেহে মুক্ত বাতাসে শ্বাস নেওয়ার জন্য নগরবাসী সিআরবিকে বেছে নেয়। নগরীর ফুসফুস সিআরবি আজ কিছু অর্থলোভী মানুষের লোলুপ দৃষ্টির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। চট্টগ্রামসহ সারাদেশের সুশীল সমাজ আজ সিআরবি রক্ষায় সচেতন হয়েছে। এই খবর আমাকে আনন্দিত করেছে। তবে একটি বিষয় আমাকে মর্মাহত করেছে, সেটি হল এত প্রতিবাদ ও আন্দোলনের পরও একটি বিশেষ মহল সিআরবিকে ধ্বংস করার অপপ্রয়াস থেকে এক বিন্দুও পিছু হটেনি। সংখ্যায় তারা নগণ্য হলেও তাদের ক্ষমতা ও দম্ভোক্তি এই দেশের সুশীল সমাজকে আশাহত করেছে। ভাবছি, কোথায় বাস করছি আমরা? আমাদের মত সাধারণ মানুষের আশা আকাঙ্খা ও চাওয়া পাওয়ার কোন মুল্য হয়ত এই দেশে নেই। তবুও আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব। সিআরবি আমার, সিআরবি তোমার। সিআরবি জনগণের। সিআরবিকে কিছুতেই ভুমিদস্যুর হাতে তুলে দেব না। ইনশাল্লাহ, আমরা সফল হবোই।
সিআরবিতে নয় অন্যত্র হাসপাতাল করুন
মোঃ আখতার উদ্দিন চৌধুরী
এক এক করে চট্টগ্রামের খেলার মাঠ, সবুজে ঘেরা বন সব নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। কখনো হাসপাতালের নামে কখনো সুইমিংপুলের কথা বলে এই ভুমিগুলি দখলে নেয়া হচ্ছে।
চট্টগ্রামের সিআরবি এলাকায় সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে একটি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা পরিবেশ প্রকৃতির জন্য একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত ।
সিআরবি শুধু একটি মাঠ নয়, ইট পাথরের নগরীর মাঝখানে একটি নির্মল অঙিজেন প্রদান ও কার্বন ডাই অক্সাইড চুষে নেয়ার নাম সিআর বি। প্রতি বছর যেখানে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান হয় তার নাম সিআরবি। মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া অনেক শহীদ যেখানে শায়িত আছে তার নাম সিআরবি। ইট পাথরের নগরে সিআরবি চট্টগ্রাম শহরের একমাত্র প্রাকৃতিক মুক্তাঙ্গন, যেখানে মানুষ গিয়ে শান্তির নিঃশ্বাস গ্রহণ করে তার নাম সিআরবি। সবুজে ঘেরা পাহাড় বেষ্টিত সিআরবি তথা চট্টগ্রামের ঐতিহ্য, প্রকৃতি ধ্বংস করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের কবর উচ্ছেদ করে সিআরবিতে বাণিজ্যিক হাসপাতাল করতে হবে কেন?
