মহান আল্লাহর দরবারে বিনীত প্রার্থনা- হে দয়াময় প্রভু! তোমার এ দুর্বল বান্দাদের পাপ ক্ষমা করে রমজানের কল্যাণে বিশ্ব থেকে মহামারি করোনা সহ সব ধরনের বালা-মুসিবত দূর করে দাও। রমজানের জান্নাতি আবহে তোমার নিরাপত্তার চাদরে মুসলিম উম্মাহকে জড়িয়ে নাও। আমরা সবাই জানি, পবিত্র মাহে রমজান সিয়াম সাধনার মাস, আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে একান্ত করে পাবার মাস এবং সকল পাপ ক্ষমার মাস। এই বরকত ও আশিষমণ্ডিত মাসকে লাভ করার জন্য প্রতিটি মুমিন-মুত্তাকী বান্দারা অধির আগ্রহে অপেক্ষমান থাকেন।
স্বাগতম মাহে রমজান। বছর ঘুরে আবার এলো রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস মাহে রমজান। এ মাস হলো কল্যাণ লাভের, বহুগুণ পুরষ্কার লাভের ও গুনাহ মাফের উপযুক্ত সময়। পবিত্র রমজান মাস নিঃসন্দেহের অন্যান্য মাস সমূহ থেকে পৃথক ভাবে মাহাত্ম্যের দাবী রাখে। বিশ্ব মানবতার সর্বশ্রেষ্ঠ মুক্তির সনদ সর্বযুগের সর্বদেশের সর্বজাতির সর্বাঙ্গীন জীবন ব্যবস্থার অপরিবর্তনীয় গ্রন্থ আল কোরআন। যে মাসে নাযিল করা হয় সে মাসের পবিত্রতা, মাহাত্ম্য ও মহিমা নিঃসন্দেহে অতুলনীয়। আরবি মাস সমূহের এই ‘রমজান’ এ পরম করুণাময় আল্লাহ তায়ালা নাযিল করেন আসমানি কিতাব সমূহের সর্বশেষ গ্রন্থ আল কোরআন। কোরআন শরিফে আল্লাহ তায়ালা সুস্পষ্টভাবে এরশাদ করেন, ‘রমজান এমন এক মহিমাময় ও গৌরবামণ্ডিত মাস যে মাসে কোরআন শরীফ নাযিল হয়েছে।
শুধু কোরআন শরিফই নয়, পূর্ববর্তী আসমানি গ্রন্থসমূহ ও সহিফাগুলোও এই পবিত্র রমজান মাসে নাযিল করা হয়। রমজান মাসের পহেলা (কিংবা ৩রা তারিখে) হযরত ইব্রাহিম (আঃ) সহিফা লাভ করেন, ৬ তারিখে হযরত মূসা (আঃ) এর কাছে পবিত্র ‘তাওরাত’ পৌঁছায়। হযরত দাউদ (আঃ) এর কাছে পবিত্র যাবুর নাযিল হয় এই পবিত্র মাসের ১৮ তারিখে, আর হযরত ঈসা (আঃ) এর পবিত্র ‘ইনজিল’ লাভ করেন এই মাসের ১২ তারিখে। এ থেকে সহজেই পবিত্র রমজান মাসের গুরুত্ব, পবিত্রতা ও মাহাত্ম্য বোঝা যায়। ‘রোজা’ একটি ফারসী শব্দ, আরবি ভাষায় রোজাকে ‘সিয়াম’ বলা হয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকা ও সংযম করাকে রোজা বলে। ‘সিয়াম’ শব্দেরও ঐ একই অর্থ। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম হল সিয়াম বা রোজা। শুধু পানাহার থেকে বিরত থাকা বা ‘উপবাস’ ব্রত বললে ‘সিয়াম’ এর সঠিক রূপ প্রকাশ পায় না। ‘উপবাস ব্রত’ পৃথিবীর সকল ধর্মেই রয়েছে। তবে সুদীর্ঘ একমাস ব্যাপী ভোর (সোবহে সাদেক) থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উপবাস এবং সেই সঙ্গে কঠোর সংযম সাধনার বিধান ইসলাম ছাড়া পৃথিবীতে আর অন্য কোন ধর্মে নেই। ‘রমজ’ শব্দ থেকে এসেছে ‘রমজান’। ‘রমজ’ শব্দের অর্থ হল জ্বালিয়ে দেওয়া, দগ্ধ করা। পবিত্র রমজানের সিয়াম সাধনা মানুষের মনের কলুষ- কালিমা পুড়িয়ে নষ্ট করে দিয়ে মনকে নির্মল ও পবিত্র করে তোলে, পাপ রাশিকে সম্পূর্ণ রূপে দগ্ধ করে দিয়ে মানুষকে করে তোলে পুণ্যবান, যোগ্য করে তোলে সাধারণ মানুষকে পরম করুণাময় আল্লাহ তায়ালার অসাধারণ করুণা ও ক্ষমা গ্রহণ করার জন্য।
স্বভাবতই নামাজের পরেই মুসলমানের জন্য আল্লাহতায়ালা যে এবাদত ফরজ করেছেন তা হল পবিত্র রমজান মাসের রোজা। পবিত্র কোরআন শরিফে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, হে ঈমানদারগণ, তোমাদের জন্য রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের প্রতি ফরজ করা হয়েছিল। আশা যে, তোমরা মুত্তাকী হবে।’’ এই আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, যত শরিয়ত দুনিয়ায় নাজিল হয়েছে তার প্রত্যেকটিতেই রোজা রাখার বিধি- ব্যবস্থা ছিল। নামাজের মত এই রোজাকে ও আবহমানকাল থেকেই সকল নবির শরিয়তেই ফরজ করা হয়েছে। পবিত্র রমজানের রোজা তিনটি ভাগে বিভক্ত ‘রহমত’ ‘মাগফেরাত’ ও ‘নাজাত’। প্রথম দশদিন পরম করুণাময় আল্লাহ-তায়ালার অসীম রহমত ঝরে পড়তে থাকে পৃথিবীর উপরে, তাঁর রোজাদার মোমেন বান্দাদের উপর। দ্বিতীয় দশদিনে পাওয়া যায় ‘মাগফেরাত’ বা ক্ষমা- অন্যায় কাজ ও চিন্তার জন্য ক্ষমা, পাপাচার ও চারিত্রিক নোংরামির জন্য ক্ষমা। শেষ দশদিনে পাওয়া যায় মুক্তি-দোজখের শাস্তি থেকে মুক্তি, পাপ থেকে মুক্তি, যৌন-ক্ষুধা থেকে মুক্তি, কামনা থেকে মুক্তি, অশ্লীলতা থেকে মুক্তি, লোভ- লালসা থেকে মুক্তি, সকল প্রকারের অযৌক্তিক বন্ধন থেকে মুক্তি, সকল অশুভ কার্যকলাপ ও অন্যায় থেকে মুক্তি। আর এই মুক্তির জন্য’ এতেকাফের সাধনা। মাহে রমজানের এই রোজার মাধ্যমে সংযম সাধনার ফলে মানুষের পক্ষে সম্ভব হয় পরম করুণাময়ের নৈকট্য লাভ করার।
মহান আল্লাহ পাকের দরবারে এই মিনতি করি, হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে পবিত্র এই রমজানে তোমার রহমত থেকে আমাদের বঞ্চিত করো না এবং মুসলিম বিশ্বকে করোনাভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা কর, আমিন।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক।