বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে পাহাড় কাটা চলছে নির্বিঘ্নে। কোনোভাবেই রোধ করা যাচ্ছে না পাহাড় কাটা। বেপরোয়া পাহাড়খেকো ভূমিদস্যুদের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। তারা কোথাও প্রকাশ্যে, আবার কোথাও গোপনে পাহাড় কাটছে, মাটি লুট করছে, জমি দখল করছে, পরে গড়ে তুলছে আবাসনপ্রকল্প। স্থাপন হচ্ছে বসতি। নির্বিচারে পাহাড় কাটার ফলে প্রতিবছরই পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটছে। আর তাতে ঘটছে মৃত্যুর ঘটনা। আমরা স্মরণ করতে পারি, কয়েক বছর আগে ভারী বর্ষণে চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খাগড়াছড়িসহ এই অঞ্চলে দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। পাহাড় ধসের কারণে সড়ক অবকাঠামো, বসতবাড়িসহ সহায় সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাহাড় নিধন ঠেকানো না গেলে পরিবেশে মহাবিপর্যয় নেমে আসবে। বাড়বে পাহাড় ধসে প্রাণ ও সম্পদহানির ঘটনা। নগরীর প্রাণ কেন্দ্রে পাহাড় নিধন চলছে অবাধে-প্রকাশ্যে। ভবন নির্মাণসহ নানা উন্নয়ন কাজের অজুহাতে এসব পাহাড় কেটে মাটি লুট এবং সরকারি জমি দখলে নেওয়া হচ্ছে প্রশাসনের নাকের ডগায়। প্রশাসন হয়তো কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকে, তাতেও থামছে না পাহাড়খেকোদের তৎপরতা।
গত ৬ জানুয়ারি দৈনিক আজাদীতে ‘কাটা হচ্ছে গ্রিন্ডলেজ ব্যাংক পাহাড়, জানে না পরিবেশ অধিদপ্তর’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পাহাড়টিতে প্রবেশের কোনো সুযোগ নেই। রীমা কমিউনিটি সেন্টারের বিপরীতে পাহাড়টির প্রবেশ পথের ফটকটি ছিল তালাবদ্ধ, ছিল নিরাপত্তা প্রহরী। পরে জামালখান এলাকায় নির্মাণাধীন একটি ভবন থেকে দেখা যায়, তিনটি স্কেভেটর দিয়ে কাটা হচ্ছে পাহাড়টি। ইতোমধ্যে পাহাড়টির উপরিভাগের প্রায় সব গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। মজুদ করা হয়েছে নির্মাণ সামগ্রীও। এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মিয়া মাহমুদুল হক আজাদীকে বলেন, আমরা গ্রিন্ডলেজ ব্যাংক পাহাড়টি কাটার বিষয়ে কিছু জানি না। পাহাড় কাটার ঘটনা সত্যি হলে অভিযানের পাশাপাশি আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সংবাদে বলা হয়, নগরীর অনেক এলাকায় আবাসনের নামে রাতের আঁধারে কাটা হয় পাহাড়। পরিবেশ অধিদপ্তর খবর পেয়ে ছুটে যায় ঘটনাস্থলে। নোটিশ দেয় পাহাড় কর্তনকারীদের। পরে শুনানি করে জরিমানা করে। জরিমানা একটু বেশি মনে হলে আপিলের সুযোগ আছে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে। এরপর রয়েছে আদালত। জরিমানা আদেশের পরও বছরের পর বছর চলে যায় সরকারি রাজস্ব আদায়ে। দীর্ঘ এই আইনি সুযোগে পাহাড় আর পাহাড় থাকে না। প্রভাবশালীরা কেটে সমতল বানিয়ে নেয়। গড়ে তোলে ভবন। এই যখন অবস্থা, তখন পাহাড়ের নিরাপত্তা থাকার কথা নয়। কারণ নগরীতে জমির দাম অনেক। বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রামে রয়েছে কাঠাপ্রতি ১৫ লাখ থেকে পাঁচ কোটি টাকার দামের জমি।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, সামপ্রতিক সময়ে যেসব আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে, সেগুলোতে একই অপরাধ বারবার হলে শাস্তির মাত্রা কয়েক গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। পরিবেশ আইনে যদি এমন দুর্বলতা থাকে, তাহলে তা দূর করা এবং আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। প্রয়োজন শাস্তির মাত্রা বাড়িয়ে পরিবেশ ধ্বংসকারী দুর্বৃত্তদের নিবৃত্ত করা। ন হয়, বাংলাদেশ দ্রুতই পাহাড়শূন্য হয়ে যাবে, প্রাকৃতিক বনাঞ্চল বলে কিছু থাকবে না।
পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে তেমন উল্লেখযোগ্য অভিযান নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যেসব ঘটনা গণমাধ্যমে আসে সেগুলোতেই অভিযান চালানো হয়। এর বাইরে আরো অনেক জায়গায় পাহাড় কাটা চলছে। জরিমানা করেই তারা দায়িত্ব শেষ করে। এরপর পাহাড়কে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো পদক্ষেপ লক্ষ করা যায় না। ফলে পরিবেশের যে ক্ষতি হয় সেটা অপূরণীয়। তাঁরা বলেন, পাহাড় কেটে পরিবেশ ধ্বংস চলতে থাকলে ভবিষ্যতে করোনাভাইরাসের মত আরো মহামারি এবং পরিবেশ বিপর্যয়ের ভয়াবহ ফলাফল অপেক্ষা করছে। সেজন্য পরিবেশ অধিদপ্তরকে আরো কঠোর হতে হবে। প্রয়োজন পাহাড় রক্ষায় টানা অভিযান। পাশাপাশি প্রভাবশালীদের বিষয়ে রাজনৈতিকভাবে দৃঢ় ভূমিকা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।