‘পকেটে করে ৫-৬ হাজার কোটি টাকা সরানো যায় না’

ফ্লাইট এক্সপার্ট কাণ্ডে মামলা ৩ কর্মচারীর জামিন নাকচ, মালিকের খোঁজ নেই

আজাদী ডেস্ক | সোমবার , ৪ আগস্ট, ২০২৫ at ৮:১৭ পূর্বাহ্ণ

অনলাইনে উড়োজাহাজের টিকেট বুকিংয়ের প্ল্যাটফর্ম ফ্লাইট এক্সপার্টের মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে গ্রাহকের টাকা মেরে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার তিন কর্মীর জামিন আবেদন নাকচ করে দিয়েছে আদালত। গতকাল রোববার জামিন আবেদনের ওপর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামি পক্ষের আইনজীবীদের শুনানির পর আদালত বলেন, ৬ হাজার কোটি এক/দুই দিনে আত্মসাৎ করা যায় না। তারা দীর্ঘদিন ধরে চাকরি করেন। পাঁচছয় হাজার কোটি তো হঠাৎ করে পকেটে করে নিয়ে যেতে পারে না। এর দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। বিষয়টা তদন্তসাপেক্ষ। জামিন নামঞ্জুর, আসামিরা কারাগারে যাবে। আগের দিন শনিবার রাতে মামলা হওয়ার পর পুলিশ ফ্লাইট এক্সপার্টের তিনজন কর্মীকে গ্রেপ্তার করে। তারা হলেন কোম্পানির হেড অব ফাইনান্স সাকিব হোসেন (৩২), চিফ কমার্শিয়াল অফিসার সাঈদ আহমেদ (৪০) ও চিফ অপারেটিং অফিসার এ কে এম সাদাত হোসেন (৩২)। সেদিন হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যায় ফ্লাইট এক্সপার্টের ওয়েবসাইট। সেই সঙ্গে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকএমডি সালমান বিন রশিদের দেশত্যাগের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। ওই খবর চাউর হওয়ার পর কোম্পানির গ্রাহক, টিকেট বিক্রেতা, এজেন্সি মালিক, যারা অগ্রিম টিকিট বুকিংয়ের জন্য অর্থ পরিশোধ করেছিলেন, তারা দিনভর মতিঝিলে ফ্লাইট এক্সপার্টের কার্যালয়ে ভিড় করেন। খবর বিডিনিউজের।

পরে রাতে ফ্লাইট এক্সপার্টের বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় মামলা করেন সরকার ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের মালিক বিপুল সরকার। সেখানে ৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। গ্রেপ্তার করা তিনজনকে গতকাল আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মতিঝিল থানার এসআই মো. সাদ্দাম হোসেন।

অপর দিকে আসামিদের পক্ষে তাদের আইনজীবী রবিউল ইসলাম ও মোফাজ্জল হোসেন ফারুক জামিন চেয়ে আবেদন করেন। ঢাকার মহানগর হাকিম মো. মিনহাজুর রহমান শুনানি নেন। শুনানিতে আসামিদের পক্ষে দুই আইনজীবী বলেন, গ্রেপ্তার করা তিনজন নিজেরাই ভুক্তভোগী। তারা কর্মচারী ছিলেন। তারা ঘটনার সাথে জড়িত না। মালিক পালিয়ে গেছেন। কর্মচারী হওয়ায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই তুলে ধরে তিনজনের জামিন প্রার্থনা করেন তাদের আইনজীবীরা।

বাদীপক্ষে আফজাল হোসেন মৃধা জামিনের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, মামলার এজাহারভুক্ত দুই আসামি পলাতক। তারা কানাডা চলে গেছেন। এক হাজারের বেশি মানুষ হজ, ওমরা করার টাকা দিয়েছে। এরা এই ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত। জামিনের বিষয়ে তিনি আপত্তি করেন।

রাষ্ট্রপক্ষে মুহাম্মদ শামসুদ্দোহা সুমন জামিনের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, মামলার মোট আসামি পাঁচজন। হজ, ওমরায় পাঠানোর কথা বলে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে দেশের বাইরে চলে গেছে। তারা সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। দীর্ঘদিন হতে মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সাথে প্রতারণা করেছে। তাদের জামিন নামঞ্জুরের প্রার্থনা করছি। এরপর আদালত জামিন নাকচ করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

মতিঝিল থানার ওসি মেজবাহ উদ্দীন বলেন, বিপুল সরকারের করা মামলায় গ্রেপ্তার ওই তিন কর্মীসহ ফ্লাইট এক্সপার্টের এমডি সালমান বিন রাশিদ এবং তার বাবা এম এ রাশিদকে আসামি করা হয়েছে। এর আগে শনিবার রাতে গ্রেপ্তার হওয়া সাঈদ আহমেদ মতিঝিল থানায় একটি জিডি করেন। গ্রেপ্তার হওয়া ওপর দুজনও তার সঙ্গে জিডি দায়ের করতে মতিঝিল থানায় গিয়েছিলেন। সেখানেই পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে।

জিডিতে সাঈদ অভিযোগ করেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালমান শনিবার কাউকে কিছু না জানিয়ে পরিবারসহ বিদেশে পালিয়ে যান। তিনি কর্মীদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে কোম্পানি বন্ধের কথা জানান।

ফ্লাইট এক্সপার্ট মক্কা গ্রুপের একটি কোম্পানি। ফ্লাইট এক্সপার্টের এমডি সালমান বিন রশিদের বাবা এম এ রশিদ দেশের ট্রাভেল এজেন্সি খাতের পুরনো ব্যবসায়ী। মক্কা ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলসের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে তারা টিকেটিং, হজ ও ওমরার বিভিন্ন প্যাকেজ পরিচালনা করে আসছিলেন। সেই অভিজ্ঞতা থেকে ২০১৭ সালের মার্চে তারা বাংলাদেশে অনলাইনে টিকেট কাটার প্ল্যাটফর্ম ফ্লাইট এক্সপার্ট চালু করেন। দেশিবিদেশি বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের টিকেট বুকিং, হোটেল রিজারভেশন, ট্যুর প্যাকেজ ও ভিসা প্রক্রিয়াকরণের মত সেবাও দিচ্ছি এ কোম্পানি। সাশ্রয়ী মূল্যে টিকেট বুক করার সুবিধা দেওয়ায় ফ্লাইট এক্সপার্ট গ্রাহকদের কাছে বেশ পরিচিতি পেয়েছিল।

ফ্লাইট এক্সপার্টের পাঁচজনের বিরুদ্ধে করা মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে আসামিরা অনলাইনে দীর্ঘ দিন হতে গ্রাহকদের বিমান টিকিট, হোটেল বুকিং, প্যাকেজ ট্যুরস, হজ ও ওমরাহ সেবা দেওয়ার ব্যবসা করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় হাজার হাজার এজেন্সি ও লক্ষাধিক গ্রাহকের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন করে।

শনিবার সকাল থেকে প্রতিষ্ঠানটির অনলাইন সেবা বন্ধ হয়ে যায়। এজন্য বিভিন্ন এজেন্সির মালিকসহ ব্যক্তিগত লেনদেনকারীরা তাদের কার্যালয়ে উপস্থিত হন। তারা এসে দেখেন মতিঝিল এলাকার সিটি সেন্টারে থাকা কোম্পানির কার্যালয় খোলা থাকলেও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ অনুপস্থিত থাকায় কর্মচারীরা সেবা দিতে পারছিলেন না। পরে তারা জানতে পারেন যে আসামি ফ্লাইট এক্সপার্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালমান ও মক্কা গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ রশিদ ৫৬ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশ পালিয়েছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ২৬ দিন পর কর্ণফুলীতে ধর্ষণ মামলার পলাতক আসামি গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধ৩ ঘণ্টা বন্ধ ছিল বাঘাইছড়ির সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