পটিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সাথে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা কর্মীদের দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
এ ঘটনায় আন্দোলনকারী ছাত্র, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ৩৫জন কর্মী ও পথচারীসহ প্রায় অর্ধশতাধিক আহত হয়। এর মধ্যে প্রায় ২৫জন গুলিবিদ্ধ হয়। বিক্ষোভকারীরা ১১টি মোটর সাইকেল ও ৫–৬টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এতে পটিয়া রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে কোনো পুলিশ সদস্যকে দেখা যায়নি। এদিকে ঘটনার সময় পটিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর রাজনৈতিক কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়। সেখানে গরীব–দুস্থদের জন্য সংরক্ষিত প্রায় ৪ শতাধিক কম্বল লুটপাট করা হয় বলে আজাদীকে জানিয়েছেন সাবেক এই সংসদ সদস্য।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মুন্সেফ বাজার এলাকা ও পরে উপজেলা এলাকায় ছন্দ সিনেমা হলের গলি থেকে মুহুর্মুহু গুলির শব্দ শোনা যায়। এসময় বেশ কিছু ছাত্রকে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত অবস্থায় স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে দেখা যায়। গুরুতর আহত ৪ ছাত্রকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে ছাত্র আন্দোলনের এক দফার সাথে সংহতি জানিয়ে মাঠে নেমেছে আল জামিয়া আল ইসলামিয়া জমিরিয়া কাসেমুল উলুম মাদ্রাসার ছাত্ররা।
এর আগে সকাল ১০টায় উপজেলা পরিষদের সামনে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি স্থানীয় এমপি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি শান্তি সমাবেশের আয়োজন করা হয়। শিক্ষার্থীদের একটি মিছিল সমাবেশের কাছাকাছি পৌঁছালে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। সমাবেশ স্থল থেকে এমপি মোতাহের পার্শ্ববর্তী একটি প্রাইভেট হাসপাতালে আশ্রয় নিলে সেখানে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ব্যাপক হামলা ভাঙচুর চালায়। এতে হাসপাতালটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, হেফাজত, জামায়াত–শিবির ও বিএনপি স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বিচারে হামলা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করছে। আমার কার্যালয়ের আসবাব পত্র, গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র, দলীয় নেতাকর্মীদের মোটর সাইকেলসহ ১৫টির মত গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়।
বিক্ষোভকারী ছাত্রদের অভিযোগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা তাদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিলে দফায় দফায় নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে অর্ধশত নিরপরাধ ছাত্র গুলিবিদ্ধ হয়। এরপর বিক্ষুদ্ধ ছাত্ররা হামলাকারীদের অবস্থান চিহ্নিত করে হামলা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল সকাল ১০ টায় মাদ্রাসার ছাত্ররা প্রথমে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়া সদরের ডাকবাংলো মোড়ে অবস্থান নেয়। দুপুর ১২ টায় তারা মিছিল নিয়ে মহাসড়ক অতিক্রম করে মুন্সেফবাজার এলাকায় পৌঁছালে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ–ছাত্রলীগ কর্মীরা বিক্ষোভরত মাদ্রাসার ছাত্রদের ওপর হামলা চালায়। এসময় মাদ্রাসার ছাত্ররাও পাল্টা হামলা চালালে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণের ঘটনাও ঘটে। পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা প্রায় ১৬টি মোটরসাইকেল জ্বালিয়ে দেয়। এসময় পত্রিকাবাহী হকার মামুনের একটি বাইসাইকেলও জ্বালিয়ে দেয়া হয়। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা উপজেলা গেটের সম্মুখে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর ব্যক্তিগত কার্যালয়ে হামলা–ভাঙচুর চালিয়ে আসবাবপত্রে আগুন ধরিয়ে দেয়। বিক্ষুব্ধরা এমপির বহুতল ভবনের একটি বেসরকারি ব্যাংক ও বেসরকারি হাসপাতালে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। সেখানে আওয়ামী লীগের সমাবেশস্থলে রাখা দুইশতাধিক চেয়ারও ভাঙচুর করে।
হামলার সময় আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সন্তোষ বড়ুয়া (৭৫), মাদ্রাসার ছাত্র আতিকুল ইসলাম (২৩), আবদুল্লাহ মাহমুদ (২২), ওসমান (২০), পথচারী বোরহান (২৮), জালাল (৫৫), আরাফাত (২৫)সহ প্রায় ৩৫ জন। এছাড়াও ইটপাটকেল নিক্ষেপে আহত হয়েছে প্রায় অর্ধশত। কওমী মাদ্রাসার ছাত্ররা থানা ভবন ঘেরাও করে। এসময় নিরাপত্তা রক্ষায় থানার প্রধান ফটক বন্ধ থাকায় আন্দোলনকারীরা থানা ভবনে ঢুকতে পারেনি।
পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক সুচিতা দেব জানান, আহত দুইজনের শরীর থেকে বুলেট বের করা হয়।
পটিয়া থানার ওসি জসীম উদ্দিন জানান, পুলিশের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রধান ফটক বন্ধ রাখা হয়। এতে পুলিশ কাউকে বাধা দেয় নি।
পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র অধ্যাপক হারুনুর রশিদ জানান, হামলাকারীদের প্রতিহত করতে গিয়ে তাদের কয়েকজন কর্মী আহত হয়েছেন।
এদিকে, বিকেল ৫ টার দিকে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসায় চলে গেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন পটিয়ার সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দিদারুল আলম দিদার, পৌরসভার মেয়র আইয়ুব বাবুল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক হারুনুর রশিদ, উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজেদা বেগম প্রমুখ।