ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বাংলাদেশ ত্যাগ নিয়ে দিনভর নানা গুঞ্জনের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, তিনি সরকারকে জানিয়েই দেশের বাইরে গেছেন। তবে হাস কী উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়লেন এবং তার গন্তব্য কোথায়, এসব বিষয়ে কিছু জানাতে রাজি হননি মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনায় কী আসবে, না আসবে তা এই দুই দেশের নিজস্ব ব্যাপার বলে মন্তব্য করেন তিনি। আগামী জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণের লক্ষ্যে চার সদস্যের ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বিশেষজ্ঞ দল কিছু দিনের মধ্যেই বাংলাদেশে আসবে। এছাড়া কমনওয়েলথের প্রাক নির্বাচন পর্যবেক্ষকদল আগামী ১৮–২২ নভেম্বর ঢাকা সফর করবেন বলেও জানান তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাপ্তাহিক মিডিয়া ব্রিফিংয়ের প্রশ্নে জবাবে মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন এসব কথা বলেন।
ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বিষয়টি পাবলিকলি জানানোর কথা না। ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কাছেও এ বিষয়ে তথ্য চেয়ে জবাব পাওয়া যায়নি। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার চেয়ে বিরোধী পক্ষের টানা অবরোধের মধ্যে সংলাপে বসতে তিন প্রধান দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে চিঠি দেওয়ার পর এখন পর্যন্ত ইতিবাচক সাড়া পাননি পিটার হাস। খবর বিডি/ বাংলানিউজের।
এর মধ্যে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই হাসের ঢাকা ত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ে। কোনো খবরে বলা হয়, তিনি ওয়াশিংটন যাচ্ছেন, কেউ কেউ তার গন্তব্য শ্রীলঙ্কা বলে দাবি করছে। কেউ লিখেছে, কলম্বো হয়ে ওয়াশিংটন যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত। তবে হাস কোথায় যাচ্ছেন, সে প্রশ্নে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র স্টিফেন ইবেলি সাড়া দেননি। পরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন নিশ্চিত করেন, আমেরিকার দূত এই মুহূর্তে বাংলাদেশে নেই।
হাসের ঢাকা ত্যাগের বিষয়টি সরকারের জানা আছে কি না, এই প্রশ্নে তিনি বলেন, হ্যাঁ, আমরা অবশ্যই অবগত। কারণ, একজন রাষ্ট্রদূত যখন যাবেন, তখন অবশ্যই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েই যান। তিনি বলেন, বাংলাদেশে যেসব বিদেশি রাষ্ট্রদূত বা মিশন প্রধান আছেন, তারা যখন স্টেশন ত্যাগ করেন, তারা আমাদেরকে জানিয়ে যান কূটনৈতিক পত্রের মাধ্যমে। সেটা কিন্তু তাদের হেডকোয়ার্টারকেও জানাতে হয়। একইভাবে কিন্তু আমাদের রাষ্ট্রদূতরাও তার হোস্ট কান্ট্রি থেকে যখন বাংলাদেশে আসেন, তখন একইভাবে যেমন আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জানান, তেমনি ওখানকার সরকারকেও কিন্তু কূটনৈতিক পত্রের মাধ্যমে জানিয়ে আসতে হয় এবং তার অবর্তমানে একজন যে দায়িত্বপ্রাপ্ত থাকেন, তার নামটাও কিন্তু প্রকাশ করে আসতে হয়। তবে পিটার হাস কত দিনের জন্য বাংলাদেশ ছেড়েছেন, কী জন্য ছেড়েছেন, এসব বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র। এ বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিন্তু এই তথ্যটা পাবলিকলি জানাবে না যে, একজন রাষ্ট্রদূত কবে থেকে কতদিনের জন্য গেছেন এবং কী উদ্দেশ্যে গেছেন। কারণ, এটা তো পাবলিকলি জানানোর কথা না।
বিষয়টি নিয়ে নানা রকম ‘ভুল তথ্য’ ছড়ানোর বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সেহেলী বলেন, “মিসইনফরমেশন কেন হবে? আপনারা দূতাবাসের কাছ থেকে জানতে পারেন। তাদেরও তো একজন মুখপাত্র আছে।
ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনা তাদের নিজস্ব ব্যাপার : এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরিন জানিয়েছেন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনায় কী আসবে, না আসবে তা এই দুই দেশের নিজস্ব ব্যাপার। গতকাল বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাপ্তাহিক মিডিয়া ব্রিফিংয়ের এক প্রশ্নে জবাবে তিনি এ কথা বলেন। ব্রিফিংয়ে প্রশ্ন করা হয়, ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের ভাষ্যমতে ভারত–যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য কী? আপনারা কি মনে করেন, এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ? এ প্রশ্নের উত্তরে সেহেলী সাবরিন বলেন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী পর্যায়ের ‘টু প্লাস টু’ সংলাপের ধারণাগত সূত্রপাত ২০১৭ সালে। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথমবারের মতো সংলাপটি অনুষ্ঠিত হয় ভারতের নয়াদিল্লিতে। ‘টু প্লাস টু’ সংলাপটি মূলত ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সার্বিক দ্বিপাক্ষিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়াবলি আলোচনার একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে পরিচিত।
ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অনুষ্ঠিত এই সংলাপে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট নানান বিষয় নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়। সে আলোচনায় বৃহত্তর বৈশ্বিক, আঞ্চলিক ও উপ–আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং ভূ–রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার নানান দিক উঠে আসা স্বাভাবিক। আলোচনার বিষয়বস্তু হিসেবে কী আসবে, না আসবে তা এই দুই দেশের নিজস্ব ব্যাপার, বলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র। নয়াদিল্লিতে গত ১০ নভেম্বর ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ‘টু প্লাস টু’ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
নির্বাচন পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশে আসছে ইইউ প্রতিনিধিদল: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরিন জানিয়েছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণের লক্ষ্যে চার সদস্যের ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বিশেষজ্ঞ দল কিছু দিনের মধ্যেই বাংলাদেশে আসবে। এছাড়া কমনওয়েলথের প্রাক নির্বাচন পর্যবেক্ষকদল আগামী ১৮–২২ নভেম্বর ঢাকা সফর করবে। গতকাল বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাপ্তাহিক মিডিয়া ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়।
ব্রিফিংয়ে সেহেলী সাবরিন আরও জানান, ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য নির্বাচন কমিশনে আরও কতিপয় আগ্রহী পর্যবেক্ষকদল আবেদন করেছে বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে এ সম্পর্কিত কোনো তালিকা নেই। তালিকাটি প্রাপ্তি সাপেক্ষে পরবর্তীতে আপনাদের জানানো হবে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর এখনও কোনো দেশ স্বাগত জানায়নি।