চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে চার লেনের বাইপাস ও একটি ছয় লেনের ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগের টেন্ডার প্রক্রিয়া মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বলে প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে। প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে চার লেনের দেড়শ কিলোমিটার মহাসড়ক নির্মাণ বাস্তবায়নে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু করেছে জাইকা। তবে এই অংশে (দ্বিতীয় পর্যায়ের) সংরক্ষিত বন থাকায় একাধিক বিকল্প নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
সওজ সূত্রে জানা গেছে, ‘চট্টগ্রাম–কক্সবাজার হাইওয়ে ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট–১’ প্রকল্পটি ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে একনেকে পাস হয়। এ প্রকল্পের অধীনে পাঁচটি অংশে চার লেনের বাইপাস সড়ক নির্মাণ ও একটি ছয় লেনের ফ্লাইওভার এবং ১৩টি ছোট–বড় সেতু নির্মাণ করা হবে। কাজটি হবে দুটি ভাগে। এর মধ্যে ২৩ দশমিক ৫২ কিলোমিটার অংশটির (পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে চার লেনের বাইপাস ও একটি ছয় লেনের ফ্লাইওভার নির্মাণ) কাজের পরামর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, এ প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে ৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাইকা ঋণ দিচ্ছে ৫ হাজার কোটি টাকা। জাইকার সাথে ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণে ব্যয় হবে ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা। ভূমি অধিগ্রহণের এ টাকা দেয়া হবে সরকারি ফান্ড থেকে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ডিটেইল ডিজাইনের পর শুরু হবে ভূমি অধিগ্রহণ।
চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়ক সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী শ্যামল কুমার ভট্টাচার্য্য আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের ৫টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বাইপাস ও ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্প প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। ২৩ দশমিক ৫২ কিলোমিটারে ৫টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বাইপাস নির্মাণে জাইকার সাথে ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এখন পরামর্শক নিয়োগে টেন্ডার আহ্বানে অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছি। মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর আন্তর্জাতিক টেন্ডার আহ্বান করা হবে। প্রকল্পের প্রথম ফেজের কাজ আগামী এক বছরের মধ্যে শুরু করা সম্ভব হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে চার লেনের দেড়শ কিলোমিটার মহাসড়ক নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই কাজ চলমান। তবে দ্বিতীয় পর্যায়ের অংশে সংরক্ষিত বন থাকায় একাধিক বিকল্প নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। জাইকা সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে তাদের দেশের সোশ্যাল সেফগার্ড অ্যাডভাইজরি কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে পরিবেশ সংক্রান্ত প্রকল্পের কাজে বিনিয়োগ করবে। সেক্ষেত্রে বনাঞ্চল সংরক্ষণকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়েই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
এ ব্যাপারে বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সড়ক অবকাঠামো নির্মাণের জন্য আর কোনো বনের জমি বরাদ্দ দেবে না বন বিভাগ। সম্ভাব্যতা যাচাই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সড়ক সম্প্রসারণের জন্য বনের জমি চাওয়া হলে তা দিতে অস্বীকৃতি জানায় বন বিভাগ। চুনতি বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। বিপন্ন বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে ১৯৮৬ সালে এ অভয়ারণ্য প্রতিষ্ঠা করা হয়। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে এশীয় বন্য হাতির যাতায়াতের একটি সংযোগপথ বা করিডোর হিসেবেও এ অভয়ারণ্য গুরুত্বপূর্ণ।
এই মহাসড়ক নির্মাণে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া ও কক্সবাজারের চকরিয়া অংশের ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সংরক্ষিত বন, জাতীয় উদ্যান ও বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের জমির উপর দিয়ে যেতে হবে। এতে করে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের মারাত্মক ক্ষতির আশংকায় বন বিভাগ থেকে সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।
তবে প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে ৫টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বাইপাস ও ফ্লাইওভার নির্মাণে বন বিভাগের কোনো জায়গা পড়েনি। তাই এই অংশে কাজ আগামী এক বছরের মধ্যে শুরু হবে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক।