শত শত কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা ধরে ফেলায় ডা. রবিউল হোসেন অপপ্রচারে নেমেছেন বলে মন্তব্য করেছেন দৈনিক আজাদীর পরিচালনা সম্পাদক এবং ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের চেয়ারম্যান ওয়াহিদ মালেক। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, বছরের পর বছর ধরে লুটপাটে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিলেন তিনি। তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিচ্ছিন্ন একটি ঘটনাকে পুঁজি করে আমাকে আওয়ামী সন্ত্রাসী বানানো হয়েছে।
গতকাল সোমবার দৈনিক আজাদী ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ওয়াহিদ মালেক বলেন, পাহাড়তলী চক্ষু হাসপাতাল একটি ট্রাস্টের সম্পত্তি। এটি কারো ব্যক্তিগত সম্পদ নয়। আমি নিজেই এটির বোর্ড মেম্বার এবং আমার বাবা এম এ মালেক এটির চেয়ারম্যান। ডা. রবিউল হোসেন এটির ম্যানেজিং ট্রাস্টি। চক্ষু হাসপাতাল ট্রাস্টের পাশাপাশি আমার বাবাসহ কয়েকজন শিল্পপতির বিনিয়োগ এবং বিশাল অংকের ব্যাংক ঋণে গড়ে উঠে চট্টগ্রামের ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল।
তিনি বলেন, এম এ মালেককে ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হলে স্বাভাবিক নিয়মে কোম্পানির অডিট করানো হয়। দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি অডিট ফার্ম রহমান অ্যান্ড রহমানকে দিয়ে অডিট করাতে গিয়ে কোটি কোটি টাকার অনিয়ম ধরা পড়ে। অডিট টিম বিভিন্ন কাগজপত্র পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়, এখান থেকে কোটি কোটি টাকা সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এসব টাকার কোনো হিসাবপত্র নেই। হিসাব চাইতে গেলে ডা. রবিউল হোসেন চরম ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন। এতে আমাদের সাথে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটে।
কোম্পানির চেয়ারম্যান হিসেবে হাসপাতালের শত শত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ইতোমধ্যে মামলা দায়ের করা হয়েছে। দুদকে ফাইল জমা দেওয়া হয়েছে। ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের বর্তমান ম্যানেজমেন্টের এই উদ্যোগে দিশেহারা হয়ে ডা. রবিউল হোসেন এবং তার দুই পুত্র নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। এই ষড়যন্ত্রেরই অংশ হিসেবে সম্প্রতি চক্ষু হাসপাতাল কম্পাউন্ডস্থ তার বাসায় সংঘটিত একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে পুঁজি করে ওয়াহিদ মালেকের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার শুরু করেন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের সিএফও মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, এইচআর হেড মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম, কো–অর্ডিনেটর মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মাস তিনেক আগে ডা. রবিউল হোসেন পাহাড়তলী চক্ষু হাসপাতালে হিজাব এবং বোরকা নিষিদ্ধ করলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন। তাকে নাস্তিক এবং ইসলামবিরোধী হিসেবে আখ্যায়িত করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকে। ওই সময় মূলধারার সংবাদপত্র, টেলিভিশন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে অসংখ্য রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। এছাড়া কর্মচারীদের সাথে খারাপ ব্যবহার, স্থানীয়দের চাকরিতে না নেওয়া, কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ, একজন গরিব কৃষকের কিডনি চুরি, ডাক্তার এবং নার্সদের চাকরিচ্যুতির মতো ঘটনা পত্রপত্রিকা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার হওয়ায় ডা. রবিউল হোসেনের ওপর স্থানীয় বহু মানুষ ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সরকার পতনের পর ২০/২২ জনের একদল বিশৃঙ্খলাকারী চক্ষু হাসপাতাল কম্পাউন্ডের ভিতরে থাকা ডা. রবিউল হোসেনের বাসভবনে ঢুকে শাসিয়ে চলে যায়। তারা তাকে নাস্তিক, চোর–বাটপারসহ বিভিন্ন গালাগাল দেয় এবং ভবিষ্যতে ভালো হয়ে যাওয়ার জন্য সতর্ক করে দিয়ে চলে যায় বলে ওই হাসপাতালের একাধিক কর্মকর্তা–কর্মচারীর উদ্ধৃতি দিয়ে সাংবাদিকদের জানানো হয়।
ওয়াহিদ মালেক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই ঘটনাটিকে ডা. রবিউল হোসেন এবং তার পুত্রদ্বয় আমাকে ঘায়েল করার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন। ঘটনার সাথে আমার দূরতম সম্পর্কও নেই। প্রকৃতপক্ষে বিশৃঙ্খলাকারীরা রবিউল হোসেনের বাসায় চড়াও হলে ওই কম্পাউন্ডে থাকা সিআইসিএন বিল্ডিং থেকে এলিট ফোর্সের সিকিউরিটি ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের সিএফও মোহাম্মদ হেলালকে ফোন করেন। ওই বিল্ডিংটিতে ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে কর্মরত কয়েকজন ভারতীয় নাগরিক বসবাস করেন। তাদের ওপর হামলা হয়েছে কিনা সেটা দেখার জন্যই ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের চেয়ারম্যান হিসেবে আমি এবং আরো কয়েকজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা পেছনের পকেট গেট দিয়ে সেখানে ছুটে যাই। বিশৃঙ্খলাকারীরা চলে যাওয়ার বেশ পরেই আমরা সেখানে পৌঁছি। ডা. রবিউল হোসেন যে ভিডিও খণ্ডিত এবং বিকৃত করে প্রদর্শন করছেন তাতেও সময় দেখলে বোঝা যাবে।
তিনি বলেন, ইম্পেরিয়ালের চেয়ারম্যান হিসেবে ইম্পেরিয়ালে কর্মরত ভারতীয় নাগরিকদের খোঁজখবর নেওয়ার জন্যই আমরা ওখানে গিয়েছিলাম। এর বাইরে আমার সাথে ওই ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই। অথচ ডা. রবিউল হোসেন তার দুই পুত্রসহ আমাকে ‘আওয়ামী সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে নানাভাবে মিথ্যাচার করছেন। তারা আমার জীবননাশেরও চেষ্টা করছেন। ইতোমধ্যে তাদের বেশ কিছু গোপন পরিকল্পনার কথা আমরা জানতে পেরেছি। যা প্রশাসনসহ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে জানিয়েছি। তারা টাকা দিয়ে গুণ্ডা ভাড়া করার মতো ন্যক্কারজনক কাজও করছেন। দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছেন। আমি আমার জীবন নিয়ে শঙ্কিত।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই, পাহাড়তলী চক্ষু হাসপাতাল একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। সরকারি এবং বিদেশি অনুদানে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানটি আজ পকেটস্থ করা হয়েছে। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে চাই, আমি কোনো অনিয়মের সাথে নেই। কোনো অন্যায়ের সাথেও নেই। নিজের অযোগ্য পুত্রদের প্রতিষ্ঠা করার জন্যই ডা. রবিউল হোসেন ন্যক্কারজনক খেলায় মেতেছেন। বিষয়টি সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে জানানোর কথাও জানান তিনি। পুরো ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং চট্টগ্রামের মানুষের স্বার্থে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীসহ প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।