নৌ রুটে পণ্য পরিবহনে নতুন প্লাটফর্ম বিডব্লিউটিসিসি

হাসান আকবর | বৃহস্পতিবার , ১৭ অক্টোবর, ২০২৪ at ৪:২২ পূর্বাহ্ণ

দেশের অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন রুটে পণ্য পরিবহনে সিরিয়াল প্রথা প্রবর্তনসহ বিরাজমান সংকট নিরসনে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের জাহাজ শাখা গত ১৫ অক্টোবর এই প্রজ্ঞাপন জারি করে। ইতোপূর্বে খসড়া বিধিমালা প্রণয়ন করে উচ্চ পর্যায়ের একাধিক বৈঠকের পর রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় বলে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) দেলোয়ারা বেগম প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেন। এতে ইতোপূর্বের ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের (ডব্লিউটিসি) পরিবর্তে একই আদলে বাংলাদেশ ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কোঅর্ডিনেশন সেল (বিডব্লিউটিসিসি) নামের প্লাটফর্ম গঠনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। নতুন এই প্লাটফর্মের গঠন পরিচালন এবং মনিটরিংয়ের বিস্তারিত নীতিমালায় উল্লেখ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এদিকে নতুন নীতিমালার প্রজ্ঞাপন জারির পর নতুন করে পক্ষবিপক্ষে আলোচনাসমালোচনা তীব্র হয়ে উঠেছে। জাহাজ মালিকদের পক্ষ থেকে এই নীতিমালা বিশৃঙ্খল সেক্টরটিতে নতুন করে শৃংখলা প্রতিষ্ঠা করবে বলে বলা হলেও আমদানিকারকদের পক্ষ থেকে বলা হয়দেশের আমদানি খাত আবারো সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি হতে যাচ্ছে। দেশের অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন রুটে পণ্য পরিবহন খরচ আবারো বাড়বে। অপরদিকে প্রজ্ঞাপন জারির পর বিবদমান জাহাজ মালিকদের তিনটি সংগঠন গতকাল বৈঠক করেছে। বৈঠকে বিবাদের অবসান না ঘটে উল্টো শর্তারোপের মাধ্যমে বিবাদ চাঙ্গা হওয়ার শংকা প্রকাশ করা হয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, আমদানি নির্ভর দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বের নানা দেশ থেকে ভোগ্যপণ্য, কয়লা, পাথরসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করে। এসব পণ্যবাহী যে সব বড় মাদার ভ্যাসেল চট্টগ্রাম বন্দরে আসে সেগুলো জেটিতে বার্থিং নিতে পারে না। বড় মাদার ভ্যাসেলগুলো বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থান করে এবং সেখান থেকে লাইটারেজ জাহাজগুলো পণ্য খালাস করে আনে। এভাবে বন্দরের বহির্নোঙরে বছরে অন্তত দশ কোটি টন পণ্য হ্যান্ডলিং হয়। বেসরকারি মালিকানাধীন প্রায় ১৮শ’ লাইটারেজ জাহাজ দেশের অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন রুটে এসব পণ্য পরিবহন করে। দীর্ঘদিন ধরে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল এ ব্যবস্থা (ডব্লিউটিসি) নিয়ন্ত্রণ করছিল। লাইটারেজ জাহাজ মালিকদের তিনটি সংগঠন যথা বাংলাদেশ কার্গো ভ্যাসেল ওনার্স এসোসিয়েশন (বিসিভোয়া), কোস্টাল ভ্যাসেল ওনার্স এসোসিয়েশন (কোয়াব) এবং ইনল্যান্ড ভ্যাসেল ওনার্স এসোসিয়েশন অব চিটাগাং (আইভোয়াক) এর সমন্বয়েই ডব্লিউটিসি গঠন করা হয়। ডব্লিউটিসির প্রবর্তিত সিরিয়াল প্রথা অনুসরণ করে আমদানিকারকেরা জাহাজ ভাড়া নিয়ে পণ্য পরিবহন করতেন। জাহাজ মালিকদের প্রতিনিধি হিসেবে লোকাল এজেন্ট এবং আমদানিকারকের প্রতিনিধি হিসেবে পণ্যের এজেন্ট ডব্লিউটিসিতে দায়িত্ব পালন করতেন। কোনো কোনো লোকাল এজেন্ট আবার পণ্যের এজেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে। গত বেশ কয়েক বছর ধরে চলে আসা এই প্রক্রিয়ায় বিদেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্য পরিবহনের জন্য পণ্যের এজেন্ট ডব্লিউটিসির নিকট প্রয়োজনীয় জাহাজের চাহিদাপত্র প্রদান করে। ডব্লিউটিসি সিরিয়ালভুক্ত জাহাজ থেকে উক্ত পণ্যের এজেন্টের বিপরীতে বরাদ্দপত্র ইস্যু করে। লোকাল এজেন্ট জাহাজের যোগান দেয়। ভাড়া পরিশোধ প্রক্রিয়া পণ্যের এজেন্ট ডব্লিউটিসিকে জাহাজ ভাড়া পরিশোধ করে, ডব্লিউটিসি লোকাল এজেন্টের বরাবরে ভাড়ার টাকার চেক ইস্যু করে। জাহাজ মালিক লোকাল এজেন্ট থেকে ভাড়ার টাকা পেয়ে থাকেন।

প্রক্রিয়াটি শুরুতে বেশ গ্রহণযোগ্য থাকলেও পরবর্তীতে নানা অনিয়ম এবং অব্যবস্থাপনার কবলে পড়ে। জাহাজের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি, জাহাজ বরাদ্দ না দেয়া, ডেমারেজ এবং ডেসপাসের টাকা পয়সার নয় ছয়সহ নানা অভিযোগ এবং পাল্টা অভিযোগে ডব্লিউটিসি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠে। মাস কয়েক আগে জাহাজ মালিকদের অভ্যন্তরীণ বিরোধ, বিপুল অংকের টাকা আটকে থাকাসহ নানা অভিযোগ এবং পাল্টা অভিযোগের মুখে ভেঙ্গে যায় ডব্লিউটিসি। জাহাজ মালিকদের একাংশ ডব্লিউটিসির কারণে দুর্নীতি এবং বঞ্চনা বৃদ্ধি পাচ্ছে মর্মে অভিযোগ তুলে নতুন করে গঠন করে আইভোয়াক নামের পৃথক একটি প্লাটফর্ম। যেখান থেকে আমদানিকারকদের জাহাজ বরাদ্দ দেয়ার কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু এতেও সংকটের সুরাহা না হওয়ায় নৌ পরিবহন অধিদপ্তর থেকে চট্টগ্রামস্থ নৌ বাণিজ্য দপ্তরের নিয়ন্ত্রণে একটি সেল গঠন করে লাইটারেজ জাহাজ পরিচালনার উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু আবারো পক্ষেবিপক্ষে অবস্থানের কারণে সেই উদ্যোগও ভুণ্ডুল হয়ে যায়। কোনো উদ্যোগই কার্যকর না হওয়া এবং জাহাজ মালিকদের সংগঠনের নেতাদের পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং পাল্টা অভিযোগের মুখে দেশব্যাপী পণ্য পরিবহনের এ সেক্টরটিতে বিশৃঙ্খলা জটিল আকার ধারণ করে।

বিষয়টি নিয়ে নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পক্ষ থেকে দফায় দফায় বৈঠক এবং নানাভাবে উদ্যোগ নেয়া হয়। পরবর্তীতে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়সহ সরকারের পক্ষ থেকে একটি বিধিমালা প্রণয়ন করে লাইটারেজ জাহাজ সেক্টরে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়। কয়েক দফা বৈঠক করে তৈরি করা হয় খসড়া বিধিমালা। পরবর্তীতে আরো যাচাইবাছাই করে ওই বিধিমালাকে ‘ নৌপরিবহন অধিদপ্তর হইতে অনুমতিপ্রাপ্ত লাইটার জাহাজের মাধ্যমে বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দরসমুহে পণ্য পরিবহন নীতিমালা২০২৪’ শীর্ষক নীতিমালা প্রণয়ন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

এ নীতিমালায় বিডব্লিউটিসিসির আওতায় লাইটারেজ জাহাজসমূহ কিভাবে পরিচালিত হবে তা নিয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দরসমূহ ও তৎসংলগ্ন এলাকা হতে লাইটার জাহাজের মাধ্যমে স্বচ্ছ প্রক্রিয়া, নির্বিঘ্ন ও সুশৃঙ্খলভাবে পণ্য পরিবহন করার স্বার্থে সরকার এই নীতিমালা প্রণয়ন করলো। লাইটার জাহাজগুলোকে সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনার মাধ্যমে লাইটার জাহাজ শিল্প এবং এর সহিত সংশ্লিষ্ট অংশীজনদেরকে একটি সমন্বিত নীতিমালার আওতায় অন্তর্ভুক্ত করে লাইটার জাহাজ দ্বারা পণ্য পরিবহন সম্পর্কিত যে কোনো বিষয়ে সকল অংশীজনের স্বার্থ রক্ষা করার স্বার্থেই নীতিমালাটি প্রণয়ন করা হয় বলেও উল্লেখ করে বলা হয়, সুষম ও স্বচ্ছ ক্ষেত্র প্রস্তুতপূর্বক জবাবদিহিমূলকভাবে লাইটার জাহাজ পরিচালনার পাশাপাশি স্বল্পতম সময়ে লাইটার জাহাজ বরাদ্দের মাধ্যমে বাংলাদেশের জলসীমায় আগত মাদার ভেসেল হতে দ্রুত পণ্য খালাসের মাধ্যমে দেশের সমুদ্র বন্দরসমূহের সুনাম অক্ষুণ্ন রেখে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখা এবং খাদ্য পণ্য, সিমেন্ট ক্লিংকার, সারসহ সকল আমদানিরপ্তানি পণ্য যথাসময়ে সঠিক গন্তব্যে পৌঁছানোর মাধ্যমে সুষম সরবরাহে সহায়তা করতে দেশের সকল সমুদ্র বন্দর, সমুদ্র উপকূলীয় নদী বন্দর ও নদীর উভয় তীরে অবস্থিত সকল প্রকার জেটি, বহির্নোঙরে আগত মাদার ভেসেল হতে পণ্য পরিবহন কাজে নিয়োজিত লাইটার জাহাজের ক্ষেত্রে এই নীতিমালা প্রযোজ্য হবে।

