ঢাকা–১৭ আসনের উপনির্বাচনে ভোটের শেষ দিকে আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলার পেছনে কাদের ‘ইন্ধন’ ছিল, হামলার পেছনে উদ্দেশ্য কী, সেসব তথ্যের সন্ধান করছে সরকার। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, যারা হামলা করেছেন, ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করা হবে।
পুলিশ এ ঘটনায় সাতজনকে গ্রেপ্তারের কথা বললেও সংখ্যাটি আট বলে তথ্য দেন মন্ত্রী।
সচিবালয়ে গতকাল নিজের দপ্তরে ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইসের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি। তিনি জানান, গোয়েন লুইসও হামলার ওই ঘটনা নিয়ে জানতে চেয়েছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনে একদল জিতবে, একদল হারবে। নেপথ্যে কারা এই কাজটি (হিরো আলমের ওপর হামলা) করেছে, একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য কিংবা কী উদ্দেশ্যে করেছে সেটা জানার প্রয়োজন রয়েছে, সেটি জানার চেষ্টা করছি। যাদেরকে ধরেছি, তাদের জবানবন্দি নেব। আমরা সবকিছুই মিলিয়ে দেখব। খবর বিডিনিউজের।
পুলিশের সামনেই নৌকার ব্যাজ পরে হামলা হয়েছে, সাংবাদিকরা এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আসাদুজ্জামান খান বলেন, পুলিশের গাফিলতি থাকলে সেটি তো পুলিশ জবাব দেবে। আমরা সেটি দেখবই। যাতে কোনো রকম গণ্ডগোল না হয়, কোনো কেন্দ্রে কোনো অসুবিধা না হয় সেজন্য পুলিশ ওখানে ছিল। অলরেডি পুলিশকে আমরা বলেছি, তোমাদের কোনো অবজারভেশন আছে কিনা, সেটিও তোমরা জানাবা, আমরা মূল ঘটনাটি কি সেটি জানতে চাই।
সোমবার ভোট শেষ হওয়ার আগে সোয়া ৩টার দিকে বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে হামলার শিকার হন হিরো আলম। এই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া এসেছে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও বিএনপির পক্ষ থেকে। এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে নিন্দা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের বিজয়ী প্রার্থী মোহাম্মদ এ আরাফাত।
জাতিসংঘের কর্মকর্তার সঙ্গে কী কথা : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিনি (গোয়েন লুইস) জানতে চেয়েছিলেন হিরো আলম কীভাবে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছে? আমরা বললাম, এটা কেন হয়েছে এখনও বলতে পারব না। সরকারপক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থাই ছিল যেন একটা শান্তিময় পরিবেশ থাকে। আমরা যেটুকু দেখেছি নির্বাচনের শেষের দিকে কয়েকজনের সঙ্গে বাদানুবাদে লিপ্ত হন এবং লিপ্ত হয়েই দেখা গেল কয়েকজন যুবক তার ওপর অ্যাটাক করে। আমরা তাকে জানিয়েছি, ইতোমধ্যে আমরা আটজনকে গ্রেপ্তার করেছি। ভিডিও ফুটেজ দেখে যারা (হিরো আলমের ওপর হামলায়) অংশগ্রহণ করেছেন সবাইকে অ্যারেস্ট করব এবং এটা তদন্ত করে বের করতে চেষ্টা করব এ রকম একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে কার দ্বারা এই ঘটনা ঘটানো হলো, এগুলো আমরা বের করব।
জাতীয় নির্বাচনের আগে ঢাকায় একটি উপনির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকল না, এটি কী কোনো বার্তা দিল? একজন সাংবাদিকের এই প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনে কে হারল, কে জিতল সেটি বড় কথা নয়। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিঘ্ন হয়েছে, সেটিই হচ্ছে কথা। আমি মনে করি এখানে নিশ্চয়ই কোনো ইন্ধন ছিল হিরো আলমকে নিয়ে, আমরা সেটিই বের করতে চেষ্টা করেছি। কেন এই ঘটনাটি ঘটল সেটি আমরা তদন্ত করে দেখছি, তদন্তের পর আমরা বলতে পারব। প্রশ্নের জবাব মেলেনি জানিয়ে সেটি আবার করা হলে মন্ত্রী বলেন, মেসেজ এল, আমাদের আরও সতর্ক হতে হবে।
ভোট প্রশ্নবিদ্ধ করার অপপ্রয়াস : ঢাকা–১৭ উপনির্বাচনের শেষবেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমের ওপর হামলার পেছনে ভোট প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা দেখছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। তিনি বলেছেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং ন্যক্কারজনক ঘটনা। সুষ্ঠু নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপপ্রয়াস, এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ঘটনাটি জানার সাথে সাথে আমাদের প্রধান নির্বাচন কমিশনার মহোদয় ডিএমপি কমিশনারের সাথে ফোনে কথা বলেছেন এবং এ বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে দোষীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং গৃহীত ব্যবস্থা আমাদের জানাতে বলা হয়েছে। গতকাল নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকেদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
এ ঘটনায় গতকাল ইসির তরফে ডিএমপি কমিশনারকে লিখিত চিঠি দেওয়া হয়েছে জানিয়ে আলমগীর বলেন, ঢাকা–১৭ উপনির্বাচনের শেষ পর্যায়ে কে, কারা, কী উদ্দেশ্যে প্রার্থীর ওপর হামলা করেছে তা পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসবে। আইনশৃঙ্খলায় কারও অবহেলা থাকলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিয়ে ইসিকে পুলিশ কমিশনার জানাবেন।
তিনি বলেন, ছোট্ট ঘটনাটি ছাড়া আমরা সন্তুষ্ট। হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন এই নির্বাচন কমিশনার।












