বায়েজিদ কুঞ্জছায়া আবাসিক এলাকার মোঃ আজিজ ও হামিদা বেগম দম্পতি নিজের সন্তানের মত পরম মমতায় পাঁচ বছর ধরে লালন পালন করে বড় করে তুলেছেন আদরের ‘বিজয়কে’।
আজ থেকে ৫ বছর আগে ২০১৬ সালে ফয়স লেকের খামারি মো. আলীর কাছ থেকে শখের বসে ৪ মাস বয়সী বাছুর অবস্থায় বিজয়কে কিনে আনেন গো-খাদ্য বিক্রেতা মো. আজিজ। দেখতে অনেকটা দেশীয় গরুর আদলে ফ্রিজিয়ান প্রজাতির লাল-খয়েরি রঙের এই বাছুরটি নাম রাখেন বিজয়। কুঞ্জছায়া আবাসিকের ১ নম্বর রোডের ভাড়া বাসায় সেদিনের ছোট্ট বিজয় দেখতে-দেখতে আজ দেশ-বিদেশে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আকর্ষণীয় শারীরিক রঙ এবং হৃষ্ট-পুষ্ট গঠনে বিজয় ইতোমধ্যে লাভ করেছে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের হৃদয়। দেহের উচ্চতা লম্বালম্বি ৫ ফুট ও পাশ থেকে প্রায় সাড়ে নয় ফুট। সুঠাম দেহের গরুটির নজরকাড়া সৌন্দর্য নিয়মিত কাছে টানছে ক্রেতাদের। তাই দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিনিয়ত ক্রেতারা সশরীরে এবং ফোনে যোগাযোগ করছেন বিজয়ের (গরুর) মালিক মো. আজিজ এবং তার স্ত্রী হামিদা বেগমের সাথে।
গতকাল সরেজমিনে কুঞ্জছায়া আবাসিকের ১ নম্বর রোডে মো. আজিজ দম্পতির বাসায় গিয়ে দেখা যায়, মোঃ আজিজ ও হামিদা বেগম নিজ সন্তানের মত বিজয়কে লালন পালনেই ব্যস্ত। কথা প্রসঙ্গে মোঃ আজিজ ও হামিদা বেগম জানান, বিজয় আজকের এই অবস্থানে আসার পেছনের কাহিনীও কম নয়। ২০১৬ সালে কিনে বাছুরটিকে প্রথমে নিয়ে যান নেত্রকোনা গ্রামের বাড়িতে। সেখানে ঠিকমত পালন হচ্ছে না। তাই ৮ মাস পর বিজয়কে ট্রাকে করে নিয়ে আসেন চট্টগ্রাম মহানগরীর সিটি গেট এলাকার ভাড়া বাসায়। পরে ফয়স লেক থেকে বায়েজিদের কুঞ্জছায়া আবাসিকের ১নং রোডের ভাড়া বাসায় স্থান হয় বিজয়ের। এখানে একপাশে ঘর বানিয়ে পরিবার নিয়ে থাকেন তিন সন্তানের জনক আজিজ। অন্যপাশে তৈরি করা হয়েছে গোয়াল ঘর। শুধু গোয়াল ঘর ভাড়া হিসেবে চার হাজার টাকা মাসে খরচ হয়। গোয়ালের জন্য রয়েছে আলাদা বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবস্থা।
হামিদা বেগম আরো জানান, প্রতিদিন বিজয়ের জন্য ১২শ’ টাকার খাবার লাগে। ওজন আনুমানিক ৩৫ মন হবে বলে জানান তিনি। এইবারের কোরবানি ঈদে বিজয়ের দাম রেখেছেন ২৫ লাখ টাকা। ইতোমধ্যে সিলেটের এক ব্যক্তি (তিনি লন্ডনে থাকেন) ২২ লাখ টাকা চেয়েছেন। চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গরুটি কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করে এই পর্যন্ত ৫ হাজারের উপরে ফোন পেয়েছেন। প্রাকৃতিক ও দানাদার খাবার খাইয়ে বড় করা হয়েছে বিজয়কে। দীর্ঘ পাঁচ বছর কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে লালন পালন করে বড় করা হয়েছে। তাই গরুটিকে ঘিরে ভিন্ন এক আবেগ, ভালবাসার এবং অনুভূতি তাদের মধ্যে।
নিয়মিতই গরুটির সাথে খুনসুঁটি করে সময় কাটে আজিজ ও হামিদা বেগমের। এসময় বিজয়কে দেখা যায় নিজের জিহবা দিয়ে হাত চেটে আদর করতে, এ যেন বিজয়ের সাথে মমতার এক দারুণ দৃশ্য।