এতে বিডব্লিউটিসিসি গঠনের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, বিডব্লিউটিসিসি নামের প্লাটফর্মের মাধ্যমে লাইটারেজ জাহাজ পরিচালিত হবে। বাংলাদেশ বাণিজ্য সংগঠন আইন, ২০২২ বা উক্ত আইনের আওতায় প্রণীত বিধির আলোকে সংগঠিত নৌযান মালিক সংগঠন এবং নৌ শিল্প সংশ্লিষ্ট অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়কারক হিসেবে বাংলাদেশ ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কোঅর্ডিনেশন সেল বা বিডব্লিউটিসিসি গঠন করা হবে। দেশের জলসীমায় আগত জাহাজ, মাদার ভেসেল থেকে সুষ্ঠুভাবে পণ্য বোঝাই এবং খালাসের জন্য লাইটার জাহাজ বরাদ্দ ও মোতায়েনের নিমিত্ত ডব্লিউটিসিসি সমন্বয়কারকের দায়িত্ব পালন করবে। বিডব্লিউটিসিসি লাইটার জাহাজ বরাদ্দ, লাইটার জাহাজ মালিক, আমদানিরপ্তানিকারক, পণ্যের এজেন্ট ও লোকাল এজেন্টসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে সমন্বয়কারক হিসেবে কাজ করবে। বিডব্লিউটিসিসির সার্বিক কার্যক্রম তদারকির জন্য নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সভাপতিত্বে দশ সদস্যের একটি তদারকি কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটিতে নৌবাণিজ্য দপ্তর, জাহাজ মালিকদের সংগঠনগুলোর প্রতিনিধি, বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফেকচারার্স এসোসিয়েশনের প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট কাস্টম হাউজের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত থাকবে। নৌপরিবহন অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী ও জাহাজ জরিপকারক কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন। তদারকি কমিটি প্রয়োজনে অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে এই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে বলেও বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়। এই কমিটি লাইটার জাহাজ রবাদ্দ ও পরিচালনা কার্যক্রম তদারকি নিশ্চিতকরণ, বিডব্লিউটিসিসির জনবল নিয়োগ, হিসাব নিরীক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম তদারকি নিশ্চিতকরণ, আমদানিরপ্তানিকারক কর্তৃক আমদানি রপ্তানিকৃত পণ্যের প্রকৃত ঘোষণা যাচাই তদারকি নিশ্চিতকরণ, বিডব্লিউটিসিসির আওতাভুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মধ্যকার বিরোধ নিষ্পত্তিকরণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম মনিটরিং করবে। বিডব্লিউটিসিসির বরাদ্দ ছাড়পত্র ব্যতীত কোনো লাইটার জাহাজ দেশের কোনো সমুদ্র বন্দর, সমুদ্র উপকূলীয় নদী বন্দর ও নদীর উভয় পাড়ে অবস্থিত সকল প্রকার জেটি, সমুদ্রে নোঙরে আগত মাদার ভেসেল থেকে পণ্য পরিবহন করতে পারবে না। এই নির্দেশনা অমান্য করলে নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক উক্ত লাইটার জাহাজের সার্ভে, উপকূল অতিক্রমের অনুমতি পত্র বাতিল কিংবা স্থগিত করতে পারবেন। তবে যে সকল আমদানিরপ্তানিকারক বা শিল্প প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব লাইটার জাহাজ রয়েছে, সেক্ষেত্রে নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের অব্যহতিপত্র নিয়ে তারা নিজস্ব পণ্য নিজস্ব জাহাজে পরিবহন করতে পারবে। ফ্যাক্টরির মালিকগণ কোনো অবস্থাতেই নিজ মালিকানার বাইরে জাহাজ ভাড়া করে অথবা অন্য কোনো পন্থায় জাহাজ সংগ্রহ করে নিজস্ব বহর বৃদ্ধি করতে পারবেন না। যদি অতিরিক্ত লাইটার জাহাজের প্রয়োজন হয়, তবে বিডব্লিউটিসিসির মাধ্যমে বরাদ্দ নিতে হবে। বিডব্লিউটিসিসি জাহাজ বরাদ্দ বা মোতায়েনের উদ্দেশ্যে ছাড়পত্র প্রদানের জন্য ফি নির্ধারণ করতে পারবে। ছাড়পত্র চার্জ হতে আদায়কৃত অর্থ দ্বারা তাদের কার্যক্রম পরিচালনার সমস্ত ব্যয় নির্বাহ করা হবে। এ সংক্রান্ত তহবিল বাৎসরিক ভিত্তিতে গ্রহণযোগ্য নিরীক্ষা ফার্ম দ্বারা নিরীক্ষিত হবে।