সিআরবি হবে মুক্তপ্রাণের উচ্ছ্বাস
সৈকত বড়ুয়া
জলবায়ুর বৈশ্বিক পরিবর্তনে পুরো পৃথিবীর ভবিষ্যৎ নিয়েই বিশ্ব নেতৃবৃন্দ চিন্তিত। প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে রেখে পৃথিবীকে মানুষের জন্য অধিক থেকে অধিকতর বাসযোগ্য করে তোলার চলছে আপ্রাণ প্রচেষ্টা। আর আমরা হাঁটছি তার ঠিক উল্টো পথে। বিধাতার কাছ থেকে পাওয়া অমূল্য সম্পদ পায়ে ঠেলে দেয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছি। প্রাণ ভরে শ্বাস নিতে পারার সর্বশেষ সম্বলটুকু ছিনিয়ে নিতে তৎপর কর্পোরেট দানবরা। আমাদের মাথা মোটা হর্তাকর্তাদের মাথায় এরকম ভাবনা আসে কিভাবে? আমরা সিআরবির চৌহদ্দিতেও কোন বাণিজ্যিক স্থাপনা চাই না। হোক, সেটা হাসপাতাল। সিআরবি হবে মুক্তপ্রাণের উচ্ছ্বাস। থাকবে সংস্কৃতির প্রাণচাঞ্চল্য। বজায় থাকুক প্রকৃতির পবিত্র শুদ্ধতা। আমাদের অনাগত ভবিষ্যতের জন্য প্রকৃতি প্রদত্ত সিআরবির বিশুদ্ধতা রক্ষা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
অক্সিজেন ব্যাংক সিআরবি রক্ষা করতেই হবে
সৈয়দ আহমেদ বাদল
শিরীষ তলা খ্যাত সিআরবির শ্যামল ছায়ায় ঘেরা প্রাচীন বৃক্ষরাজি নিধন করে হাসপাতাল নির্মাণের নামে ভুমি দখল করে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য হাসিলের পাঁয়তারা চলছে। পরিবেশ রক্ষায় বিধি বিধান মেনেই পাহাড়কে অক্ষত রেখে সবুজায়নকে প্রাধান্য দিয়ে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের সদর দপ্তর সিআরবি গড়েছিলো বৃটিশ সরকার। তখনকার প্রশাসন নগরবাসীর জীবনমানকে যথাযথভাবেই মূল্যায়ন করেছিল। স্বাধীন দেশে চট্টগ্রাম শহর আজ ঘন বসতিতে টইটুম্বুর।
নগরবাসীর যান্ত্রিক জীবন পরিবেশ দূষণের কবলে পড়ে সুস্থ দেহে বেঁচে থাকাটা আজ দুরূহ ব্যাপার। সাধারণ জনগন একটু অবসর পেলেই সিআরবি এলাকায় নির্মল বায়ুতে নিশ্বাস নিতে হাজির হয়। প্রাণভরে মানুষ শিরীষ তলার ছায়াতলে নিশ্বাস নিয়ে সতেজ করে ফুসফুস। তাই সিআরবিকে বলা হয় প্রাকৃতিক ফুসফুস। এ ফুসফুস ধ্বংস হোক তা মেনে নেয়া যায় না। কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই সাধারণের মতামতকে বিবেচনা করে প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে সচেষ্ট হবেন। প্রাকৃতিক অক্সিজেন বন্ধ করে কৃত্রিম অঙিজেন চট্টগ্রামবাসি চায় না।
হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার নামে এই ঐতিহ্য বিনাশী অপকর্মকে রূখে দাঁড়াতেই হবে। সকল শ্রেণির মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে সিআরবি রক্ষায় এগিয়ে আসার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাই।
দায়িত্বশীলদের বোধোদয় জরুরি
মিনহাজুর রহমান শিহাব
পাহাড় কেটে অবকাঠামো উন্নয়ন কিংবা গাছ কেটে বনভূমি উজাড় করে নগরায়নের প্রসার নতুন কিছু নয়। একবিংশ শতাব্দীতে এসে শিল্পায়ন ও নগরায়নের ব্যাপকতায় বনভূমি রক্ষার চেয়ে ধ্বংসের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাহাড় ঘেরা ও সবুজের সমারোহে আবৃত বন্দরনগরী চট্টগ্রামের নৈসর্গিক সৌন্দর্য অপরূপ। খেলার মাঠ, জলাধার, বনভূমি প্রভৃতি দখল, ভরাট, দূষণের পরও যে কয়েকটি স্থান এখনও এই সৌন্দর্য ধরে আছে সিআরবি তার মধ্যে অন্যতম একটি। বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি চর্চা, মুক্ত প্রাণে শ্বাস নেওয়ার জন্য সিআরবি এখানকার সকলের কাছে পরম পরিতৃপ্তির স্থান।
এখানকার একটা গাছের পাতাও সেই অর্থে অনেক গুরুত্ব বহন করে। গাছগুলো ইতিহাসেরও সাক্ষী, অতএব এখানে জাতির আবেগ জড়িত। কোন অজুহাতেই এ গাছ কাটার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
গাছ বাঁচলেই বাঁচবে মানুষ। সব ধরনের গাছবৈচিত্র্য ও পাহাড়ি ভূমি সুরক্ষা করে কীভাবে কোনো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যায়, তা বের করতে হবে উন্নয়নবিদদের, নগর পরিকল্পনাকারীকে। উন্নয়নচিন্তায় গাছবান্ধব দৃষ্টিভঙ্গি সুদূরপ্রসারী ও জোরালো হওয়া জরুরি। তাহলেই সিআরবিসহ দেশের সব প্রান্তেই গাছপালা নিরাপদ থাকবে। আর গাছ নিরাপদ হলেই আমাদের অঙিজেনের মজুদ হবে পর্যাপ্ত ও সুরক্ষিত।
সিআরবিকে রক্ষা করা বড় জরুরি
বজল আহমদ
সিআরবি’র রয়েছে নানা ইতিহাস ও ঐতিহ্য। এটা শুধু বিনোদনের জায়গা নয়, একে ঘিরে চলে সারা বছর নানা আয়োজন। সিআরবিকে মনে করা হয় নগরীর ফুসফুস। শত শত সুউচ্চ বৃক্ষ, পাহাড় ও টিলা ঘেরা এই সিআরবির প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশ ও দৃশ্য দেখতে কে না চায়। কোলাহলপূর্ণ এই নগরীর মানুষ ছুটে আসে এখানে একটু নিঃশ্বাস ও দম ফেলার জন্য। সকল বয়সের মানুষের পদচারণায় প্রতিনিয়ত মুখরিত থাকে এই এলাকাটি সকাল-সন্ধ্যা অবধি। এমন একটি স্পর্শকাতর ও পরিবেশবান্ধব স্থানে হাসপাতাল নির্মাণের অদূরদর্শী সিদ্ধান্তকে ধিক্কার জানাই।
এখানে হাসপাতাল নির্মাণ হলে বিদ্যমান এই পরিবেশ ও চিরচেনারূপ চিরতরে হারিয়ে যাবে। জনমত উপেক্ষা করে এখানে হাসপাতাল নয়। এর কোন যৌক্তিকতাও নেই। আত্মঘাতী এই সিদ্ধান্ত দ্রুত বাতিল করা দরকার। দুরদর্শী প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা নিশ্চয়ই বিষয়টি দেখবেন। তবে কেউ হাসপাতালের বিরোধী নয়। চট্টগ্রামে আরও সরকারি হাসপাতাল দরকার। এখানে জায়গা বা স্থান নির্ধারণের বিরোধীতা করা হচ্ছে মাত্র।
সিআরবিতে হাসপাতাল চাই না অচিরে সিদ্ধান্ত বাতিল হোক
জায়তুন্নেছা জেবু
বৃক্ষ মানুষের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় প্রতিটি উপকরণেই কোন না কোনভাবে বৃক্ষের ভূমিকা রয়েছে। প্রকৃতির রূপ – রস সম্পদ আমাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন। প্রকৃতির অপরিহার্য অঙ্গ বৃক্ষ। প্রকৃতিকে সবুজে শ্যামলে শোভিত রেখে বৃক্ষ আমাদের জীবন ধারণের সাহায্য করে। পৃথিবীকে মানুষের বসবাসের উপযোগী রাখতে বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। বৃক্ষের সবচেয়ে বড় দান আমাদের নিঃশ্বাসের সাথে গ্রহণ করা অক্সিজেন। অক্সিজেন