পদত্যাগ করলেন টিউলিপ

| বুধবার , ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৮:২৩ পূর্বাহ্ণ

সমালোচনার মুখে শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করলেন ব্রিটেনের আর্থিক সেবা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক। গতকাল মঙ্গলবার রাতে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন দুর্নীতির অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার মধ্যে থাকা টিউলিপ।

বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি ব্রিটিশ এই এমপি লন্ডনে ফ্ল্যাট নিয়ে এবং বাংলাদেশে দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে আলোচনার মধ্যে ছিলেন। রয়টার্স লিখেছে, পদত্যাগপত্রে টিউলিপ লিখেছেন, অভিযোগ পর্যালোচনার পর ব্রিটিশ সরকারের ইনডিপেনডেন্ট এথিকস অ্যাডভাইজর (স্ট্যান্ডার্ডস ওয়াচডগ) স্যার লাউরি ম্যাগনাস নিশ্চিত করেছেন যে, তিনি (টিউলিপ) মন্ত্রী হিসেবে কোনো নিয়ম লঙ্ঘন করেননি। পরে মন্ত্রিত্ব থেকে সরে দাঁড়ানো টিউলিপ এঙ হ্যান্ডেলে তার পদত্যাগের কথা জানান। এতে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো পদত্যাগপত্রের ছবিও পোস্ট করেন। খবর বিডিনিউজের।

রয়টার্স লিখেছে, টিউলিপকে লেখা স্টারমারের একটি চিঠি প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। সেখানে তিনি লিখেছেন, আপনার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করার পাশাপাশি আমি এটাও স্পষ্ট করে বলতে চাই, স্বাধীন উপদেষ্টা হিসেবে স্যার লরি ম্যাগনাস আমাকে আশ্বস্ত করে বলেছেন যে, তিনি মন্ত্রী হিসেবে আপনার বিরুদ্ধে নিয়ম লঙ্ঘন ও আর্থিক অনিয়মের কোনো অভিযোগের ঘটনা পাননি। আর্থিক সেবা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব ছাড়ার পর সেখানে এমা রেনল্ডসকে দায়িত্ব দিয়েছেন স্টারমার।

লন্ডনে বিনামূল্যে ফ্ল্যাট উপহার নেওয়া এবং বাংলাদেশে একটি প্রকল্পে বড় অংকের দুর্নীতিতে তার নাম আসার পাশাপাশি রাজধানীতে প্লট নিতে অনিয়মের অভিযোগও ওঠে টিউলিপের বিরুদ্ধে। এসব খবর আসার পর ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে তাকে পদত্যাগের আহ্বানের পাশাপাশি তাকে বাদ দেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়।

বাংলাদেশে শেখ হাসিনার মতো টিউলিপের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত শুরু হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ঘুষ আর অনিয়মের মাধ্যমে পাওয়া বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার তারা অবৈধভাবে অন্য দেশে পাচার করেছেন। পরিস্থিতি আরো জটিল করে তুলেছে লন্ডনের কয়েকটি বাড়ি, যেগুলো টিউলিপ এবং তার পরিবারের সদস্যদের উপহার দেওয়া হয়েছে কিংবা বিনা পয়সায় থাকতে দেওয়া হয়েছে। আর সেগুলো তাদের দিয়েছেন ধনাঢ্য বাংলাদেশিরা, যাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনার যোগ আছে।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছে কিংস ক্রসের একটি ফ্ল্যাট, যেটা ২০১৪ সালে টিউলিপকে উপহার দিয়েছিলেন আবদুল মোতালিফ নামের এক ব্যবসায়ী, যিনি শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ। এখন ওই ফ্ল্যাটের দাম ৭ লাখ পাউন্ড। ওই ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়ে টিউলিপ থাকেন অন্য বাসায়। ব্রিটেনের সিটি মিনিস্টার হিসেবে আর্থিক খাতের দুর্নীতি বন্ধ করা টিউলিপের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। সেখানে টিউলিপের বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি উঠতে শুরু করে। তবে প্রথম থেকেই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন ৪২ বছর বয়সী টিউলিপ। অভিযোগগুলো তদন্ত করতে তিনি এজন্য নিজেকে স্বাধীন তদন্তকারী সংস্থার কাছে সমর্পন করেন।

ব্রিটিশ সরকারের ইনডিপেনডেন্ট এথিকস অ্যাডভাইজর (স্ট্যান্ডার্ডস ওয়াচডগ) স্যার লাউরি ম্যাগনাস এ বিষয়ে তদন্ত করবেন বলে প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার জানিয়েছিলেন। টিউলিপ তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মোকাবেলায় চ্যান্সেলর র‌্যাচেল রিভসের চীন সফর থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। তার সরে দাঁড়ানোর দাবি জোরালো হওয়ার মধ্যে গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী আবারও তার পক্ষ নিয়ে বলেন, টিউলিপের বিষয়ে তার পূর্ণ আস্থা রয়েছে। তবে কনজারভেটিভরা টিউলিপকে বরখাস্ত করার আহ্বান জানিয়েছে।

অন্যদিকে বাংলাদেশের সরকারপ্রধান মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, তদন্তে যদি প্রমাণ হয় যে টিউলিপ এসব ডাকাতির সুবিধাভোগী, তাহলে সম্পত্তিগুলো ফিরিয়ে দেওয়া উচিত। টিউলিপকে ক্ষমা চাইতে ও পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি সানডে টাইমসকে বলেছেন, তিনি দুর্নীতি দমনবিষয়ক মন্ত্রী হয়েছেন এবং নিজেকে এখন নির্দোষ দাবি করছেন।

এ নিয়ে তর্কবিতর্ক আর সমালোচনার মধ্যেই গতকাল টিউলিপের মন্ত্রিত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা এল। পদত্যাগের বিষয়ে তিনি এক বিবৃতিতে দাবি করেছেন, তদন্তে আর্থিক বিষয়ে তার বিরুদ্ধে নিয়ম লঙ্ঘনের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কিন্তু তিনি মনে করছেন, মন্ত্রীর দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তার মনোযোগ ব্যাহত হতে পারে। এ কারণে আমি মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

রয়টার্স লিখেছে, এ নিয়ে গত দুই মাসে দুজন মন্ত্রী হারালেন স্টারমার; যিনি গত জুলাইয়ে সাধারণ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই গ্রহণযোগ্যতা হারাতে শুরু করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধখালাস পেলেন বাবর
পরবর্তী নিবন্ধভারত থেকে আমদানি হচ্ছে ১১শ কোটি টাকার ডিজেল