চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়া পৌর সদরের শ্রীমাই ব্রিজ এলাকায় দূর্গন্ধযুক্ত দীর্ঘ ময়লার ভাগাড় গড়ে উঠেছে। এতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি স্কুল কলেজ মাদ্রাসা ও মহাসড়ক দিয়ে যাতায়াতরত শত শত পরিবহনের যাত্রীরা মারাত্মক দুর্গন্ধের শিকার হচ্ছে। এক পাশে পাহাড়ের মতো আবর্জনা, অন্যপাশে দুর্গন্ধে হাঁসফাঁস করছে মানুষ। দেখে মনে হয় মহাসড়ক নয়, এ যেন একটি ময়লার পাহাড়!
দীর্ঘ এ ময়লার ভাগাড়ে প্রতিনিয়ত কাক, কুকুরসহ বিভিন্ন প্রাণী ময়লাগুলো বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিচ্ছে। ফলে ভাগাড়ের প্লস্টিক ও পলিথিনে দিন দিন বেড়েই চলেছে এই ‘অস্থায়ী ডাম্পিং’। এর কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে জনজীবন। ঝুঁকিতে রয়েছে জনস্বাস্থ্য ও কৃষিসহ স্থানীয় প্রাণ প্রকৃতি।
পটিয়া পৌরসভা প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ৩৫ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো কোনো নির্ধারিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি। ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত এই পৌরসভা কর্তৃপক্ষের অন্যতম ব্যর্থতা হিসেবে প্রতীয়মান এ বিষয়টি। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য নির্ধারিত কোনো ডাম্পিং না থাকায় বিপাকে পড়েছেন পৌরসভার বাসিন্দারা। বছরের পর বছর ধরে পৌরসভার ময়লা আবর্জনা মহাসড়কের ধারে ফেলা হচ্ছে। ব্যস্ততম এলাকায় এভাবে ময়লা ফেলায় ছড়াচ্ছে রোগজীবাণু, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। দীর্ঘ ৩৫ বছরে কোন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে না উঠাকে বিগত পৌর মেয়রদের অবহেলা ও আন্তরিকতার অভাবকে দায়ী করে স্থানীয়রা জানান, ৩৫ বছরে একটি পৌরসভায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে না পারা বিগত মেয়রদের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা। এ ব্যর্থতার দায় দায়িত্ব বিগত কোন মেয়র বা পৌর চেয়ারম্যানরা এড়াতে পারে না।
পটিয়া পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, পটিয়া পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ড থেকে প্রতিদিন শত টন ময়লা সংগ্রহ করা হয়। তারপর এগুলো ট্রাকে করে ফেলা হয় মহাসড়কের বাহুলীতে। এখানে এভাবে ময়লা ফেলার প্রতিবাদে স্থানীয় লোকজন বারবার মানববন্ধনও করেছে। পৌরসভা জনবসতিপূর্ণ এলাকার বাইরে ভাগাড় তৈরি করতে পারেনি।
সরেজমিন শ্রীমাই ব্রিজ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মহাসড়কের একপাশ দখল করে রাখা হয়েছে ময়লার স্তূপ। যানবাহনে চলাচলরত যাত্রীদের নাক চেপে ধরতে হচ্ছে। দুর্গন্ধে অনেকে অস্থির হয়ে পড়ছেন। পাশাপাশি থাকা চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রেলপথ দিয়েও প্রতিদিন পর্যটকরা যাচ্ছেন কক্সবাজারে। তাদেরও সঙ্গী হচ্ছে দুর্গন্ধ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পটিয়া পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানুর রহমান বলেন, ময়লা ফেলার জন্য পৌরসভার নির্দিষ্ট জায়গা নেই। নানা জটিলতায় এখনই এ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। আশা করছি, এই সমস্যার সমাধান হবে। সম্প্রতি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র সচিব এ বিষয়ে একটি প্রকল্প দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পটিয়া পৌরসভার ডাম্পিং স্টেশন গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ মুছা বলেন, বছরের পর বছর রাস্তার পাশে ময়লা ফেলা হচ্ছে। দুর্গন্ধে স্বাভাবিকভাবে চলাচল করা যায় না। এতে পরিবেশের মারাত্মক দূষণ হচ্ছে। পৌরকর্তৃপক্ষ এ বিষয়টি দ্রুত ব্যবস্থা ও সমাধান না করলে পৌরবাসির জন্য বর্জ্য একটি অভিশাপে রূপ নিবে। সিএনজি চালক রহিমের অভিযোগ, যাত্রী নিয়ে এ রাস্তা ধরে যাওয়া যায় না। দুর্গন্ধে অনেকে বমি করে দেন, অসুস্থ হয়ে পড়েন।
অর্ধকিলোমিটার দূরেই রয়েছে পটিয়া সরকারি কলেজ, পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয় ও এস আলম স্কুল অ্যান্ড কলেজ। প্রতিদিন এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা দুর্গন্ধের শিকার হচ্ছেন। পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আবু তৈয়ব জানান, মহাসড়কের ধারে ময়লার স্তূপের কারণে বাতাসে জীবাণু ছড়ায়। এতে শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা ও অ্যালার্জিসহ নানা রোগের ঝুঁকি বাড়ছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কল্পনা রহমান বলেন, আবর্জনা থেকে ক্ষতিকর উপাদান বৃষ্টির পানিতে মিশে খালে গিয়ে পড়ে। সেই পানি দিয়ে সেচ করলে ফসল উৎপাদনে ক্ষতি হয়।