পটিয়াবাসীর কাঙ্ক্ষিত ‘পটিয়া উপজেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্প’ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পেয়েছে। ১ হাজার ১৫৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকার এই প্রকল্প পটিয়ার ইতিহাসে সর্ববৃহৎ। গতকাল মঙ্গলবার একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই প্রকল্পের অনুমোদন দেন। হুইপ সামশুল হক চৌধুরী বলেছেন, এটা পটিয়াবাসীর জন্য প্রধানমন্ত্রীর ঈদের উপহার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সাড়ে ১৩ হাজার হেক্টর জমি চাষাবাদের আওতায় আসবে। পটিয়া পৌরসভাসহ উপজেলার ১২ ইউনিয়নের কয়েক লাখ মানুষ জলাবদ্ধতা নিরসন, ভাঙন রোধ ও সেচ সুবিধা পাবে। এছাড়া ২৬টি ছোট-বড় খালের মুখে রেগুলেটর বসবে। ২৫ দশমিক ৫১০ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হবে। ১১টি খালের ৩০ দশমিক ২০০ কিলোমিটার পুনঃখনন করা হবে। ৪ দশমিক ১০ কিলোমিটার ফ্লাড ওয়াল নির্মাণ করা হবে। ২ দশমিক ৯৫০ কিলোমিটার নদী-খালের তীর সংরক্ষণ করা হবে।
চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (ডিভিশন-১) তয়ন কুমার ত্রিপুরা জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পুরো উপজেলায় এক প্রকার নিরাপত্তা প্রাচীর তৈরি হবে। এতে বর্ষাকালে রেগুলেটরের মাধ্যমে অতিরিক্ত পানি প্রবেশ রোধ করা হবে। তেমনি খাল খননের মাধ্যমে শুষ্ক মৌসুমে চাষাবাদের জন্য পর্যাপ্ত পানি সেচের সুযোগ তৈরি হবে। শিকলবাহা, মুরালী, বোয়ালখালী খালের বাম তীর ও চানখালী খালের ডান তীরে বাঁধ নির্মাণ, পানি নিয়ন্ত্রণ ও সেচ কাঠামো নির্মাণ হলে জলাবদ্ধতা ও লবণাক্ততার হাত থেকে বসতবাড়ি, কৃষি জমি ও সরকারি-বেসরকারি নানা স্থাপনা রক্ষা পাবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে আশিয়া, হাবিলাসদ্বীপ, ধলঘাট, বড়লিয়া, দক্ষিণ ভূর্ষি, জঙ্গলখাইন, নাইখাইন, ভাটিখাইন, ছনহরা, কচুয়াই, হাইদগাঁও, কেলিশহর ইউনিয়নের কয়েক লাখ মানুষ উপকৃত হবে। পরিবেশ ও প্রতিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হবে। পাশাপাশি বাঁধটি সড়ক হিসেবে ব্যবহার উপযোগী করে নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নতি হবে।
প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদনের পর ফেসবুকে এক প্রতিক্রিয়ায় পটিয়ার সংসদ সদস্য হুইপ সামশুল হক চৌধুরী লিখেছেন, ‘ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জাতির পিতার কন্যা, দেশরত্ন শেখ হাসিনা। আপনি আমার পটিয়ায় দেখা স্বপ্ন ও পরিশ্রমকে আজ বাস্তবে রূপান্তরিত করলেন।’
এ ব্যাপারে হুইপ সামশুল হক চৌধুরী আজাদীকে বলেন, আজকে আমার এবং পটিয়াবাসীর সবচেয়ে খুশির দিন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে সমগ্র পটিয়াবাসীর পক্ষ থেকে অভিনন্দন এবং কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী পটিয়ার জনগণকে ভালোবেসে, পটিয়ার উন্নয়নে ঈদের উপহার হিসাবে সর্ববৃহৎ প্রকল্পটি একনেকে আজ (গতকাল) অনুমোদন দিয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে এবং পটিয়াবাসীকে কৃতজ্ঞতা পাশে আবদ্ধ করেছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, পটিয়ার ১৫টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া শিকলবাহা থেকে চানখালী পর্যন্ত ২৬টি খালের এক পাশে বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে পটিয়া উপজেলাকে বন্যার ক্ষতি থেকে নিরাপদ করার লক্ষ্যে এ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, পটিয়া উপজেলার আশিয়া, কাশিয়াইশ, হাবিলাসদ্বীপ, দক্ষিণ ভূর্ষি, ধলঘাট, বড়লিয়া, জঙ্গলখাইন, ভাটিখাইন, কুসুমপুরা, জিরি, হাইদগাঁও, ছনহরা, কচুয়াই, কেলিশহর ও পটিয়া পৌরসভা এলাকায় জোয়ার-ভাটাজনিত জলাবদ্ধতা ও লবণাক্ততা সমস্যায় জর্জরিত। এসব ইউনিয়নের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় বর্ষাকালে পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হয়ে সৃষ্ট বন্যায় ব্যাপক ফসলহানি হয়। আবার শুষ্ক মৌসুমে ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানি সংকটে কৃষিকাজ ব্যাহত হয়। প্রকল্পের মাধ্যমে এই সমস্যা নিরসন হবে বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পটিয়া উপজেলার চতুর্দিকে মেরিন ড্রাউভ, স্লুইচগেট, বেড়িবাঁধ ও খাল খননসহ পুরো পটিয়া বন্যা ও দুর্যোগ থেকে সুরক্ষিত থাকবে।
গতকাল একনেক সভায় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যে দুটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়, তার মধ্যে পটিয়ার প্রকল্পটিও রয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদকাল ধরা হয়েছে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত।