অল্প কয়েকদিন আগে, গত ১৬ নভেম্বর আন্তর্জাতিক সহনশীলতা দিবস পালিত হয়েছে। ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভায় ৫১/৯৫ নম্বর সিদ্ধান্ত প্রস্তাব অনুসারে প্রতি বছর ১৬ নভেম্বর আন্তর্জাতিক সহনশীলতা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
আন্তর্জাতিক সহনশীলতা দিবস শান্তি, গণতন্ত্র ও স্থিতিশীল উন্নয়নের অপরিহার্য শর্ত হিসেবে সহনশীলতার প্রতি বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ দিবসের গুরুত্ব অপরিসীম। বিশেষজ্ঞরা বলেন, সহনশীলতা একটি মনোগত বিষয়, যা তৈরি হওয়ার জন্য চিন্তার বিকাশ ঘটানো ও অন্যের মতামতকে শ্রদ্ধা করতে পারতে হবে। বিশ্ববাসীর মধ্যে সহনশীলতা জাগ্রত করতে, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন অক্লান্ত কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। তবে এসব কার্যক্রমের মূল লক্ষ বিশ্বের সব শ্রেণি পেশার মানুষকে সহনশীলতার প্রয়োজনীয়তা আগে বোঝানো এবং তারপর সকল কার্যক্রমের সঙ্গে তাদের একাত্ম করা।
সাম্প্রতিক বাংলাদেশে সহনশীলতা একদম উঠে গেছে বলে মনে হয়। কোথাও ধৈর্য ধারণ করার চিত্র প্রত্যক্ষ করি না। সহ্যশক্তি ক্রমশ যেন হ্রাস পাচ্ছে। ফলে মানুষে মানুষে বিভেদ বাড়ছে। বাড়ছে দ্বন্দ্ব, সংঘাত ও সহিংসতা। পরিবার সহিংসতার চর্চা করে কখনো ক্ষমতার আধিপত্যের জায়গা থেকে সচেতনভাবে, কখনো কখনো সহিংসতার গুরুত্ব অনুভব করতে না পেরে অসচেতনভাবে। ফল্গুধারার মতো বহমান আছে সহিংসতার এই চরিত্র। সকল সামাজিক–অর্থনৈতিক এবং সব শ্রেণিতেই শুধু দেশব্যাপী নয়, বিশ্বব্যাপী প্রতিনিয়ত ঘটছে সহিংসতার ঘটনা। এমন কিছু প্রথা ও সংস্কার লক্ষ করা যায় যা যুগের পর যুগ ধরে চলে আসছে।, কিন্তু নিশ্চিতভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে। শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিকর এ সমস্ত প্রথার বিরুদ্ধে সচেতনতা প্রয়োজন।
আমাদের দেশের শাসনব্যবস্থার ভারসাম্য ও জবাবদিহিতা জোরদার করা জরুরি। এ প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞদের অভিমত হলো, বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থায় ব্যর্থতার মূলে রয়েছে দুর্বল জবাবদিহিতা। আর এই ব্যর্থতা রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক–উভয় ক্ষেত্রেই। দৃষ্টত মনে হয়, এ দুর্বলতার উৎপত্তির মূল উৎস প্রধানত অতিমাত্রায় কেন্দ্রায়িত রাজনীতিতে। তাই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যদি আইন–শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও শাসন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে না পারে, তাহলে জনসাধারণের ঐকান্তিক চাওয়া ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।
আমাদের জনসাধারণেরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে। এই দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে পরমতসহিষ্ণুতা, সহনশীলতা ও ক্ষমাশীল মনোভাব। মানুষের প্রতি মানুষের মমত্ববোধ বৃদ্ধি করতে হবে। জেন্ডার, শ্রেণি, বর্ণ, ধর্ম, ভাষা–সংস্কৃতি ও জাতি বিষয়ে কোনো বিভেদ নয়, সবক্ষেত্রে সামাজিকীকরণ জরুরি। দ্বন্দ্ব, সংঘাত, হত্যা থেকে দূরে থাকা ও দূরে রাখার শিক্ষা নিতে হবে। সকলের ভেতর শুভবোধ জাগ্রত করার উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।