নেতাকর্মীর সাথে এমপিদের মিলেমিশে কাজ করার তাগিদ

সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ইউনিট, নভেম্বরে থানা, ডিসেম্বরে দক্ষিণ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের টার্গেট চট্টগ্রামে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে হানিফ

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২১ জুন, ২০২১ at ৫:০৭ পূর্বাহ্ণ

স্থানীয় এমপিদেরকে মহানগর আওয়ামী লীগসহ থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে মিলেমিশে কাজ করার তাগিদ দিয়েছেন চট্টগ্রামে সফররত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। গতকাল রোববার প্রথম দিনে চট্টগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। বৈঠকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি বলেছেন, সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ইউনিট সম্মেলন এবং নভেম্বরে থানা সম্মেলন শেষে আমাদের টার্গেট আছে ডিসেম্বরে দক্ষিণ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন করার। সকাল ১০টা থেকে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে নগরীর তিনটি সংসদীয় আসন এবং তিনটি আংশিক সংসদীয় আসনের এমপি এবং তাদের নির্বাচনী এলাকার থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের সাথে ধারাবাহিক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে তিনি এসব কথা বলেন।
সাংগঠনিক সফরে চট্টগ্রামে আসা কেন্দ্রীয় এই শীর্ষ নেতা বলেন, সারা দেশে আওয়ামী লীগের কিছুটা হলেও সাংগঠনিক দুর্বলতা চোখে পড়েছে। টানা ১২ বছর ক্ষমতায় থাকার কারণে আমাদের অনেকের মাঝে আয়েশি মনোভাব চলে এসেছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা যতদিন আছেন ততদিন ক্ষমতায় আছি। ক্ষমতায় থেকে সংগঠন দুর্বল বা সবল বোঝা যাচ্ছে না। যার কারণে সংগঠনের দিকে সবার নজর একটু কম। যার ফলে অনেক ইউনিটে দেখেছি ১৫ ও ২০ বছর হয়ে গেছে, কমিটির কোনো পরিবর্তন নেই। সংগঠনের যে কার্যপদ্ধতি সেটাও কোনো রকমে চলছে।
তিনি বলেন, আপনাদের মধ্যে অনেক নেতা আছেন যারা যথাযথ মূল্যায়ন বা পদোন্নতি পাননি। দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়ায় তৃণমূলে নেতৃত্ব গড়ে উঠেনি। নিয়মিত সম্মেলন হলে নতুন নেতৃত্বের বিকাশ ঘটবে। সম্মেলনের মাধ্যমে সংগঠনে গতিশীলতা আসবে। মূল্যায়ন হওয়ার সুযোগ আসবে। আমরা কাউকে চাপিয়ে দিতে চাই না। আমরা একজন অপরজনের সহকর্মী ও সহযোগী হিসেবে কাজ করতে চাই। আপনাদের সহযোগিতা দিতে এসেছি। সহায়তা নিয়ে কাজ করলে চট্টগ্রামে সংগঠনের লাভ হবে।
তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রামে বহু নেতা জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো। কিন্তু আপনাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা বা নিষ্ক্রিয়তার কারণে মূল্যায়ন হচ্ছে না। প্রতি তিন বছর পর পর সম্মেলন হলে যোগ্য নেতৃত্ব চলে আসবে।
প্রয়াত মহিউদ্দীন চৌধুরীর প্রসঙ্গ টেনে হানিফ বলেন, চট্টগ্রামে রাজনীতির একটি ইতিহাস আছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মহিউদ্দিন চৌধুরী আন্দোলন করে সারা দেশ অচল করে দিয়েছিলেন। চট্টগ্রাম থেকে তিনি দেখিয়েছিলেন আন্দোলন কিভাবে করতে হয় ও ন্যায্য দাবি কিভাবে আদায় করতে হয়। চট্টগ্রামের আন্দোলন সারা দেশে আওয়ামী লীগ নেতাদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। চট্টগ্রামের সাংগঠনিক শক্তিকে মোকাবেলা করার মতো বাংলাদেশ দ্বিতীয় কোনো রাজনৈতিক দল গড়ে উঠেনি। বাংলাদেশের সবচেয়ে সবচেয়ে শক্তিশালী সংগঠন হচ্ছে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ। তারপরও চট্টগ্রামে সাংগঠনিক দুর্বলতা আসাটা দুঃখজনক। আমরা চাই, তৃণমূল থেকে সাংগঠনিক কোথায় কী দুর্বলতা আছে সেটা দূর করে কিভাবে সম্মেলন করা যায়। কোথায় সমস্যা আছে সেটা এখানে সমাধান করতে চাই। সংগঠনকে ঢেলে সাজানোর জন্য সবাই আন্তরিকভাবে কাজ করবেন। এখানে সকলকে মিলেমিশে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে তৃণমূল। তৃণমূল থেকে সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন, ইউনিট, ওয়ার্ড, থানা পর্যায়ে আমরা কথা বলছি। চট্টগ্রাম মহানগরীতেও আমরা সবার সাথে কথা বলছি, কোথাও কোনো সমস্যা আছে কিনা। তাদের কথা শুনছি।
মতবিনিময় সভায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত) হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি বলেন, আমি চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে নতুন দায়িত্ব পেয়ে এই প্রথম চট্টগ্রাম এলাম। আমরা দুই দিনের সাংগঠনিক সফরে সাতবার দলের নেতাকর্মীদের সাথে বসব। প্রত্যেক এমপির সাথে আলাদা আলাদা বসছি। তাদের সাথে মতবিনিময় করেছি। তৃণমূলের সাথে এমপিদের দূরত্ব কমানোর চেষ্টা করছি এবং সেটাই হবে। তিনি বলেন, দল সবচেয়ে বড়। এমপি দলের সৃষ্টি। এমপিরা দলের উপরে নয়। সবার উপরে দল। সুতরাং সবাইকে দলের সিদ্ধান্ত মানতে হবে।
তিনি বলেন, এই বছরের মধ্যে ইউনিট, ওয়ার্ড-থানা ও মহানগর সম্মেলন শেষ করব। আওয়ামী লীগ অনেক বড় দল। এখানে নেতৃত্বে প্রতিযোগিতা থাকবে, গ্রুপিং থাকবে। ঐক্যবদ্ধভাবে বসে গ্রুপিং নিরসন করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। আমরা কাউকে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেব না। তৃণমূলের নেতাদের নিয়ে যে বসলাম, তাতে তাদের যে সিদ্ধান্ত সেটাই আমরা বাস্তবায়ন করব।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান এমপি, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেল, কেন্দ্রীয় উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, মোছলেম উদ্দিন আহমদ এমপি ও দিদারুল আলম এমপি।
প্রত্যেক আসনের এমপিদের সাথে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ.জ.ম. নাছির উদ্দীন। উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান।
বিকালে সাড়ে ৪টায় চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী) আসনের সংসদ সদস্য শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের নির্বাচনী এলাকার থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে বৈঠক উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। সকাল ১০টায় সংসদীয় আসন চট্টগ্রাম-৪, চট্টগ্রাম-৫ ও চট্টগ্রাম-৮ এর বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ জেলার সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ এমপি, দিদারুল আলম এমপিসহ তাদের নির্বাচনী এলাকার থানা ও ওয়ার্ডের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকগণ। এই বৈঠকে হাটহাজারী আসনের জাতীয় পার্টির এমপি ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন না। তবে এই আসনের নগরীর অংশের ওয়ার্ড ও থানার নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক চলে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত।
এরপর দুপুর আড়াইটায় শুরু হয় চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-হালিশহর ও খুলশী) আসনের সংসদীয় এলাকার থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে বৈঠক। বৈঠকে অসুস্থতার জন্য উপস্থিত থাকতে পারেননি এই আসনের এমপি ডা. আফছারুল আমীন।
বিকাল সাড়ে ৪টায় শুরু হয় চট্টগ্রাম-৯ আসনের সংসদ সদস্য শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর নির্বাচনী এলাকার থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে বৈঠক। বৈঠক চলে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত। সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হয় চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনের সংসদ সদস্য এম এ লতিফেরর নির্বাচনী এলাকার থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের সাথে মতবিনিময়। বৈঠকে অসুস্থতার জন্য এমপি এম এ লতিফ উপস্থিত থাকতে পারেননি। বৈঠক চলে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত।
উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহজাদা মহিউদ্দিন, কেন্দ্রীয় নেতা মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, মাহমুদ সালাউদ্দিন শেলু, প্রদীপ দাশ, আবদুল হান্নান চৌধুরী মঞ্জু, নগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু, যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুবুল হক সুমন, কাউন্সিলর আবদুস সালাম মাসুম, ফারহান আহমেদ, অধ্যাপক মাসুম চৌধুরী, চবি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ শাহজাহান, সাবেক ছাত্রনেতা শওকত হোসাইন, আবুল মনসুর, কাউন্সিলর আবুল হাসনাত বেলাল, যুবলীগ নেতা সুরজিত বড়ুয়া লাভু, সনত বড়ুয়া, নগর মহিলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মমতাজ খান, দপ্তর সম্পাদক হাসিনা আক্তার টুনু, সাবেক নগর ছাত্রলীগ নেতা শিবু প্রসাদ চৌধুরী, হাবিবুর রহমান তারেক, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা দেবাশীষ নাথ দেবু, সুজিত দাশ, আজিজুর রহমান আজিজ, নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতৃণমূল নেতাকর্মীরা যা বললেন
পরবর্তী নিবন্ধএবার দ্বিতীয় ডোজের জন্য সংরক্ষিত রেখেই টিকাদান