আমদানিরপ্তানি পণ্য খালাস ও লোডিংয়ের নিমিত্ত বিডব্লিউটিসিসি জাহাজ বরাদ্দ প্রদানের ক্ষেত্রে ক্রমতালিকা বজায় রাখবে। আরো বিভিন্ন ধরনের শর্ত ও ধারা উপধারা যুক্ত করে নতুন নীতিমালার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

নতুন এই নীতিমালা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। একাধিক জাহাজ মালিক বিষয়টিকে শুভ লক্ষণ বলে মন্তব্য করে বলেছেন, দেশের গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরটিতে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। নতুন এই নীতিমালা কার্যকর করা গেলে পরিস্থিতি পাল্টে যাবে। বহু জাহাজ মালিকই দিনের পর দিন ভাড়া পাচ্ছেন না। অলস বসে থাকা জাহাজের নাবিকদের বেতন ভাতা যোগাতে পারছেন না বহু মালিক। নতুন নীতিমালা যথাযথভাবে কার্যকর এবং দুর্নীতিমুক্ত সিরিয়াল প্রথা নিশ্চিত করা গেলে সকল জাহাজই সমহারে ভাড়া পাবে। এতে বহু প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব রক্ষা হবে বলেও তারা উল্লেখ করেন।

অবশ্য জাহাজ মালিকদের অপর একটি অংশ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ডব্লিউটিসির আদলেই এই নীতিমালা প্রণয়ন করে সিন্ডিকেট প্রথাকে চালু করা হচ্ছে। আমরা বহুদিন ধরে জাহাজ নিয়ে জিম্মি দশায় রয়েছি। এই নীতিমালার মাধ্যমে আমাদেরকে আবারো জিম্মি দশায় ফেলা হবে। আগে ডব্লিউটিসি করেছে, এখন অন্য কেউ করবে। তারা বলেন, নীতিমালার নামে আমাদের উপর বিতর্কিত ডব্লিউটিসির নিয়মই চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে।

আমদানিকারক এবং শিল্প গ্রুপের মালিকদের অনেকেই এই নীতিমালার বিরোধী। তারা বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে কোন আমদানিকারক কিভাবে তার পণ্য পরিবহন করতে জাহাজ ভাড়া করবেন বা করাবেন তা কঠোর নীতিমালায় আবদ্ধ হওয়া উচিত নয়। এতে আগের মতো কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে আমদানি বাণিজ্যকে জিম্মি করার সুযোগ তৈরি হবে।

এদিকে প্রজ্ঞাপন জারির একদিনের মাথায় গতকাল চট্টগ্রামে ঢাকা ও চট্টগ্রামের জাহাজ মালিকদের তিনটি সংগঠনের এক জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল বিকেলে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে চট্টগ্রামের জাহাজ মালিকেরা নানাভাবে বঞ্চনার শিকার উল্লেখ করে বলা হয়, যদি ঢাকার সব জাহাজ মালিক সিরিয়াল প্রথার আওতায় আসেন তাহলে চট্টগ্রামের জাহাজ মালিকেরাও যোগ দেবেন। যদি ঢাকা অঞ্চলের সব মালিক সিরিয়াল প্রথায় না আসেন তাহলে চট্টগ্রামের মালিকেরা নতুন নীতিমালার আওতায় গঠিত হতে যাওয়া বিডব্লিউটিসিসিতে যোগ দেবেন না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১২ বিচারপতিকে পাঠানো হলো ছুটিতে, পাবেন না বেঞ্চ
পরবর্তী নিবন্ধপ্রবীণ রাজনীতিবিদ মতিয়া চৌধুরীর ইন্তেকাল