পড়ে আছে ট্রফি-মেডেল নেই শুধু রাহাত

বড় ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন ছিল ছেলেটির

ক্রীড়া প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার , ১ মে, ২০২৫ at ৫:২২ পূর্বাহ্ণ

রাহাত খান সম্পর্কে ব্রাদার্স ক্রিকেট একাডেমির জুনিয়র কোচরা হেড কোচ মোমিনুল হকের কাছে প্রায়ই একটি অভিযোগ করতেন। সে অভিযোগটি হচ্ছে রাহাতকে বল ডিফেন্স করতে বললে সে আরও জোরে জোরে মারে। কিছু বললে সে বলে, ‘মোমিন স্যার বলেছেন বল জোরে জোরে মেরে সীমানার বাইরে পাঠাতে।’ অথচ মাত্র ১২ বছর বয়সের সেই রাহাত খান চলে গেল জীবনের সীমানার বাইরে। ক্রিকেট মাঠের ২২ গজকে ঘিরে ছোট মানুষটির কত বড় স্বপ্নই না ছিল।

ব্রাদার্স ক্রিকেট একাডেমির হয়ে দুই বছর আগে খেলেছিল অনূর্ধ্ব১০ ক্রিকেট কার্নিভ্যালে। সেখানে রাহাত চেনায় তার জাত। একজন উইকেট কিপারব্যাটসম্যান হিসেবে উইকেটের সামনে এবং পেছনে সমান পারদর্শী ছিল সে। বড় বড় ছক্কা মেরে তামিম ইকবালের মত দেশ সেরা ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখতো। কিন্তু নিয়তির কি নির্মম পরিহাস। একজন ক্ষুদে ক্রিকেটার হিসেবে অর্জন করা মেডেল, ট্রফি, সনদ সেই সাথে ব্যাট, গ্লাভস, হেলম্যাট, প্যাড সবই সাজানো আছে শোকেসে। কিন্তু ঘর আর বাইরে আলোকিত করে রাখা সেই রাহাত নেই বাবা লেয়াকত আলীর ঘরে।

প্রায় ৫৬ বছর ধরে কোচ মোমনিুল হকের ব্রাদার্স ক্রিকেট একাডেমিতে ক্রিকেট শিখছে রাহাত। মাঠের পারফরম্যান্স আর মাঠের বাইরে তার সদাচরণ একাডেমির সবার মন জয় করেছিল। গতকাল কোচ মোমিনুল বলছিলেন, এমন মেধাবী ক্রিকেটার আমি খুব কম দেখেছি। অনূর্ধ্ব১০ ক্রিকেট ফেস্টিভ্যালে রাহাত আমাদের একাডেমির অধিনায়ক ছিল। পারফরম্যান্সও ছিল ঠিক অধিনায়কের মত। আর কিছুদিন পর চট্টগ্রামে শুরু হচ্ছে মেয়র কাপ অনূর্ধ্ব১৪ ক্রিকেট টুর্নামেন্টে। সেই টুর্নামেন্টের জন্য একাডেমির দলেও ছিল রাহাত। কিন্তু এখন তাকে ছাড়াই তার সহপাঠীদের মাঠে নামতে হবে। উইকেটের পেছন থেকে রাহাত আর বোলারদের বলবে নাবলটা সোজা কর, জায়গায় বল ফেলো।

ক্রিকেট নিয়ে কতই না স্বপ্নই ছিল এই শিশুর। একদিন বড় ক্রিকেটার হবে। যে মা তাকে হাত ধরে সেই চান্দগাঁও থেকে আউটার স্টেডিয়াম পর্যন্ত নিয়ে আসতো, আবার নিয়ে যেতো সে মাকে বড় হয়ে আর কষ্ট দেবে না। যেদিন বড় ক্রিকেটার হবে সেদিন সে মাকে বিমানে চড়াবে। যেমনটি এখনকার ক্রিকেটাররা করছেন। স্বপ্ন দেখতো একদিন জাতীয় দলে খেলবে। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল দুষ্ট বন্ধুদের কারণে।

রাহাতের পাড়ার ছেলে নাঈম ইসলাম। তিনি এখন খেলছেন জাতীয় দলে। তাকে দেখেই হয়তো স্বপ্ন দেখতো জাতীয় দলে খেলার কিংবা বড় ক্রিকেটার হওয়ার। তার কোচরা জানিয়েছেন, অনুশীলনে রাহাত সবসময় থাকতো বেশ সিরিয়াস। অনূর্ধ্ব১০ ক্রিকেট কার্নিভ্যালে দুটি হাফ সেঞ্চুরি করার কৃতিত্ব দেখানো রাহাত আক্ষেপ করতো একটি সেঞ্চুরি করতে না পারার। কোচরা তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলতো তুমি অনেক বড় ক্রিকেটার হবা। তোমাকে অনেক দিন খেলতে হবে। তখন বড় বড় সেঞ্চুরি করবা। সে স্বপ্ন সবসময় দেখতো রাহাত। কিন্তু স্কুলের সহপাঠীরা তার সে স্বপ্নকে যেন গলা টিপে হত্যা করে দিল।

ব্রাদার্স ক্রিকেট একাডেমির ছাত্ররা সারা বছরের মত আজও অনুশীলন করবে। কালও করবে। কিংবা করতেই থাকবে। কিন্তু তারা পাশে পাবে না প্রিয় সহপাঠী রাহাতকে। নগরীর আউটার স্টেডিয়ামের নেটে উইকেটের সামনে আর পেছন থেকে ব্যাটার আর বোলারদের উদ্দেশ্যে রাহাত খানের নানা পরামর্শ আর ভেসে আসবে না। কারণ বল সীমানার ওপারে পাঠানোর মত নিজেই যে চলে গেল জীবনের ওপারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধযুদ্ধের হুমকি যেখানে ঘিরে থাকে, সেখানে প্রস্তুতি না নেয়া আত্মঘাতী : প্রধান উপদেষ্টা
পরবর্তী নিবন্ধকর্ণফুলীতে মিলল স্কুলছাত্রের লাশ, ৪ সহপাঠী গ্রেপ্তার