ছাড়া কোন কোন প্রাণীই বেঁচে থাকতে পারে না। প্রতিনিয়ত অক্সিজেন ত্যাগ করে বৃক্ষ যেমন আমাদের মৌলিক যোগান দেয়, তেমনি জীবনের ও যোগান দেয়। অন্যদিকে আমরা যে কার্বন ডাই-অক্সাইড নামক বিষ ত্যাগ করি বৃক্ষ তা গ্রহণ করে বাতাসকে বিশুদ্ধ রাখে। চট্টগ্রাম সিআরবি হলো আমাদের ফুসফুস বেঁচে থাকার উপকরণ। এই সুন্দর এলাকাকে হাসপাতাল বানানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা কখনো চট্টগ্রামবাসী মেনে নিবে না। উন্মুক্ত পরিবেশ ও প্রাচীন বৃক্ষগুলো শতবর্ষের পুরনো। গাছ কেটে জায়গা দখল করে হাসপাতাল বানানোর কোন প্রয়োজন নেই। আমরা প্রকৃতি থেকে যে অক্সিজেন গ্রহণ করি তা হাসপাতাল বানালে ও সেই অক্সিজেন পাওয়া যাবে না। তাই অচিরে এই সিদ্ধান্ত বাতিল হোক।
প্রকৃতির হাসপাতালে হাত দিয়েন না
কাজী ইব্রাহিম সেলিম
সিআরবি নিজেই একটা সৃষ্টিকর্তার দেয়া হাসপাতাল। সৃষ্টিকর্তার গড়ে তোলা হাসপাতালে সাময়িক লাভ ও স্বার্থে মানুষের হাত দেয়া উচিৎ নয়। কেউ হাত দিতে চাইলে তা জীবন দিয়ে হলেও প্রতিহত করতে হবে। যেখানে চট্টগ্রাম নগরীর ফুসফুস খ্যাত সিআরবিতে মানুষ একটু শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে আসেন, মানুষের অবাধ বিচরণ ও বাঙালির ঐতিহ্যের সংস্কৃতি পহেলা বৈশাখসহ নানা অনুষ্ঠানও হয়ে থাকে, নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অপরূপ একটি এলাকা সেখানে বেসরকারি হাসপাতাল নির্মাণের কথা বলার পরও চট্টগ্রামের মানুষ শান্তিপ্রিয় বিধায় কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেনি।
ঐতিহাসিক কারণেও এলাকাটির গুরুত্ব অনেক বেশি। সিআরবিতে হাসপাতাল হলে সে হাসপাতলে অসুস্থ মানুষের সমাগম ঘটবে এটি এলাকার পরিবেশকে প্রভাবিত করবে। বৈকালিক ভ্রমণ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার পাশাপাশি নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার অধিকার ক্ষুণ্ন হবে। সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়াটা সত্যিই ন্যাক্কারজনক। এটিকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিহত করতে নানা সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ চট্টগ্রামের মানুষগুলো ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। সৃষ্টিকর্তার বানানো যে হাসপাতালটি সাধারণ মানুষের দখলে রয়েছে সেটিকে লোভী মানুষরা বাণিজ্যিক হাসপাতাল করে ব্যবসা করতে চাইছেন কেন?
জুতা মেরে গরু দান
মুহাম্মদ তাফহীমুল ইসলাম
চট্টগ্রামে সুউচ্চ দালান কোঠার ভীড়ে মন ভরে স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলার দুর্লভ জায়গা সিআরবি। একটু প্রশান্তির জন্য মানুষ সিআরবির নীড়ে ছুটে আসে। দম ভরে নিঃশ্বাস নেয়, ছাড়ে। এবার সেই সিআরবিতেই বদনজর পড়লো কতিপয় লোভী ব্যবসায়ীর। তারা সিআরবির শতবর্ষী বৃক্ষনিধন করে সেখানে গড়ে তুলতে চায় চিকিৎসা কেন্দ্র। হাসপাতালের দরকার আছে, বিশেষ করে এই করোনাকালে