যেকোনো কেস ডকেট বা সিডি (মামলার নথিপত্র) ১৪ বছরের পরিবর্তে ন্যূনতম ৪০ থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ। পিআরবি অনুযায়ী বর্তমানে ১৪ বছর পর্যন্ত মামলার ডকেট সংরক্ষণে রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ৪০ থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত কেস ডকেট সংরক্ষণে পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গলের (পিআরবি) প্রয়োজনীয় ধারাগুলো সংশোধন করার কাজ চলছে। সম্প্রতি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান ও অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার পুলিশ সদর দপ্তরে এ প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন।
প্রস্তাবে পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার উল্লেখ করেন, পিআরবিতে বলা আছে, কেস ডকেট ১৪ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে হবে। কিন্তু এখন ৩০–৩৫ বছর আগের মামলাও তদন্ত করতে হয়। পুরনো মামলার ডকেট সংরক্ষণের জন্য পিআরবি সংশোধন করা প্রয়োজন। ডকেট সংরক্ষণের বিষয়ে আরও সচেতন হতে হবে। পিআরবি সংশোধন করা হোক এবং কেস ডকেট ন্যূনতম ৪০–৫০ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণে রাখা উচিত।
জানতে চাইলে পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার আজাদীকে বলেন, যেকোনো মামলার তদন্তে ডকেট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আদালতের নির্দেশ পুরোনো মামলার তদন্তে নেমে দেখা যায় সঠিকভাবে ডকেট সংরক্ষণ করা হয় নি। ফলে তদন্তকাজ বিঘ্নিত হয়। কারণ বর্তমানে পিআরবি অনুযায়ী যেকোনো মামলার ডকেট ১৪ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণে রাখা হয়। এরপর ডকেট না থাকলে কাউকে দায়ী করা যায় না।
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই রাজারবাগের বাসা থেকে আট বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুলে যাওয়ার সময় অজ্ঞাত মোটরসাইকেল আরোহীদের গুলিতে নিহত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক ছাত্রী সগিরা মোর্শেদ। চাঞ্চল্যকর ওই হত্যাকান্ডের ৩০ বছর পর ২০১৯ সালের নভেম্বরে রহস্য উন্মোচন ও প্রকৃত আসামিদের গ্রেপ্তার করে পিবিআই। তাদের আগে কমপক্ষে ২৭ জন কর্মকর্তা মামলাটির তদন্ত করেছেন। আদালতে চার্জশিট দিয়েছেন, মামলার বিচারকাজও শুরু হয়। কিন্তু মূল রহস্য কেউ উন্মোচন করতে পারেনি। ২০১৯ সালের ১১ জুলাই উচ্চ আদালতের নির্দেশে পিবিআই মামলাটির তদন্ত করে রহস্য উন্মোচন করে।
তিনি আরও বলেন, মামলার ডকেট সংরক্ষণের সময়সীমা বাড়াতে হলে পিআরবির সংশ্লিষ্ট ধারা (১১০১) সংশোধন করতে হবে। ইতোমধ্যে এ–সংক্রান্ত বিশেষ একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। কমিটি ধারাগুলো সংশোধনের জন্য কাজ করছে। মামলার ডকেট কার কাছে সংরক্ষণে থাকবে, কোথায় থাকবে, সেটার কর্তৃপক্ষ কে থাকবে– তা নির্ধারণ জরুরি। ডকেট কি প্রসিকিউশন শাখায় থাকবে, না থানার ওসির কাছে থাকবে, নাকি পুলিশ সুপার কার্যালয়ে থাকবে– এসব বিষয়ে বিশেষ কমিটি কাজ করছে। কমিটি পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় সুপারিশসহ প্রস্তাব দেবে। এরপর সেটা বাস্তবায়ন হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, আদালতে কেস ডকেট সংরক্ষণে থাকলে প্রয়োজনের সময় পুলিশ হয়তো সেটা দেখতে পারবে না। দেখতে পারলেও সেটার প্রক্রিয়া অনেক জটিল। তাই থানার ওসির তত্ত্বাবধানে বা জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে কেস ডকেট সংরক্ষণ করা জরুরি। সিএমপির একাধিক থানার ওসি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অনেক সময় ১৫–২০ বছরের পুরোনো মামলার তদন্ত করতে হয়। বর্তমানে আদালতে এসব ডকেট থাকে। অনেক সময় দেখা যায়, মামলার ডকেট সঠিকভাবে পাওয়া যায় না। পোকায় নষ্ট করে, পানিতে ভিজে বা অন্য কোনোভাবে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে মামলার তদন্ত কাজ বিঘ্নিত হয়। তাই পিআরবি সংশোধন করে কোনো একটি কর্তৃপক্ষের অধীনে ৫০ বছর পর্যন্ত মামলার ডকেট সংরক্ষণে থাকা জরুরি। এর বাইরেও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একাধিক কর্মকর্তা মামলার ডকেট ৪০–৫০ বছর সংরক্ষণে রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন।