পটিয়ায় দুই ইউপি চেয়ারম্যানের অনুসারীদের মধ্যে গোলাগুলি

সিএনজি টেক্সি স্টেশনের আধিপত্য নিয়ে বিরোধ

পটিয়া প্রতিনিধি | সোমবার , ১০ জুন, ২০২৪ at ৭:৩৬ পূর্বাহ্ণ

পটিয়ায় একটি সিএনজি টেক্সি স্টেশনের আধিপত্য নিয়ে বিরোধের জের ধরে দুই ইউপি চেয়ারম্যানের অনুসারীদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে বর্তমানে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এর জেরে গত শনিবার বিকেল ৩টার দিকে উপজেলার মনসা বাদামতল এলাকায় দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেয়। এসময় দুই রাউন্ড গুলিবর্ষণ ও কয়েকটি বসতঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয় বলে স্থানীয় লোকজন জানান। সিএনজি টেক্সি স্টেশনের আধিপত্য নিয়ে দ্বন্দ্ব হওয়া এক পক্ষ হাবিলাসদ্বীপ ইউপি চেয়ারম্যান ফৌজুল কবির কুমার ও অপরপক্ষ জঙ্গলখাইন ইউপি চেয়ারম্যান সাহাদাত হোসেন সবুজের অনুসারী বলে জানা যায়। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মনসা বাদামতল এলাকায় সিএনজি টেক্সি স্টেশনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এর জেরে শনিবার দুপুরে স্থানীয় সিএনজি টেক্সি সমিতির সভাপতি মো. ফোরকানের সাথে স্থানীয় মহিউদ্দিন ও এরফানের মারামারির ঘটনা ঘটে। ফোরকানকে মারধরের খবর পেয়ে তার গ্রামের স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থল বাদামতল মোড়ে এলে দুগ্রুপের মধ্যে ধাওয়াপাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ ও কয়েকটি বসতঘরে হামলা চালিয়ে জানালার গ্লাস ও টিনের দরজা ভাঙচুর করা হয়। ঘটনার পর পর পটিয়া থানা পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। পরে হাবিলাসদ্বীপ ইউপি চেয়ারম্যান ফৌজুল কবির কুমার ও জঙ্গলখাইন ইউপি চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সবুজ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এর মধ্যে মহিউদ্দিন ইউপি চেয়ারম্যান সাহাদাত হোসেন সবুজ এবং মো. ফোরকান ইউপি চেয়ারম্যান ফৌজুল কবির কুমারের অনুসারী।

আহত সিএনজি টেক্সি সমিতির সভাপতি ফোরকান জানিয়েছেন, স্থানীয় মহিউদ্দিন সিএনজির চালক বা মালিক না হয়েও দীর্ঘদিন ধরে সমিতি নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল। সমিতির নামে প্রত্যেক সিএনজি টেক্সি থেকে দীর্ঘদিন ধরে সে তাহের নামের এক চালককে দিয়ে চাঁদা তুলে আসছিল। এ চাঁদা থেকে বাদামতল মোড়ে একটি মসজিদ পরিচালনা করা হলেও দীর্ঘদিন ধরে এর কোনো হিসাব নেই। আমাকে সম্প্রতি সমিতির সদস্যরা সভাপতি করে নতুন কমিটি গঠন করলে মহিউদ্দিন আমার বিরুদ্ধে নানাভাবে ষড়যন্ত্র শুরু করে। এর জেরে মহিউদ্দিন ও তার ভাই এরফান বেলা ১১ টার দিকে বাদামতল এলাকায় আমাকে মারধর করে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহিউদ্দিন বলেন, বাদামতল মোড়ে আমার একটি দোকান রয়েছে। দোকানের অপর প্রান্তে সিএনজি টেক্সি সমিতির সদস্যরা একটি মসজিদ পরিচালনা করে আসছিল। তারা দৈনিক হারে চাঁদা তুলে একটি অংশ সমিতির সদস্যদের কল্যাণে ও বাকি টাকা দিয়ে মসজিদের ইমামের বেতন ও খরচ বহন করত। তারা মসজিদের যে খরচের টাকা তা আমার কাছে রক্ষিত রাখত। আমি ইমামের বেতন দিতাম। সম্প্রতি বাদামতল মোড় থেকে পটিয়া লাইনে আলাদা সমিতির নামে স্থানীয় বখতিয়ার উদ্দিন জুয়েল ও মো. ছৈয়দ চাঁদা তুলতে চাইলে আমি ড্রাইভারদের চাঁদা দিতে নিষেধ করি। এ নিয়ে একটি চক্র আমার বিরুদ্ধে লেগেছে। এ নিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে মো. ফোরকান আমার ভাইয়ের সাথে ঝগড়া করে। পরবর্তীতে লোকজন নিয়ে আমার ঘরসহ স্থানীয় কয়েকটি ঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে।

হাবিলাসদ্বীপ ইউপি চেয়ারম্যান ফৌজুল কবির কুমার বলেন, সিএনজি টেক্সি সমিতির নামে চাঁদা তোলা হলে সেটা সমিতির কল্যাণে ব্যয় হবে। তারা মসজিদ পরিচালনা করুক, যাই করুক এটি তাদের ব্যাপার। বাইরের লোক কেন সিএনজি সমিতি থেকে চাঁদা তুলবে। সমিতির দেখভাল সমিতির লোকজন করবে। এ নিয়ে বিরোধের জেরে আমার চাচাতো ভাই ফোরকানকে মহিউদ্দিন ও তার ভাই এরফান মারধর করেছে। এ কারণে এলাকার লোকজন তার প্রতিবাদ করতে আসলে দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়াপাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

জঙ্গলখাইন ইউপি চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সবুজ বলেন, মহিউদ্দিনের দোকানের সামনে সিএনজি রাখাকে কেন্দ্র করে তার ভাই এরফানের সাথে সিএনজি সমিতির সভাপতি ফোরকানের ঝগড়া হয়। এ নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। এখানে সমিতির নামে চাঁদা কেন তোলা হয় তা আমি কিছুই জানি না। এ চাঁদা দিয়ে কি হয় তাও আমি জানি না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পটিয়া থানার উপ পরিদর্শক মো. আকরাম বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে আমরা দুই চেয়ারম্যানকে দুই পক্ষে অবস্থান নিতে দেখেছি। সিএনজি স্টেশনের নিয়ন্ত্রণ ও চাঁদা তোলাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি। রাত ৯টা পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো পক্ষ অভিযোগ দেয়নি। হয়তো কেউ না কেউ অভিযোগ দিতে আসবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশিশু ওয়াসিম হত্যা মামলায় একজনের মৃত্যুদণ্ড
পরবর্তী নিবন্ধছুরিকাঘাতে যুবকের মৃত্যু