পবিত্র রমজানের শুভ আগমন এবং প্রস্তুতিতে আমাদের করণীয়

মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম | মঙ্গলবার , ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ at ৮:৩৮ পূর্বাহ্ণ

রমজানুল মোবারক: ইসলামী পঞ্জিকায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পবিত্র মাস রমজান হল আধ্যাত্মিক প্রতিফলন, নিষ্ঠা এবং আত্মশৃঙ্খলা চর্চার উপযুক্ত সময়। আমরা যখন এই পবিত্র সময়ের কাছে পৌঁছাই, তখন বিশ্বজুড়ে মুসলমানরা তাদের হৃদয়, ঘর, পরিবার এবং সমাজের আন্তরিকতা নিষ্ঠার সাথে মাসটিকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত করে। এ মাস আমাদের ঈমানকে শক্তিশালী করার, আমাদের ইবাদত বৃদ্ধি করার এবং রোজা, প্রার্থনা এবং দানখয়রাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে গভীর সংযোগ গড়ে তোলার সহায়ক মাস। পবিত্র রমজানের প্রস্তুতিতে যেসব মৌলিক বিষয়ে আমাদের খুব বেশি নজর দিতে হবে তা তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

আধ্যাত্মিক প্রস্তুতি: রমজানের সারমর্ম কেবল খাদ্য ও পানীয় থেকে বিরত থাকা নয় বরং আত্মাকে পবিত্র করা। রমজানের প্রস্তুতি শুরু হয় আন্তরিক অনুতাপ এবং অতীতের ত্রুটিগুলির জন্য ক্ষমা চাওয়ার মাধ্যমে। মূলত যার প্রস্তুতি শুরু হয় পবিত্র রজব এবং সাবান মাসের ইবাদতের মাধ্যমে। রমজানের প্রস্তুতির জন্য এ দুটো মাস এত বেশি গুরুত্ব পূর্ণ যে, রজব মাসের চাঁদ উদিত হওয়ার পর থেকে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব সময় পড়তেন ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজবা ওয়া শাবান ওয়া বালিঘনা রমজান’। অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ, রজব ও শাবান মাসে আমাদের বরকত দান করুন এবং আমাদের রমজানে পৌঁছানোর তৌফিক দান করুন।’ রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দোয়া আমাদের কে উৎসাহিত করে যে এ দুটো মাসে বেশি ইবাদতের মাধ্যমে যেমন, পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত বৃদ্ধি, অতিরিক্ত নামাজ আদায় এবং আত্মউন্নতির মাধ্যমে আল্লাহর সাথে আমাদের সম্পর্ক শক্তিশালী করে পবিত্র রমজান মাসে আধ্যাত্মিক লক্ষ্য অর্জনে রমজানুল মোবারাককে সম্পূর্ণরূপে আলিঙ্গন করে বরণ করে নিতে সহায়তা করে।

শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি: সূর্য থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজা রাখার জন্য শারীরিক ও মানসিক স্থিতিস্থাপকতা প্রয়োজন। রোজার রুটিনে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করার জন্য, অনেকেই রমজান শুরু হওয়ার আগে তাদের খাওয়া এবং ঘুমের অভ্যাস সামঞ্জস্য করতে শুরু করেন। পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ শরীরকে দীর্ঘ রোজার জন্য প্রস্তুত করতে সাহায্য করে। উপরন্তু, ধৈর্য এবং মনোযোগ গড়ে তোলার মাধ্যমে মানসিকভাবে প্রস্তুতি রোজার সময়সূচীতে একটি মসৃণ পরিবর্তন নিশ্চিত করে।

