গণ আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং আওয়ামী লীগ সরকারের আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঢাকার পুলিশ কমিশনার মাইনুল হাসান বলেছেন, নৌ–পথে ‘পালানোর সময়’ গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর সদরঘাট এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে ১৬ জুলাই ঢাকা কলেজের সামনে হতাহতের ঘটনায় নিউ মার্কেট থানার এক মামলায় ‘ইন্ধনদাতা’ হিসেবে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন। ছাত্র–জনতার ওই আন্দোলন অগাস্টের শুরুতে সরকারবিরোধী আন্দোলনের রূপ পাওয়ার পর সারা দেশে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। ৫ অগাস্ট আন্দোলনকারীদের ঢাকামুখী লং মার্চের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর সরকারের মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের প্রায় সবাই আত্মগোপনে চলে যান। কেউ কেউ আগেই দেশ ছেড়েছেন বলেও খবর আসে। তবে সালমান এফ রহমান ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনার সঙ্গে একই বিমানে দেশ ছাড়েন বলে এর আগে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে তথ্য দেওয়া হয়েছিল। এখন ঢাকার পুলিশ তাকে সদরঘাট থেকে গ্রেপ্তারের কথা বলছে। খবর বিডিনিউজের।
বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বেঙ্মিকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা হন ২০০৯ সালে। ২০১৯ সালে তাকে মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা করা হয়। গত দুটি নির্বাচনে তিনি ঢাকা–১ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের এই সদস্য শেখ হাসিনার অত্যন্ত আস্থাভাজন এবং সরকারের অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। নব্বই দশকের মাঝামাঝিতে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতির দায়িত্ব পালন করা সালমান দেশের ব্যবসায়ী মহলেও ছিলেন প্রতাপশালী একজন। ওষুধ, বস্ত্র, আমদানি–রপ্তানি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, হোটেল, প্রকৌশল, মিডিয়াসহ নানা খাতে ছড়িয়ে আছে সালমানের বেঙ্মিকো গ্রুপের ব্যবসা। পুঁজিবাজারে তার প্রভাব নিয়েও নানা আলোচনা রয়েছে।
অন্যদিকে আইনজীবী আনিসুল হক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলা এবং জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি ছিলেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের আমলে বিডিআর বিদ্রোহের মামলাসহ রাষ্ট্রীয় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মামলা পরিচালনা করেন তিনি। তার বাবা প্রয়াত সিরাজুল ইসলামও প্রখ্যাত আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ ছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ণ কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া–৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের টিকেটে প্রথমবার এমপি হন আনিসুল হক। ওই বছর তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভায় আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। আওয়ামী লীগের পরের দুই সরকারেও তাকে একই দায়িত্বে রাখেন শেখ হাসিনা।