হাসপাতালের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু সবাই খুব ভালোভাবেই বুঝেছে, বুঝছে। কিন্তু মানুষের মুক্ত নিঃশ্বাস ফেলার অধিকার হরণ করে কেন তা করতে হবে? নগরে তো অনেক জায়গা খালি পড়ে আছে। সিআরবিতে হাসপাতাল করা মানে জুতো মেরে গরু দান করা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বারবার পরিবেশ সুরক্ষার কথা বলছেন, বৃক্ষরোপণ করতে বলছেন। কিন্তু সিআরবির ক্ষেত্রে সরকারের সাংঘর্ষিক এই অবস্থান রহস্যজনক। সিআরবিতে পরিবেশের ক্ষতি করে হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ সরকার বিরোধী কোন ষড়যন্ত্র বা সরকারকে বিতর্কিত করার চক্রান্ত কিনা তা ও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। আমরা আশা করি, পরিবেশ সুরক্ষার কথা ও জন দাবী আমলে নিয়ে শিগগির এই উদ্যোগ বাতিল করা হবে।
সিআরবি এলাকায় হাসপাতাল নয়
শিমুল নন্দী
অক্সিজেন নির্মাতা প্রাকৃতিক নিসর্গ সিআরবি এলাকায় হাসপাতাল নির্মাণ একটি ঐতিহাসিক আত্মঘাতী বা হঠকারী সিদ্বান্ত। প্রাচ্যের রানী চট্টগ্রাম নগরীর প্রাণিজগতের প্রাণ রক্ষাকারী ফুসফুস খ্যাত ঐতিহাসিক সংস্কৃতি চর্চাক্ষেত্র সি আর বি বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ। প্রতি বছর বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ বা বসন্ত উৎসব লাখো মানুষের সমাগমে মহাসমারোহে উদযাপিত হয়। এই উৎসব মানুষের মনে নব উদ্দীপনার সৃষ্টি করে। নানান গাছ-গাছালী ও শতবর্ষী বৃক্ষরাজি সমেত মনোরম সৌন্দর্যমন্ডিত তীব্র তাপদাহ সহনীয় প্রাকৃতিক লীলাভূমি সি আর বি শিরীষতলায় প্রতিদিন শতশত মানুষ শরীরচর্চায় রত হয়। হাজারো দর্শনার্থী ইট-পাথুরে জীবনে একটু স্বস্তি পেতে বা প্রাকৃতিক অক্সিজেন নিতে কিছুটা সময় এখানে অতিবাহিত করে। প্রায় সকলেই চায় হাসপাতাল হোক, কিন্তু পরিবেশের ক্ষতি করে করতে হবে কেনো? উন্মুক্ত মনোমুগ্ধকর সি আর বিতে শতবর্ষের ঐতিহ্য সৌন্দর্যের ধারক-বাহক প্রকৃতিকে ধ্বংস করে হাসপাতাল নয়, বরং চট্টগ্রামের অবহেলিত অনেক জায়গা আছে সেখানে হোক। মানুষের ফুসফুস গাছ কেটে পরিবেশ ধ্বংস করে হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগকে ধিক্কার জানাচ্ছি। প্রাণের শহর চট্টগ্রাম নগরীর সৌন্দর্য রক্ষা আমাদের নাগরিক দায়িত্ব।
প্রাকৃতিক অক্সিজেন চাই
নঈমুল হক পারভেজ
এই খোলা মাঠ আমাদের অনেক আড্ডার সাক্ষী। অনেক বড় বড় আয়োজনের স্থান। বৈশাখি মেলা, বসন্ত উৎসবসহ বাঙালি সংস্কৃতি বিকাশে সহায়ক অনেক অনুষ্ঠান করার মতো মুক্ত স্থান চট্টগ্রামে আর অবশিষ্ট আছে বলে আমার জানা নেই। বিশুদ্ধ অক্সিজেন গ্রহণ করে সুনিবিড় সবুজের ছায়ায় বসে গল্প করি আমরা এই সিআরবি’র নয়নাভিরাম পরিবেশে। চট্টগ্রামে চিকিৎসা সেবার সমপ্রসারণ কতোটা জরুরি তা ভুক্তভোগী রোগীর পরিবারই ভালো জানে। রোগভিত্তিক বিশেষায়িত চিকিৎসায় চট্টগ্রাম অনেক পিছিয়ে আছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। হাসপাতাল করার জন্য চট্টগ্রামে প্রচুর খালি