পাহাড়তলী হাজি ক্যাম্প ভুতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে। এটা এখন অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য। রাতে এখানে শুধু মাদক নয়, অসামাজিক কার্যকলাপেরও আসর বসে। অযত্ন আর অবহেলায় দিন দিন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে ক্যাম্পের নানা অবকাঠামো। এখানে একটি মডেল মসজিদ নির্মাণের প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে। তবে করোনাকালে প্রকল্পটি কবে আলোর মুখ দেখবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে।
একটি সূত্র বলছে, হাজি ক্যাম্পের ভূমির দাম প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এত দামি একটি ভূমিতে সরকারি উদ্যোগে নানা ধরনের অবকাঠামো গড়ে তোলার সুযোগ রয়েছে। এতে করে আলোকিত হবে এই এলাকা। প্রশ্ন, কবে বাস্তবায়ন হবে এমন উদ্যোগ? দেশের প্রথম এই হাজি ক্যাম্পের ৮টি ভবনের পাঁচটি পুরোপুরি পরিত্যক্ত। তিনটি ভবনের একটিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন সরকারি মুদ্রণ প্রকাশনা দপ্তর। অপরটি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অপর একটি বেহাল হওয়া ভবনে হাজি ক্যাম্পের কিছু কর্মচারী পরিবার পরিজন নিয়ে থাকেন। ক্যাম্পের পাঁচটি ভবনের দরজা-জানালাও চুরি হয়ে গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৫০ সালে প্রায় ১৪ লাখ টাকা খরচ করে পাহাড়তলীতে ৯ দশমিক ৩৫ একর জমি অধিগ্রহণ করে নির্মাণ করা হয় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের একমাত্র এবং প্রথম হাজি ক্যাম্প। ৭টি ব্লকে ৫ হাজার হজযাত্রীর থাকা খাওয়াসহ হজযাত্রার সময়কালের নানা প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয় সবকিছু। দেশের নানা অঞ্চল থেকে আসা সব হজযাত্রী এখানে অবস্থান করতেন এবং সিডিউল অনুযায়ী সৌদি আরবের জাহাজ ধরতেন।
১৯৫১ সাল থেকে এই ক্যাম্পে হাজির অবস্থান এবং জাহাজে করে হজযাত্রী যাতায়াত শুরু হয়। ১৯৮৫ সাল থেকে জাহাজযোগে হজযাত্রা বন্ধ হয়ে যায়। একই সাথে এই ক্যাম্পের গুরুত্বও কমতে থাকে। ১৯৮৯ সালে ক্যাম্পের যাবতীয় কার্যক্রম স্থায়ীভাবে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর থেকে পাহাড়তলী হাজি ক্যাম্প কার্যত অচল হয়ে পড়ে। ২০১৪ সালে ক্যাম্পের ভবনগুলো পরিত্যক্ত ঘোষণা করে গণপূর্ত অধিদপ্তর।
হাজি ক্যাম্পের ৮টি ভবনের মধ্যে পাঁচটির দরজা-জানালা চুরি হয়ে গেছে। প্রতি রাতে এখানে অসামাজিক কার্যকলাপ চলে। এখানে রাতে একজন পাহারাদার পাহারা দেন। দিনের বেলায়ও থাকেন একজন। এতে করে পাহারাদারের সাথে স্থানীয় মাস্তানদের চোর-পুলিশ খেলা চলে।
তবে পাহাড়তলী থানা পুলিশ বলছে, প্রতি রাতে ক্যাম্পে পুলিশের টহল থাকে। একদল পুলিশ রাত ১২টা থেকে ভোর পর্যন্ত ক্যাম্পে ডিউটি করে। স্থানীয় সূত্রগুলো বলেছে, পুলিশের সাথেও সন্ত্রাসীদের চোর-পুলিশ খেলা চলে।
হাজি ক্যাম্পে একটি কবরস্থান রয়েছে। ওই কবরস্থানের এলাকা সম্প্রসারণের সুযোগ দেওয়া না হলেও স্থানীয়দের কবর দেওয়ার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ উদারতা দেখায়। এখানে একটি মসজিদ আছে। এই মসজিদটিকে মডেল মসজিদে রূপান্তর করার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। তবে কবে নাগাদ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, দেশব্যাপী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মডেল মসজিদ স্থাপনের অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম মহানগর এবং জেলায় দুটি মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রকল্প রয়েছে। জেলার মসজিদটি বাকলিয়ার কল্পলোক আবাসিক এলাকায় নির্মিত হয়েছে। মহানগরীর মসজিদটি হাজি ক্যাম্পে নির্মাণের কথা রয়েছে। এটি নির্মিত হলে ক্যাম্পের ভুতুড়ে পরিবেশে কিছুটা আলোর সঞ্চার হবে।
পাহাড়তলী হাজি ক্যাম্পের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিচালক বোরহান উদ্দীন মোহাম্মদ আবু আহসান বলেন, হাজি ক্যাম্পের ভবনগুলো পরিত্যক্ত। তবে এখানে আমাদের বিভাগীয় অফিস এবং ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। এর বাইরে পুরাতন ভবনগুলোর তিনটিতে সীমিত পরিসরে কার্যক্রম চলে। বাকি ভবনগুলো পরিত্যক্ত। পুরো এলাকায় বাউন্ডারি দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ভবনগুলো পরিত্যক্ত। ওগুলো এতই বাজে অবস্থায় রয়েছে যে, ওখানে কোনো ধরনের আসর বসানোর পরিস্থিতি নেই। তাছাড়া আমাদের পাহারাদার রয়েছে। পাহাড়তলী থানা পুলিশও নানাভাবে সহায়তা করে।