পারিবারিকভাবে প্রস্তুতি: রমজানকে স্বাগত জানানোর জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হচ্ছে পারিবারিকভাবে রমজান মোবারককে বরণ করে নেওয়ার প্রস্তুতি. অর্থ্যাৎ বাড়িতে একটি শান্তিপূর্ণ এবং আধ্যাত্মিক পরিবেশ তৈরি করা। আমার এ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে রমজান মাস শুরু হওয়ার পূর্বে আমরা আমাদের ঘরের আঙ্গিনা পরিষ্কার এবং সাজিয়ে রাখা, নামাজের স্থান তৈরি করা, বাসায় কোনো প্রকারে ছবি থাকলে তা সরিয়ে ফেলা এবং খাবারের প্রস্তুতির পরিকল্পনা করে। এখানে কোনো প্রকারের ছবি থাকলে তা সরিয়ে ফেলাটা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, যেহেতু রমজান মাস হচ্ছে সম্পূর্ণ ইবাদতের মাস আর এ মাসকে সামনে রেখে মুসলিম উম্মা প্রতিটি ঘরে ঘরে এবাদতে মশগুল থাকে. আর বান্দারা যখন আল্লাহর ইবাদতে রত থাকে তখন ওই জায়গায় ফেরেশতাদের আগমন হয় আর সে যায়গায় যদি কোনো প্রকারের ছবি থাকে ফেরেশতারা ওই জায়গায় প্রবেশ করে না। এ বিষয়ে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনছেন ‘যে ঘরে কুকুর বা ছবি থাকে সেখানে ফেরেশতারা প্রবেশ করেন না।’ তাই পারিবারিকভাবে রমজানের পরিপূর্ণ প্রস্তুতিতে বিষয়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

দানশীলতা এবং দানের কাজ: রমজান হল উদারতা এবং দয়ার মাস। মুসলমানদের দান (সদকা) দিতে এবং তাদের বাধ্যতামূলক যাকাত পূরণ করতে, অভাবীদের সাহায্য করতে উৎসাহিত করা হয়। অনেকে অনেক কমিউনিটি ইফতার সমাবেশে অংশগ্রহণ করে, দরিদ্রদের খাবার বিতরণ করে এবং মানবিক কাজে সহায়তা করে। এই দানের কাজগুলি কেবল অভাবীদের জন্যই নয় বরং দাতার হৃদয়কে পবিত্র করে এবং আশীর্বাদ বৃদ্ধি করে। তাই রমজান শুরুর পূর্বে এ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে যার যার অবস্থান থেকে প্রস্তুতি নিয়ে থাকে ।

ব্যক্তিগত লক্ষ্য নির্ধারণ: একটি অর্থপূর্ণ রমজান অভিজ্ঞতা আসে ব্যক্তিগত লক্ষ্য নির্ধারণের মাধ্যমে, যেমন কুরআন তেলাওয়াত সম্পন্ন করা, তারাবির নামাজ পড়া এবং যিকির (আল্লাহর স্মরণ) করার জন্য আরও বেশি সময় উৎসর্গ করা। এই লক্ষ্যগুলি লিখে রাখা এবং অগ্রগতি ট্র্যাক করা মাস জুড়ে মনোযোগ এবং প্রেরণা বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে।

পবিত্র রমজান হল মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে অগণিত রহমত অর্জনের মূল্যবান সময়, যা মুসলিম উম্মাহ তাদের আত্মাকে পরিষ্কার করার, তাদের ঈমানকে শক্তিশালী করার এবং ধার্মিকতা ও কৃতজ্ঞতার জীবনধারা গ্রহণ করার সুযোগ দেয়। আন্তরিকতা এবং নিষ্ঠার সাথে এই পবিত্র মাসের জন্য প্রস্তুতি নিশ্চিত করে যে আমরা এর আধ্যাত্মিক পুরস্কারের সর্বাধিক ব্যবহার করি। রমজানকে স্বাগত জানাতে গিয়ে, আসুন আমরা এটিকে খোলা হৃদয়, পুনর্নবীকরণিত বিশ্বাস এবং নিজেদের উন্নত সংস্করণ হয়ে ওঠার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আলিঙ্গন করি। এই রমজান সকলের জন্য শান্তি, আশীর্বাদ এবং আধ্যাত্মিক বৃদ্ধি বয়ে আনুক।

লেখক: প্রাবন্ধিক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতরুণ প্রজন্মকে বইমুখী করতে হবে
পরবর্তী নিবন্ধক্যানসার প্রতিরোধে সচেতনতা ও সরকারের উদ্যোগী ভূমিকা