জায়গা আছে। অনেকেই ইতোমধ্যে বিভিন্ন জায়গার উল্লেখ করে পরামর্শও দিয়েছেন। তাই সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগের উল্লেখ করে সিআরবির শিরীষতলার মাঠে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার অপপ্রয়াস অচিরেই বন্ধ হওয়া উচিত। টাকা থাকলে জায়গা পাবেন, বিশ্বমানের হাসপাতালও গড়তে পারবেন। কিন্তু হাসপাতাল নির্মাণব্যয়ের শতগুণ বেশি টাকা দিয়েও আরেকটা সিআরবির শিরীষতলা বানাতে পারবেন না। আমাদের জন্য সামান্য এ খোলা মাঠ, ক’খানা সিঁড়ি আর প্রাচীন সবুজের এই ছায়াটুকু ছেড়ে দিন। আমরা এখানে একটু গল্প করবো, কিছুক্ষণ প্রাতঃভ্রমণে বের হয়ে নিরাপদে হাঁটবো, আড্ডা দেবো আর বিনে পয়সায় বিশুদ্ধ অক্সিজেন নেবো যাতে আপনাদের হাসপাতালে সিট দখল করতে না হয়।
সিআরবি হারাতে চায় না
মোহাম্মদ নিজাম উদ্দীন
প্রাচ্যের রাণী চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষের সস্তির আরেকটা প্রাকৃতিক নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের পাহাড়, সমতল, লেক ও গাছপালার সমন্বয়ে এলাকা ছিল ফয়’স লেক। রেলওয়ে এই বিশাল জমিটি কনকর্ড গ্রুপের মাধ্যমে বর্তমানে এলিট ফ্যামিলির কাছে কৃত্রিম বিনোদনের কেন্দ্র হিসাবে আছে যা সাধারণ মানুষের কাছে এখন স্বপ্নসাধ। তাই সাধারণ চট্টগ্রামবাসী ফয়’স লেকের মতো স্রষ্টার অপূর্ব সৃষ্টি সিআরবি কে হারাতে চায় না। তাদের মূখ্য দাবী হচ্ছে হাসপাতাল হোক হাসপাতাল এলাকায় তবে সিআরবি এলাকায় নয়। আমরা সাধারণ চট্টগ্রামবাসী চায়, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য হলেও নগরে কিছু অংশ সিআরবির মতো জায়গা সমূহতে ইট-সুরকির নগরায়ন না হোক। সেটি থাকুক অন্তত সবুজায়নে, মুক্ত অক্সিজেনের প্রাকৃতিক নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে।
অন্তর্ঘাতমূলক হঠকারী সিদ্ধান্ত চট্টলবাসী মেনে নেবে না
চৌধুরী আহছান খুররম
বাংলাদেশ রেলওয়ের শতশত পতিত ভূমি কথিত নেতাদের দখলে! সে সব ভূমি উদ্ধার করে বিশ্বমানের হাসপাতাল হোক। কোনো অবস্থাতেই সিআরবিতে হাসপাতাল নয়। শতবর্ষী গাছ না কেটে যদি হাসপাতাল হয় তাতে করে সিআরবি হারাবে স্নিগ্ধ পরিবেশ। কালক্রমে গাছগুলো আত্মাহুতি দিতে বাধ্য হবে। বরং সিআরবি হয়ে উঠুক অস্থায়ী মেলা খেলা আর সাংস্কৃতিক চর্চার অনন্যক্ষেত্র। সেখানে গড়ে উঠুক গণপাঠাগার। শিশুদের জন্য উন্মুক্ত ব্যয়ামাগার।
এ ধরনের কতকিছুই না করা যায়। সেদিকে না গিয়ে কতিপয় মোটা মাথার বুদ্ধিতে হাসপাতাল কেন? এ ধরনের অন্তর্ঘাতমূলক যে কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত চট্টলবাসী অতীতে মেনে নেয়নি, বর্তমানে তো নয়ই, ভবিষ্যতে মেনে নেবে না। অবশ্যই দল মত নির্বিশেষে রুখে দেবে। চট্টগ্রাম বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে কথাটা সকলের মাথায় রাখতে হবে। বিশেষ করে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের। সিআরবি হোক শ্বাস নেয়ার নিরাপদ স্থান