জন্মসূত্রে ইংরেজ হয়েও ভারতবর্ষের বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে অনন্য অবদান রেখেছিলেন এমন একজন মহিয়সী নারী যিনি পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হয়েছিলেন চট্টগ্রামের বরমা গ্রামের কৃতী সন্তান কেমব্রীজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র, চলনে বলনে পোশাকে প্রখর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ব্যারিস্টার যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তের সাথে। সিনিয়র কেমব্রীজ পাস করা সেই মহিলা হলেন এডিথ এলেন গ্রে। (নেলী সেনগুপ্তা ) ইংল্যান্ডের কেমব্রীজ শহরের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের একমাত্র সন্তান নেলী গ্রে। ১৮৮৬ সালের ১২ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। পিতা: ফ্রেডারিখ গ্রে, মাতা : এডিথ হেনরিয়েটা গ্রে। মা এ বিয়েতে ক্ষুব্ধ, এ ভেবে যে অজানা অচেনা দেশ, থাকতে হবে আজীবন। নেলী মাকে সান্ত্বনা দিলেন এ বলে, “মা, আমি যদি ভালো হই, আমাকে ভালোবাসবে সবাই। তুমি ভেবো না, মা, আমাকে তুমি আশীর্বাদ কর। আমি সুখে থাকব, আমার নতুন আত্মীয় স্বজনদের সাথে নতুন দেশে।” ১৯০৯ সালে নেলী চট্টগ্রামে আসেন। শহর থেকে নৌকাযোগে বরমা গ্রামে উপস্থিত হলেন। শ্বশুর উদারমনা যাত্রামোহন সেনগুপ্ত বিশিষ্ট আইনজীবী পুত্রবধূকে গ্রহণ করলেন দেশীয় রীতিতে। শাঁখা, সিঁন্দুর, শাড়ি পরিহিত নেলীও বাঙালি রীতিতে শ্বশুরকে পা স্পর্শ করে প্রণাম করলেন, মঙ্গল শঙ্খ বেজে উঠল। নেলী যুক্ত হস্তে সবাইকে সশ্রদ্ধ নমস্কার জানালেন। ছোটদের চিবুকে হাত দিয়ে আদর করলেন। আত্মীয়স্বজন বিস্ময়ে অভিভূত। সে সময় চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত “জ্যোতি” পত্রিকায় এ সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। শ্বশুর যাত্রামোহন সেনগুপ্তের ভিটেমাটি, স্বামী দেশপ্রিয় সেনগুপ্তের জন্মভূমি চট্টগ্রামকে ভালোবাসলেন, আপন করে নিলেন পরম মমতায়। মন্ত্র নিলেন “বহূজন হিতায়, বহুজন সুখায়” স্বামী বিবেকানন্দের সেই বিখ্যাত উক্তি ঊীঢ়ধহংরড়হ রং ষরভব, পড়হঃৎধপঃরড়হ রং ফবধঃয. সমপ্রসারণই জীবন, সংকোচন হোল মৃত্যু – তাঁর জীবনের আদর্শ ছিল। যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্ত ছিলেন দেশাত্মবোধে উদ্বুদ্ধ এক ব্যক্তিত্বময় মহান সত্তা এবং তাঁর কর্মব্যাপ্ত জীবন প্রবাহের নানান জটিল আবর্তে অব্যর্থ ঊৎসাহের উৎস ছিলেন নেলী। স্বামীর কর্ম ও সিদ্ধান্তের অনুকূলে শুধুমাত্র সহমর্মিতাই নয় , সক্রিয় অংশগ্রহণও ছিল। ১৯১০ সালে কোলকাতায় কংগ্রেস রাজনীতিতে নেলী যোগ দেন। শ্রীমতী নেলীর কর্মময় বিচিত্র জীবনধারাও আলোয় আলোকময় হয়ে উঠেছিল স্বামীর আদর্শের দীপ্ত আলোকে। দেশপ্রেমে, আত্মত্যাগ ও সেবার আদর্শ বাস্তবায়নে তাঁরা ছিলেন অভিন্ন, এক অন্যের পরিপূরক। এ প্রসঙ্গে মনে পড়ে একটি পারসিক উক্তি ইবযরহফ বাবৎু সধহ ঃযবৎব রং ধ ড়িসধহ. বিত্ত বৈভবের হাতছানি তাঁকে আকর্ষন করতে পারেনি। যতীন্দ্র মোহনের সকল কর্মকান্ডে নেলীর উৎসাহ উদ্দীপনা তাঁকে যথেষ্ট অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল। স্বামীর দেশপ্রমে তাঁকে মুগ্ধ করেছে। দেশকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করার জন্য তিনি নিরলস সংগ্রাম করে গেছেন।
অসহযোগ আন্দোলনের উত্তাল দিনগুলিতে চট্টগ্রামে শ্রীমতি নেলীর রাজনৈতিক জীবন শুরু। স্বামীর জন্মস্থান চট্টগ্রামকেই বেছে নিয়েছিলেন তাঁর কর্মকেন্দ্ররূপে। তখনকার নিপীড়িত লাঞ্ছিত মানবতার সেবায় নিয়োজিত করলেন নিজেকে পরম নিষ্ঠায়। চট্টগ্রামের বিপ্লবী যুবকদের প্রতি তিনি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। চট্টগ্রামের অস্ত্রাগার দখল, জালালাবাদ যুদ্ধের বীর বিপ্লবীদের অসম সাহসিকতার ভূয়সী প্রশংসা করতেন। বিদ্রোহী তরুণরা যে অমিত বিক্রমে বিশাল ইংরেজ বাহিনীর সঙ্গে সংগ্রাম করেছিলেন তাতে তিনি গর্ববোধ করতেন। ১৯২১ এ আসাম বেঙ্গল ধর্মঘটে যতীন্দ্র মোহন নেতৃত্ব দেন। এটাই প্রথম রাজনৈতিক ধর্মঘট। আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে ধর্মঘট এবং অসহযোগ আন্দোলনের গতিরোধ করার জন্য যতীন্দ্রমোহন এবং তাঁর সহকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়। ১৯২১ সালে মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়ে খদ্দর বিক্রি করার সময় নেলী গ্রেফতার হন। তিনি প্রায়শ খদ্দরের শাড়ি পরতেন। গ্রেফতারকালীন যতীন্দ্র মোহনের অবর্তমানে নেতৃত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন নেলী। বিদেশী বর্জন, স্বদেশী গ্রহণ অভিযানে অংশগ্রহণ করলেন তিনি। এমনকি সাহায্যর্থে নিজের গয়নাও দিয়ে দিলেন।
যতীন্দ্র মোহনের যে কোন সিদ্ধান্তে নেলী অকুন্ঠ সমর্থন দিতেন এবং পরবর্তিতে দেখা যেত সেই সিদ্ধান্তই ফলপ্রসূ হয়েছে। বোম্বের ‘‘বাওলা’’ হত্যাকান্ডের বিচার হবে বোম্বে হাইকোর্টে। যতীন্দ্রমোহন ব্যারিস্টার হিসাবে মামলা পরিচালনা করবেন। একলক্ষ টাকা ফিস। তিনি প্রস্তাব গ্রহণ করলেন। যতীন্দ্রমোহন রেলধর্মঘটের কারণে অনেক টাকা ঋণ করেছেন। ২৫ হাজার টাকা অগ্রিম দেওয়া হোল। এক সপ্তাহ পর কোলকাতায় আইন সভার অধিবেশন বসবে। হঠাৎ বোম্বে থেকে খবর এল বাওল হত্যা মামলার শুনানী হবে। বোম্বে যেতে হবে। যতীন্দ্রমোহন ঠিক করলেন বোম্বে যাবেন না। টাকা ফেরৎ দেবেন। নেলীর পরামর্শনলেন। নেলী তাৎক্ষণিভাবে সিদ্ধান্ত দিলেন শত অর্থকষ্ট থাকুক বোম্বে যাওয়া হবে না। কারণ যতীন্দ্রমোহনের উপস্থিতি আইন সভায় অপরিহার্য। নেলীর দৃঢ়তা দেখে যতীন্দ্রমোহন সন্তষ্ট হলেন। এক ভোটাধিকারে স্বরাজ্য দলের প্রস্তাব গৃহীত হোল। সরকার পরাজয় বরণ করলেন। অবশ্য পরবর্তিতে বাওলা হত্যা মামলার শুনানি কিছুদিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছিল। পরে অবশ্য যতীন্দ্রমোহন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের অনুরোধক্রমে মামলার দায়িত্ব গ্রহণ করলেন ঋণমুক্ত হবার জন্য। নেলী দৃঢ়চেতা আদর্শ সহধর্মিনী স্বামীর স্বদেশকে নিজের দেশ, স্বামীর স্বার্থকে একান্তভাবে নিজের করে নিয়েছিলেন। নেলীর বাঙালী প্রেম কতখানি ছিল তা আরেকটি ঘটনায় প্রমাণি হয়েছে। স্বামী যতীন্দ্র মোহন তখন কোলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র, প্রাইমারী স্কুলগুলো পরিদর্শন করতেন শ্রীমতী নেলী। দেখলেন স্কুলের পাঠ্যবইয়ের প্রথম পাতায় তদানীন্তন ভারত সম্রাট ৫ম জর্জের ছবি। তিনি শিক্ষকদের ডেকে বললেন, শৈশবকাল থেকেই আমাদের ছেলেমেয়েরা জানবে ইংরেজ তাদের রাজা, তারা ইংরেজদের প্রজা। এ ধারণা হতে দেওয়া ঠিক নয়। এ ঘটনা থেকে স্পষ্ট হয় যে তিনি মনেপ্রাণে কতখানি দেশকে ভালোবাসতেন। ১৯৩৩ এর ২২ই জুলাই যতীন্দ্র মোহনের মহাপ্রয়াণ ঘটে। তাঁর মৃত্যুর পর নেলী বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে আরো নিবিড়ভাবে যুক্ত হলেন। যতীন্দ্র মোহনের মৃত্যুর পর প্রায় ৪০ বছর নেলী তাঁর স্বামীর অভিপ্রেত কাজে নিযুক্ত ছিলেন। ১৯৩৩ এ তিনি কোলকাতায় অনুষ্ঠিত সর্বভারতীয় কংগ্রেসের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। একই বছর তিনি কোলকাতা কর্পোরেশনের অলডারম্যান নির্বাচিত হন।
নেলী সেনগুপ্ত তখন দিল্লীতে। ১৪৪ ধারা বলবৎ, সভা নিষিদ্ধ। এ আদেশ অমান্য করে দিল্লীর কুইন্স পার্কে এক জনসভার আয়োজন করা হয়েছে। সভানেত্রী অরুণা আসফ আলী (অরুণা গাঙ্গুলী)। তিনি ছিলেন বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের একজন অকুতোভয় কর্মী । সে সভায় নেলী সেনগুপ্তা এক ভাষণে দীপ্তকন্ঠে ভারতবাসীকে বিশেষ করে নারীদের শত বাধা অতিক্রম করে আইন অমান্য আন্দোলনে অংশ নেওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানান। অরুণা আসফ আলী এবং নেলী সেনগুপ্তাকে গ্রেফতার করল পুলিশ। চারমাসের কারাদন্ড দেওয়া হোল। ১৯৪৩ এবং ১৯৪৫ এ চট্টগ্রাম থেকে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়ে বঙ্গীয় আইন সভার সদস্য নির্বাচিত হন। বঙ্গীয় আইন সভার দ্বিতীয়বার নির্বাচনে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য বিশিষ্ট বিপ্লবী কল্পনা দত্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। উল্লেখ্য