প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় জেলা বান্দরবানে বিস্তৃত সবুজ ঘন জঙ্গল ও পাথরে ছড়ায় রহস্যময় আলীর সুড়ঙ্গের (গুহার) পথে পথে সব রহস্যের হাতছানি। ভয়ঙ্কর মাকড়সার জাল, পাখির কিচিরমিচির, ঝর্ণার শব্দে গা ছমছমে এবং ঘুটঘুটে অন্ধকার গুহাটি দেখতে প্রতিদিনই ভিড় জমাচ্ছে ভ্রমণপিপাসু পর্যটকেরা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, জেলার আলীকদম উপজেলার মাতামুহুরি নদী ও তৈন খাল ঘেঁষে দুই পাহাড়ের মাঝে আলীর গুহার অবস্থান। আলীকদম সদর থেকে গাড়িতে তিন কিলোমিটার দূরে তৈন খালের ব্রিজ। সেখান থেকে সিঁড়িপথে নিচে নামার পর পাথুরে পাহাড়ি ছড়াপথে আরও ঘণ্টা খানেকের হাঁটা পথ। বিস্তৃত সবুজ ঘন জঙ্গল, খাড়া পাহাড়ের মধ্যেখানে বয়ে চলা বিপজ্জনক পিচ্ছিল পাথুরে ছড়া, ভয়ঙ্কর মাকড়সার জাল। একবারে গা ছমছমে শিউরে ওঠা পথ। যেন রহস্যের সব হাতছানি আলীর সুড়ঙ্গের পথে পথে। পাথুরে ছড়া থেকে পাহাড়ের চূড়ায় গুহার প্রবেশপথে উঠার জন্য উপজেলা প্রশাসনের তৈরি লোহার দুটি সিঁড়িও রয়েছে। ছড়া থেকে গুহার উচ্চতা দেড়শ থেকে দুইশ ফুটের মত। গুহার ভিতরটা ঘুটঘুটে অন্ধকার। পাহাড়ের মধ্যখানে লম্বা আকৃতির প্রথম গুহাটি প্রায় ১০০ ফুটের মত লম্বা। তার পাশেই আরও ৩টি গুহা রয়েছে। সবগুলো সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য প্রায় একই রকম। টর্চ এবং মোবাইল ফ্লাশ লাইট জ্বালিয়ে গুহার ভিতরটা ঘুরে দেখেন পর্যটকরা। রহস্যময় প্রাচীন প্রাকৃতিক এ সুড়ঙ্গ দেখতে প্রতিদিনই ভিড় জমাচ্ছে ভ্রমণপিপাসু পর্যটকেরা।
বেড়াতে আসা পর্যটক ফারদিন সানি, ফাতেমা তোজ জোহারা বলেন, একুশ জনের ট্যুর গ্রুপের সাথে এসেছি ফরিদপুর থেকে। আল্লাহর অপরূপ সৃষ্টি পাহাড়ের মধ্যখানে সরু পাথুরে ছড়াপথে আলীর গুহা। ভয়ংকর রোমাঞ্চকর একটা ভ্রমণ পথ আলীর গুহার। তবে গুহার এ পান্ত দিয়ে ঢুকে অপরপান্ত দিয়ে বের হবার সাহস হয়নি।
পর্যকট মো. মনোয়ার বলেন, আলীর গুহা দর্শণীয় স্থানে আমি এ পর্যন্ত দুবার এসেছি ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপের সাথে। তবে প্রথমবার এসেছিলাম বর্ষায়, এবার শীতের শুরুতে। আমার কাছে আলীর গুহার সৌন্দর্য একেক সময় একেক রকম মনে হচ্ছে। তবে বর্ষায় আলীর গুহার পথটি বেশি বিপজ্জনক। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ঠিকঠাক রেখে পর্যটকদের যাতায়াতের পথটি আরও সহজ করা হলে পর্যটকদের আনাগোনা আরও বাড়বে। ঝুকিপূর্ণ এ পথে পর্যটকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও আরও জোরদার করার দাবি জানাচ্ছি।
স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ী ও লেখক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আলীর গুহাটি প্রাকৃতিক নাকি কৃত্রিমভাবে মোগল শাসনাআমলে সুড়ঙ্গ খনন করা হয়েছিল বিষয়টি ধূম্রজাল রয়েছে। তবে আলীর সুড়ঙ্গের সৌন্দর্যে মুগ্ধ ভ্রমণপিপাসুরা। দর্শণীয় স্থানটির রক্ষণাবেক্ষণে পর্যটন করপোরেশন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের জরুরি পদক্ষেপ নেয়া দরকার। গুহার পথগুলো ক্রমশ ছোট হয়ে যাচ্ছে, আগের মতো অনায়াসে যাতায়াত করা যাচ্ছে না। গুহায় যাবার আগে তৈন খালের উপরে পাঁকা সেতুর বদলে ঝুলন্ত সেতু নির্মাণ করা হলে পর্যটন শিল্পের বিকাশে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতো।
আলীকদম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাবের মো. সোয়াইব বলেন, পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ও পর্যটকদের সুবিধার্থে পিচ্ছিল পাথুরে ছড়া থেকে গুহার প্রবেশপথে উঠার জন্য উপজেলা প্রশাসন থেকে ২টি লোহার সিঁড়ি করে দেয়া হয়েছে। যাতে ভ্রমণকারীরা সহজে গুহায় যেতে পারে। ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের নিরাপত্তা বিবোচনায় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সমন্বয় করে কাজ করছে।