পতেঙ্গা প্রান্ত নিয়ে ট্রাফিক পুলিশের যত চিন্তা

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পাঁচ কারণ চিহ্নিত করে সিডিএকে চিঠি

হাসান আকবর | শনিবার , ১৮ মে, ২০২৪ at ৬:৩৫ পূর্বাহ্ণ

প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকায় নির্মিত বহুল প্রত্যাশার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হওয়ার আগেই কপালে ভাঁজ পড়েছে পুলিশের। এক্সপ্রেসওয়ের পতেঙ্গা প্রান্তে বড় ধরনের জটলা তৈরির আশংকা করছে ট্রাফিক বিভাগ। কন্টেনার ডিপোর কন্টেনারমুভার, শহর এলাকার বাস, টানেলের গাড়ি এবং পর্যটকদের নিয়ে চতুর্মুখী জটলায় এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের সুফল হুমকির মুখে পড়ার আশংকা করছেন বিশেষজ্ঞরা। সিডিএ বলেছে, পুলিশ মোড়ে কোনো গাড়ি দাঁড়াতে না দিলে যানজট হবে না। টোল প্লাজার ব্যাপারটি খুব সাময়িক বলে মন্তব্য করে সিডিএ বলেছে, সর্বোচ্চ দশ মাস সময়ের মধ্যে টোল প্লাজা ওখান থেকে সরিয়ে নেয়া হবে।

নগরীর যান চলাচলে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে প্রায় সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হয়। ব্যয় হয় প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা। লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত আলহাজ্ব এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ ইতোমধ্যে শেষ পর্যায়ে। র‌্যাম্প এবং লুপ নির্মাণ শেষ না হলেও লালখানবাজার বা টাইগারপাশ থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে গাড়ি চলাচলের উপযোগী হয়ে উঠেছে। এখন প্রতিদিনই বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্তভাবে কিছু গাড়ি চলাচলও করছে। সিডিএ বলেছে, টোল আদায়ের ব্যাপারটি নিশ্চিত করার পর যান চলাচলের অনুমোদন দেয়া হবে। ইতোমধ্যে পতেঙ্গা প্রান্তে অস্থায়ী টোল প্লাজা নির্মাণ করা হচ্ছে। এক্সপ্রেসওয়েতে লাইট স্থাপন এবং স্পিড ব্রেকার স্থাপনের কাজও দ্রুত শেষ করা হচ্ছে। সবকিছু মিলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে শহরের সবচেয়ে বড় এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে যান চলাচল শুরু করার লক্ষ্য নিয়ে এগুচ্ছে সিডিএ। কিন্তু যান চলাচল শুরুর আগেই পতেঙ্গা প্রান্তটি যানজটের কবলে পড়বে বলে আশংকা প্রকাশ করে নগর ট্রাফিক বিভাগ সিডিএকে করণীয় নির্ধারণ করতে একটি চিঠি দিয়েছে। ট্রাফিক বিভাগ পাঁচটি কারণ চিহ্নিত করে সেগুলো সমাধানের জন্য সিডিএকে চিঠি দেয় বলে দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে। সিডিএ এই চিঠির প্রেক্ষিতে নতুন করে ইন্টারসেকশন ডিজাইন করেছে। যা ইতোমধ্যে একনেকের অনুমোদনও পেয়েছে। নতুন ডিজাইন তৈরি হলে যান চলাচলে শৃংখলা ফেরার পাশাপাশি কোনো ধরনের যানজট হবে না বলে সিডিএর পদস্থ কর্মকর্তারা মন্তব্য করেছেন।

ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পতেঙ্গা প্রান্ত অত্যন্ত অপ্রশস্থ রাস্তায় গিয়ে মিলেছে। যেখানে বিমানবন্দর, টানেল এবং আউটার রিং রোডের সাথে সংযুক্ত সড়কগুলো এসে মিলিত হয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি জংশন তৈরি করেছে। এর সাথে যোগ হয়েছে স্থানীয় কন্টেনার ডিপোগুলোর বিশাল বিশাল ট্যাংক লরি এবং শহর এলাকার বাস। বাসে উঠা নামা এবং পতেঙ্গা সৈকতের বিপুল সংখ্যক পথচারী পর্যটক মিলে অপ্রশস্ত ওই জংশনটা যান চলাচলের ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে। এর উপর টোল প্লাজার টোল পরিশোধে গাড়িগুলো যে সময় ব্যয় করবে তাও জটিলতা তৈরি করবে।

ট্রাফিক বিভাগ সিডিএকে দেয়া বেশ আগের চিঠিতে উল্লেখ করেছে যে, ফৌজদারহাট থেকে শুরু হওয়া আউটার রিং রোড শেষ হয়েছে পতেঙ্গা সৈকত সংলগ্ন বঙ্গবন্ধু টানেলে গিয়ে। টানেলের গোল চত্বরের অদূরে বিমানবন্দরমুখী ভিআইপি সড়ক যেখান থেকে শুরু হয়েছে, সেখানেই শেষ হয়েছে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। টানেলের দিক থেকে যেসব পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও লরি ভিআইপি সড়ক হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন জেটিতে চলাচল করে, সেগুলো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মোড় ঘুরেই যাতায়াত করছে। এসব যানবাহন ঘুরার জন্য যে ক্রসিং রাখা হয়েছে, তা এক্সপ্রেসওয়ের শেষ প্রান্তের ১৫ থেকে ২০ গজের মধ্যে। এছাড়া ওই চত্বরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নিচ থেকে বিপরীতমুখী সড়কটি ধরে শহরমুখী যাত্রীবাহী বাসসহ অন্যান্য যানের চলাচল রয়েছে।

পুলিশের পক্ষ থেকে সমস্যাটি সমাধানে চারটি পরামর্শ দেয়া হয়েছে। পুলিশ বলেছে, পর্যটক ও দর্শনার্থীদের বহনকারী গাড়ির জন্য আলাদা টার্মিনাল নির্মাণ, পর্যটক ও দর্শনার্থীদের পারাপারের জন্য দুটি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ, মূল সড়কের পাশে প্রশস্ত ফুটপাত নির্মাণ করে বেড়া দিয়ে মূল সড়কে মানুষের প্রবেশ বন্ধ করা।

সিডিএর পদস্থ একজন কর্মকর্তা গতকাল বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা পুলিশ, সিটি কর্পোরেশন এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগ মিলে বৈঠক করেছি। আমরা বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে নতুন করে ইন্টারসেকশন ডিজাইন করেছি। ডিপিপি করেছি। একনেকে পাশ হয়েছে। ইন্টারসেকশন বাস্তবায়নের কাজ শেষ হলে আর কোনো যানজট হবে না।

টোল প্লাজার ব্যাপারটি পুরোপুরি অস্থায়ী বলে সিডিএর প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমান গতকাল দৈনিক আজাদীকে জানান। তিনি বলেন, আমাদের র‌্যাম্পগুলোর নির্মাণকাজ শেষ হলেই টোল প্লাজা ওখান থেকে সরে যাবে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ১৪ নভেম্বর এক্সপ্রেসওয়ের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে অস্থায়ী টোল প্লাজা নির্মাণ এবং টোলের গেজেট প্রকাশ হলেই আগামী মাস খানেকের মধ্যে এটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার কথা রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতাপপ্রবাহ : আরো দুই দিনের সতর্কবার্তা
পরবর্তী নিবন্ধজানতাম না এত বড় দায়িত্ব নিতে হবে : শেখ হাসিনা