পরিবেশকে রক্ষা করেই জীববৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখতে হবে মানুষের স্বার্থে

| রবিবার , ৬ জুন, ২০২১ at ৬:৩২ পূর্বাহ্ণ

গতকাল ছিলো ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’। ১৯৭৪ সাল থেকে জাতিসংঘের মানবিক পরিবেশ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির উদ্যোগে প্রতিবছর ৫ জুন এ দিবস পালন করা হয়। কোভিড-১৯ এর তাণ্ডবে সারাবিশ্বের মানুষ যখন বিপর্যস্ত তখন প্রকৃতিতে ফিরেছে প্রাণ। গত এক বছর চার মাস ধরে পৃথিবীর মানুষ এক প্রকার ঘরবন্দি। প্রকৃতির ওপর চালানোর অবিচার কমে আসায় প্রকৃতি যেন নিজেকে মেলে ধরেছে। ফিরেছে স্বমহিমায়। এই বাস্তবতা থেকে নতুন করে শিখতে শুরু করেছে মানুষ। তবে সেই শিক্ষা করোনার পরও থাকবে কিনা এখন সেটিই দেখার বিষয়।
জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হলে ভারসাম্য হারাবে পরিবেশ, বিরাট ক্ষতির মুখে পড়বে মানবজাতি। করোনার মত মহামারি হানা দেবে বার বার। এ অবস্থায় পরিবেশ রক্ষায় এখনই সব দেশকে নতুন করে ভাববার আহ্বান পরিবেশ বিজ্ঞানীদের।
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে গিয়ে মানুষই পরিবেশের ক্ষতি করছে। বেড়েই চলেছে গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ। বাড়ছে তাপমাত্রা, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্য, ভূমিধসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হানা দিচ্ছে বার বার। এর ফলেই ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবেশ চক্র বজায় রাখতে জীবজগতের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কোন একটি প্রজাতি ধ্বংস হলে মানুষের জন্য তা হুমকি। তাঁরা বলছেন, পরিবেশ রক্ষায় এখনই সচেতন হওয়া প্রয়োজন। কারণ পরিবেশকে রক্ষা করেই জীববৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখতে হবে মানুষের স্বার্থেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জীববৈচিত্র্য রক্ষার যে তাগিদ দুনিয়াব্যাপী আলোচিত হচ্ছিলো মানুষের অতিপ্রয়োজনীয়তা তাতে বাঁধ সাধছিল। করোনা মানুষের সেই অতিপ্রয়োজনীতা কমিয়ে জীববৈচিত্র্য রক্ষা করছে।
জাতিসংঘ বলছে, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ না করাতে আমাদের পরিবেশের ভারসাম্যই শুধু নষ্ট হচ্ছে না আমরা এর মাধ্যমে আমাদের জীবনকে ধ্বংস করছি। কোভিড আমাদের সেই শিক্ষা দিচ্ছে উল্লেখ করে জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে আমরা জীববৈচিত্র্য রক্ষা করলে শুধু খাদ্যেরই যোগান পাব না বরং ওষুধসহ নির্মল পানি এবং বাতাস পাব। যা মানুষের সুস্থতার বড় অনুষঙ্গ হতে পারে।
পরিবেশই প্রাণের ধারক, জীবনীশক্তির বাহক। সৃষ্টির শুরু থেকেই পরিবেশের সঙ্গে প্রাণীর মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতার ওপরেই তার অস্তিত্ব নির্ভর করে আসছে। পরিবেশ প্রতিকূল হলে জীবের ধ্বংস ও বিনাশ অবশ্যম্ভাবী। পরিবেশের ওপর নির্ভর করে মানুষ, অন্যান্য উদ্ভিদ ও প্রাণী-জীবনের বিকাশ ঘটে। তাই পরিবেশ ও মানুষের মধ্যে রয়েছে এক নিবিড় যোগসূত্র। কিন্তু নানা কারণে পরিবেশদূষণ সমস্যা প্রকট হওয়ায় মানবসভ্যতা আজ চরম হুমকির সম্মুখীন। এ থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে চলছে নানা ধরনের গবেষণা। আমাদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন পরিবেশ-প্রকৃতি। কিন্তু প্রতিনিয়ত এ পরিবেশকে আমরা নানাভাবে দূষিত করে আসছি। বিশ্বজুড়ে এখন পরিবেশদূষণের মাত্রা ভয়াবহ। পরিবেশদূষণের উল্লেখযোগ্য কারণের মধ্যে রয়েছে অত্যধিক হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, নির্বিচারে বৃক্ষনিধন ও বনভূমি উজাড়, প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহার, দ্রুত শিল্পায়ন, সার ও কীটনাশকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার, শিল্প-কলকারখানার বর্জ্য, গাড়ির বিষাক্ত ধোঁয়া, ওজোন স্তরের ক্ষয়, অ্যাসিড বৃষ্টি, অপরিকল্পিত গৃহনির্মাণ, দারিদ্র্য, প্রসাধনসামগ্রী, প্লাস্টিক দ্রব্যের ব্যবহার ইত্যাদি। মানুষ একদিন প্রকৃতিকে জয় করার নেশায় মত্ত হয়েছিল। প্রকৃতিকে জয় করেও মানুষের সেই নেশার অবসান হলো না। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষ জলে, স্থলে, মহাশূন্যে আধিপত্য বিস্তার শুরু করল। কিন্তু মানুষের এই বিজয় মানুষকে এক পরাজয়ের মধ্যে ফেলে দিল। আজ আমরা এক ভয়ংকর সংকটের মুখোমুখি। এ সংকট বিশেষ কোনো দেশের নয়, বিশেষ কোনো জাতিরও নয়। এ সংকট আজ বিশ্বজুড়ে। বিশ্বের পরিবেশ আজ নানাভাবে দূষিত। এই দূষণ আজ ভয়ংকর ভবিষ্যতের দিকে আমাদের নিয়ে যাচ্ছে। ভয়াবহ পরিবেশদূষণের কবলে পড়ে আজ বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ শঙ্কার মধ্যে রয়েছে। অপেক্ষা করছে এক মহাধ্বংস! আজ জলে বিষ। বাতাসে আতঙ্ক। মাটিতে মহাত্রাস। জানা যায়, গত ৬০ বছরে ৮০টির বেশি প্রজাতির প্রাণী নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। কয়েক শ প্রজাতির গাছপালা বিলুপ্ত। আমাদের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে। এ পরিণামে বাতাসে প্রতিবছর ২২ কোটি টন কার্বন মনোক্সাইড সঞ্চিত হচ্ছে। বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড গ্যাসের আনুপাতিক হার ক্রমেই বাড়ছে। এর ফলে বৃষ্টির জলে অ্যাসিডের পরিমাণ বেশি হচ্ছে। প্রতিবছর ৭৫ লাখ হেক্টর জমি মরুভূমি হয়ে যাচ্ছে। প্রতি মিনিটে ৫০ হেক্টর উর্বর জমি বালুকাকীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। প্রতিবছর বাতাসে বিপুল পরিমাণ অক্সিজেন কমছে। এ অবস্থা থেকে আমাদের উত্তরণ দরকার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে