রাঙ্গুনিয়ায় অনাবাদি পতিত জমিতে পারিবারিক পুষ্টি বাগান জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। উপজেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের কারিগরি সহযোগিতায় এসব বাগান গড়ে তোলেছেন স্থানীয় দরিদ্র কৃষকরা। ২০১৫–১৬ সাল থেকে অদ্যাবধি উপজেলার কয়েক সহস্রাধিক পরিবারে এই বাগান গড়ে তোলা হয়েছে। এতে এসব পরিবারে প্রতিদিনের পুষ্টি চাহিদা যেমন মিটছে ঠিক একইভাবে সবজি বাজারে বিক্রি করে বাড়তি টাকা আয়েরও সুযোগ পাচ্ছেন তারা।
উপজেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ‘পারিবারিক পুষ্টি বাগান’ প্রকল্পের আওতায় পতিত জমিতে পুষ্টি বাগান গড়তে পারিবারগুলোকে বিনামূল্যে চারা–বীজ দেয়া হয়। এছাড়া মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় সার দেয়া হয়। এমনকি বীজ সংরক্ষণের পাত্রের পাশাপাশি ঘেরাবেড়ার জন্য একটি নেটও দেওয়া হয়। কৃষক পরিবারের সদস্যরা এসব বীজ দিয়ে বাড়ির উঠান ও আশপাশের খালি জায়গায় সবজি চাষ করেন। সেখান থেকে উৎপাদিত ফল ও সবজি পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করে তারা বাড়তি টাকা আয় করছেন।
কাটাখালী এলাকার কৃষক মো. নুর উদ্দিন তার বাড়ির সামনের পতিত জায়গায় কৃষি অফিসের পরামর্শে কালিকাপুর মডেলে সবজি চাষ করে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করে আসছেন। এতে নিজের পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাইরেও বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন তিনি। সরেজমিনে তার বাগানে গিয়ে দেখা গেছে, তিনি তার বাড়ির আঙ্গিনায় মাত্র এক শতক পতিত জমিতে এক মিটার বাই তিন মিটার সাইজের মোট পাঁচটি বেড করেছেন। প্রতিটি বেডের মাঝখানে ও চারপাশে ২৫ সেন্টিমিটার করে নালা রাখা হয়েছে। এসব বেডে টমেটো, বেগুন, মরিচ, ফুলকপি ও বাধাকপি লাগিয়েছেন। সাথে প্রতিটি বেডে তিনি লালশাক, কলমিশাক, সরিষাশাক, পালংশাক দিয়েছেন। এসব শাক ইতোমধ্যে খাওয়ার উপযুক্ত হয়েছে। তিনি নিজে খেয়ে বাজারেও বিক্রি করছেন।
কৃষক নুর উদ্দিন বলেন, কয়েক বছর ধরেই আমার নিজ এলাকায় প্রথম আমরা কয়েকজন এই পারিবারিক পুষ্টি বাগান করেছি। এখন আমাদের মতো আশেপাশের অনেক কৃষক পরিবার এই বাগান গড়ে তোলে সবজির চাহিদা মেটাচ্ছেন।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পারিবারিক পুষ্টি বাগান প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে বিভিন্ন বসতবাড়ির অকেজো কিংবা পতিত জমি আবাদের আওতায় এসেছে। পদুয়ার বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম বলেন, কৃষি অফিস থেকে সার, নেট ও ৭ প্রকারের সবজির বীজ দিয়েছে। তাদের পরামর্শে বাড়ির উঠানে ও পাশের ফাঁকা জায়গায় বাগান তৈরি করেছি। আমি এই বাগান থেকে পাওয়া সবজি থেকে আমার নিজের ও পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করি। এরপর বাকি থাকা সবজি বাজারে বিক্রি করি। এতে বাড়তি টাকা আয় হচ্ছে। সরফভাটা এলাকার রুমি আক্তার বলেন, বাড়ির পাশে কিছু জায়গা দীর্ঘদিন ধরে পতিত ছিল।
সেই পতিত জায়গায় কৃষি অফিসের সহযোগিতায় সবজির বাগান করেছি। এই বাগান করার পর থেকে আমার বাজার থেকে কোনো শাক সবজি কেনার প্রয়োজন হয়নি। অতিরিক্ত সবজি বাজারে বিক্রি করেছি। আমাদের পুষ্টি বাগানের সবজি বিষমুক্ত হওয়ায় বাজারে চাহিদাও অনেক বেশি। আমার আশপাশের লোকজনও বাড়িতে এসে সবজি কিনে নিয়ে যান।
এ বিষয়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা উত্তম কুমার বলেন, বসত বাড়ির আঙ্গিনায় নিরাপদ সবজি উৎপাদনের জন্য স্থানীয় বেশ কিছু কৃষক যত্ন সহকারে পারিবারিক পুষ্টি বাগান গড়ে তুলে লাভবান হচ্ছেন। শুধু এই স্থানেই নয়, ২০১৫–১৬ সাল থেকেই উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কয়েক সহস্রাধিক কৃষক এই বাগান গড়ে অনাবাদি জমিকে আবাদের আওতায় এনে লাভবান হচ্ছেন।
এই পদ্ধতি এখন রাঙ্গুনিয়ায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস বলেন, পারিবারিক পুষ্টি বাগানের ফলে লাভবান হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। ফলে অনাবাদি বসতবাড়ির আঙ্গিনা আবাদের আওতায় আসছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ‘এক ইঞ্চি জায়গাও খালি রাখা যাবে না’ মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে চাষাবাদে আগ্রহী হয়ে ওঠছেন রাঙ্গুনিয়ার সাধারণ মানুষ। কৃষি অফিস তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়ে আসছে।