যে, পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু শ্রীমতী নেলীর নির্বাচনে সমর্থন করার জন্য চট্টগ্রামবাসীর কাছে চিঠি দেন। শ্রীমতী নেলী বিপুল ভোটে জয় লাভ করেন। তিনিই একমাত্র মহিলা যিনি সাধারণ নির্বাচনী এলাকা থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি জাতীয় কংগ্রেস অধিবেশনেও সভাপতিত্ব করেন। ১৯৪৭ এ ইংরেজদের অপশাসন থেকে মুক্ত হয়ে ভারতবর্ষ বিভক্ত হয় এবং ভারত ও পাকিস্তান এ দুটি রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন হয়। দেশ ভাগের পর নেলী সেনগুপ্ত চলে এলেন। স্বামীর পৈত্রিক ভূমি চট্টগ্রামে রহমতগঞ্জের ছোট্ট বাড়িতে বাস করতে লাগলেন (বর্তমানে শিশুবাগ স্কুল)। ১৯৫৪-৫৫ তে পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক আইন পরিষদের সভায় চট্টগ্রামবাসীর আমন্ত্রণে নির্বাচনে অংশ নিয়ে পাকিস্তান জাতীয় কংগ্রসের প্রার্থীরূপে সদস্য নির্বাচিত হন। পর পর দুবার তিনি আইন সভার সদস্য ছিলেন।
তিনি মনে করতেন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা সকল ধরনের উন্নয়নমূলক কাজে নারী সমাজের অংশ গ্রহণ অপরিহার্য। এ দৃঢ় অভিমত তিনি বিভিন্ন সভা সমিতিতে প্রকাশ করেছেন। তিনি অষষ চধশরংঃধহ ডড়সবহ অংংড়পরধঃরড়হ এর নেত্রী স্থানীয় সদস্য ছিলেন। ১৯৫২ সালে আমাদের মহান ভাষা আন্দোলনে তাঁর সক্রিয় ভূমিকা ছিল। ঢাকা মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গণে যখন ছাত্রদের উপর গুলি বর্ষণ হচ্ছিল তখন তিনি ছুটে গিয়ে তার তীব্র প্রতিবাদ করেন। ১৯৭০ এ শারীরিক অসুস্থতার কারণে চিকিৎসার জন্য তিনি তাঁর পুত্র শিশির সেনগুপ্তের কাছে কোলকাতায় যান। ১৯৭১ এ আমাদের মুক্তি সংগ্রামে তিনি কোলকাতা থেকে প্রবাসী সরকারের সাথে নিবিড় যোগাযোগ রাখতেন এবং মূল্যবান পরামর্শ দিতেন। স্বামীর মাতৃভূমির প্রতি ছিল তাঁর প্রগাঢ় মমত্ববোধ। আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতি ছিল তাঁর গভীর শ্রদ্ধা।
১৯৭২ এ অল্প সময়ের জন্য তিনি প্রিয় চট্টগ্রামে এসেছিলেন। কিন্তু বাধ সাধল তাঁর বার্ধক্যজনিত শারীরিক সমস্যা। তিনি পুনরায় পুত্রের কাছে চলে গেলেন। ১৯৭৩ সালে তাঁর অবদানের জন্য ভারত সরকার তাকে ‘‘পদ্মবিভূষণ’’ পদকে সম্মানিত করেন। এই সম্মাননা প্রাপ্তিতে শ্রীমতি নেলী আবেগআপ্লুত হয়ে উচ্চারণ করেছিলেন, জাতির শ্রেষ্ঠতম সম্মান তো তাঁরই (যতীন্দ্র মোহন) এর প্রাপ্য ছিলো।
