নৌপথে পণ্য পরিবহনে ধস

চাক্তাই- খাতুনগঞ্জ স্লুইচ গেট বন্ধ, চাক্তাই ও রাজাখালী খালে প্রবেশ করেছে না নৌকা কর্ণফুলী ঘাটে হচ্ছে লোড-আনলোড পরিবহন ব্যয় বেড়েছে বলেছেন ব্যবসায়ীরা

জাহেদুল কবির | বৃহস্পতিবার , ১৬ মে, ২০২৪ at ৬:৩৯ পূর্বাহ্ণ

ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারী বাজার চাক্তাই খাতুনগঞ্জে এক সময় সিংহভাগ বাণিজ্য হতো নৌপথে। তবে কালের পরিক্রমায় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় নৌপথে বাণিজ্যও কমে আসে। তবে এখনো কক্সবাজারের কুতুবদিয়া, মহেশখালী এবং চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ ও নোয়াখালীর হাতিয়া ও সুবর্ণচরে নৌপথে পণ্য পরিবহন হচ্ছে। বর্তমানে নৌপথে বাণিজ্য হচ্ছে মাত্র ৫ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) চাক্তাইখাতুনগঞ্জে জোয়ারের পানি ঠেকাতে চাক্তাই খালের কর্ণফুলী মোহনা এবং রাজখালী খালে স্লুইচগেট নির্মাণ করে। সাম্প্রতিক সময়ে স্লুইচ গেট দুটি বন্ধ করে রাখা হয়েছে। ফলে চাক্তাই ও রাজাখালী খাল দিয়ে পণ্যবাহী নৌকা প্রবেশ করতে পারছে না। এতে ব্যবসায়ীদের বাধ্য হয়ে কর্ণফুলী নদীর ঘাটে পণ্য লোড আনলোড করতে হচ্ছে। এতে পণ্য পরিবহনে খরচ বেড়ে গেছে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।

চাক্তাইয়ের আফরা ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী মো. আলাউদ্দিন আলো বলেন, স্লুইচ গেট বন্ধ থাকার কারণে নৌকায় পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এতে আমাদের পণ্য পাঠাতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

চাক্তাই শিল্প ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এসএম হারুনুর রশিদ বলেন, চাক্তাই খাল দিয়ে এক সময় নৌপথে সারাদেশের সাথে বাণিজ্য হতো। তবে এখন কেবল সন্দ্বীপ, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, হাতিয়া, সুবর্ণচর ও চট্টগ্রামের কয়েকটি উপজেলায় নৌপথে পণ্য পরিবহন হচ্ছে। স্লইচ গেট নির্মাণের আগে নৌকা একেবারে ব্যবসায়ীদের দোকানগুদামের কাছে চলে আসতো। কারণ চাক্তাই খাতুনগঞ্জের বাজার গড়ে উঠেছে, চাক্তাই খালকে কেন্দ্র করে। কিন্তু এখন স্লুইচ গেট বন্ধ থাকায় নৌকা আসতে পারছে না।

চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, চাক্তাই খাতুনগঞ্জে নৌপথে এখন ৫ থেকে ১০ শতাংশের মতো পণ্য পরিবহন হচ্ছে। এখন স্লুইচ গেট বন্ধ থাকায় চাক্তাই ও রাজাখালী খাল দিয়ে কোনো নৌকা প্রবেশ করতে পারছে না। কর্ণফুলী নদীর ঘাটে গিয়ে পণ্য লোড আনলোড করার কারণে কুতুবদিয়া, মহেশখালী, সন্দ্বীপ এবং হাতিয়াতে পণ্য পাঠাতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে।

চট্টগ্রাম চাউল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ওমর আজম দৈনিক আজাদীকে বলেন, সিডিএ স্লুইচ গেট নির্মাণের সময় বলেছিল নৌপথে পণ্য পরিবহনে ব্যবসায়ীদের কোনো সমস্যা হবে না। স্লুইচ গেটের কারণে চাক্তাই খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেয়েছে, এটি ঠিক। তবে এখন স্লুইচ গেট বন্ধ রাখার কারণে ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা শুনেছিকর্ণফুলী নদীতে যারা ঘাট ইজারা নিয়েছে, তারা চান না স্লুইচ খোলা থাকুক। কারণ চাক্তাই খাল কিংবা রাজখালী খাল থেকে পণ্য লোড আনলোড হলে তারা টাকা আদায় করতে পারবেন না।

চাক্তাই আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, স্লুইচ গেট বন্ধ রাখার কারণে নৌপথে পণ্য পরিবহনে একপ্রকার ধস নেমেছে বলা যায়। আমরা স্লুইচ গেট খুলে দেয়ার দাবি জানাচ্ছি। মেসার্স ফরিদ উদ্দিন চৌধুরীর স্বত্বাধিকারী আহসান খালেদ পারভেজ বলেন, নৌপথে ব্যবসা বাণিজ্য এমনিতেই কমে গেছে। এখন চাক্তাই খালে কোনো নৌকা প্রবেশ করতে পারছে না। স্লুইচ গেট করা হয়েছিল জোয়ারের পানি রোধ করার জন্য। এখন ভারী বৃষ্টিপাত নাই। এছাড়া জোয়ারের পানির চাপও নেই। তাই এ সময় স্লুইচ গেট বন্ধ রাখার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছি না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদায়িত্ব পালনকালে সাড়ে ৫০০ কোটি টাকা দেনা পরিশোধ করেছি
পরবর্তী নিবন্ধসড়কের পাশ থেকে কাটা হলো ৩০টি গাছ