চট্টগ্রামের প্রবর্তক সংঘ তাঁর প্রিয় কর্মক্ষেত্র ছিল। প্রবর্তক অনাথ আশ্রমের শিশুরা ছিল তাঁর একান্ত স্নেহের। তাদের হিতসাধনায় তিনি সব সময় সচেষ্ট থাকতেন। প্রবর্তক সংঘের ছাত্রীদের আবাসিক ভবন “মৈত্রেয়ী ভবন” এর তিনি শুভ উদ্বোধন করেছিলেন। চট্টগ্রামের বিপ্লবী বিনোদ চৌধুরী (প্রায় দীর্ঘ সময় শ্রীমতী নেলী সেনগুপ্তের ব্যক্তিগত সহকারী), বিশিষ্ট সাহিত্যিক অধ্যাপক আবুল ফজল, অধ্যক্ষ যোগেশ সিংহ, অধ্যাপক চিত্ত প্রসাদ তালুকদার, তৎকালীন প্রবর্তক সংঘের সম্পাদক বীরন্দ্র চৌধুরী এবং পরবর্তী সম্পাদক শ্রীমতি মীরা সিংহ তাঁর অত্যন্ত আপনজন ছিলেন। প্রবর্তক সংঘের তিনি সভাপতিও ছিলেন। প্রবর্তক সংঘে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে, আমাদের অর্পণাচরণ স্কুলের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে তাঁকে বেশ কয়েকবার দেখার সুযোগ আমার হয়েছিলো। তিনি স্কুলের ছাত্রীদের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নৃত্যনাট্য ‘চিত্রাঙ্গদা’’ পরিবেশনায় মুগ্ধ হয়ে বলেছিলেন, এ অনুষ্ঠান শান্তিনিকেতনের অনুষ্ঠানের সমতুল্য। তিনি আমাদের স্কুলের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ছিলেন। প্রবর্তক সংঘ, চট্টগ্রাম এসোসিয়েশন, চট্টগ্রাম ওল্ডহেম এবং ব্রাহ্ম সমাজের সাথে তিনি গভীরভাবে সংযুক্ত ছিলেন। ভাবতাম সুদূর ইংল্যান্ড থেকে এসে একজন বিদেশিনী কিভাবে চট্টগ্রামের একজন হয়ে উঠেছিলেন। ভিন্ন পরিবেশ, ভিন্ন জীবনধারায় অভ্যস্ত বিদেশিনী আমাদের দেশসেবায়রত থেকেছেন। চট্টগ্রামবাসী তাঁর কর্মকাণ্ডে গর্বিত। এ মহীয়সী নারী ১৯৭৩ সালের ২৩ অক্টোবর অমৃতলোকে যাত্রা করেন। চট্টগ্রামের মনীষীবৃন্দ তাঁর প্রশস্তি করেছেন মর্মস্পর্শী ভাষায়। আবুল ফজল লিখেছেন, ‘‘নেলী সেনগুপ্তা অসাধারণের মধ্যেও অসাধারণ, আত্মনিবেদনের এমন দৃষ্টান্ত বিরল’’, যোগেশ সিংহ লিখেছেন, নেলী সেনগুপ্তের সান্নিধ্যে একান্ত বস্তুনিষ্ঠ মানুষও অনুভব করতেন তাঁর আন্তরিক ঐশ্বর্যের সুস্নিগ্ধ স্পর্শ, তাঁর শিশু সারল্য এমন এক প্রভাব বিস্তার করত যাতে ভাষা স্তব্ধ হয়ে যেত।” বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে এবং অন্যান্য রাজনৈতিক, সামাজিক কর্মকান্ডে চট্টগ্রামের বধূ বিদেশিনী নেলী সেনগুপ্তের ভূমিকা চির অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। বর্তমানে চট্টগ্রামের অনেকেই এ মহীয়সী নারী সম্পর্কে জানে না। একজন বিদেশিনী হয়ে বৃটিশবিরোধী আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা, ভারতবর্ষ ভাগ হয়ে যাওয়ার পর কংগ্রেসের সদস্য হয়ে পাকিস্তানের রাজনীতিতে তাঁর সক্রিয় অংশ গ্রহণ, সামাজিক বিভিন্ন কর্মকান্ডে তাঁর সম্পৃক্ততা জানাবার জন্য সীমিত পরিসরে আমার এ প্রয়াস। শ্রীমতী নেলী সেনগুপ্তের ৪৭তম প্রয়াণবার্ষিকীতে তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রণতি জানাই।
লেখক : প্রাবন্ধিক, সাবেক অধ্যক্ষ, চট্টগ্রাম সরকারী চারুকলা কলেজ।