নেতাকর্মীরা যে কারো পক্ষে কাজ করতে পারবেন?

মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় আলোচনা ।। লতিফের বিরুদ্ধে ক্ষোভ, প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি চিঠি যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর কাছে

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২৯ নভেম্বর, ২০২৩ at ৬:০৫ পূর্বাহ্ণ

বন্দরপতেঙ্গা আসনের সংসদ সদস্য এম এ লতিফ গত ১৫ বছর ধরে দলের নেতাকর্মীদের সাথে কোনো ধরনের যোগাযোগ রাখেন না। এমন অভিযোগ জানিয়েছেন স্থানীয় ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তিনি আবার মনোনয়ন পাওয়ায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার দারুল ফজল মার্কেট দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামীলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় তারা ক্ষোভের কথা জানান। সভায় ৩৯ নং দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন এবং স্থানীয় নেতাকর্মীরা লতিফের প্রার্থী পরিবর্তনের অনুরোধ জানিয়ে একটি চিঠি মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের কাছে হস্তান্তর করেছেন।

কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় চিঠিটি পড়ে শোনান আ জ ম নাছির উদ্দীন। এরপর তিনি চিঠিতে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে নেতাদের মতামত জানতে চান। নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, সদস্য মোহাম্মদ ইলিয়াছসহ কয়েকজন নেতা লতিফের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন। এই চিঠির প্রেক্ষিতে এম এ লতিফের মনোনয়ন পরিবর্তনের অনুরোধ জানিয়ে সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি পাঠানোর সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিয়েছে নগর আওয়ামী লীগ। সভায় বলা হয়, দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নগরীর আসনগুলোতে দলীয় প্রার্থীদের পাশাপাশি দলের কারো স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে বাধা নেই। তাই তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা তাদের ইচ্ছেমতো যে কারো পক্ষে (দলীয় বা স্বতন্ত্র প্রার্থী) কাজ করতে পারবেন।

এ ব্যাপারে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন আজাদীকে বলেন, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি দল থেকে উন্মুক্ত করে দিয়েছে। নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এবং উৎসবমুখর করার জন্য দলের যে কেউ চাইলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবে পারবেন। এক্ষেত্রে দল থেকে বাধা নেই।

তিনি বলেন, আজকের সভায় বন্দরপতেঙ্গাইপিজেড থানার ইউনিট, ওয়ার্ড এবং থানার নেতারা এবং সাবেক ও বর্তমান কাউন্সিলররা আমাদের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, এই আসনের সংসদ সদস্য গত ১৫ বছর ধরে দলের ইউনিট থেকে শুরু করে ওয়ার্ড, থানার কোনো নেতার সাথে কোনো ধরনের সম্পর্ক রাখেননি। সরকারের কোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সাথে দলের নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ত করেননি। সরকারি সাহায্যসহযোগিতাঅনুদানসহ যাবতীয় কিছু দলের নেতাকর্মীদের মাধ্যমে বিতরণ না করে অনেক ক্ষেত্রে নিজের আত্মীয়স্বজনদের দিয়ে বিতরণ করেছেন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আবারো উনাকে দল থেকে মনোনয়ন দেওয়ায় স্থানীয় নেতাকর্মীরা আজকের (গতকাল) সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা তাদের ক্ষোভের কথা কেন্দ্রে জানাতে অনুরোধ করেছেন।

তৃণমূল নেতাকর্মীদের দলের প্রার্থী ছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে বাধা আছে কিনা, এ বিষয়ে সভায় কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা জানতে চাইলে নাছির বলেন, এই ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এখন দলের নেতারাও যেহেতু স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে পারছেন, সুতরাং দলের নেতাকর্মীরা কে কার পক্ষে কাজ করবেন সেটা তাদের ব্যাপার। কার পক্ষে কাজ করবেন এই ব্যাপারে তো আমরা বলে দিতে পারি না। কেন্দ্র থেকে আমাদের কিছু জানানো হয়নি।

নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও চসিকের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন আজাদীকে বলেন, বন্দরপতেঙ্গা আসনে বর্তমান সংসদ সদস্যকে আবারো দল থেকে মনোনয়ন দেওয়ায় স্থানীয় নেতাকর্মীরা আজকের সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এই আসনের প্রার্থী পরিবর্তনের জন্য লিখিত অনুরোধ করেছেন। এই আসনের সংসদ সদস্য লতিফ সাহেব ধারাবাহিকভাবে ৩ বার সংসদ সদস্য হয়েছেন। কিন্তু মহানগর আওয়ামী লীগের সাথে তার কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই। তাই এই আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের জন্য প্রধানমন্ত্রী বরাবরে লিখিত চিঠি দেওয়ার ব্যাপারে আজকের সভায় আলোচনা হয়েছে।

সভায় সভাপতিত্ব করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী। আলোচনা শেষে সভার সিদ্ধান্তসমূহ উপস্থাপন করেন আ জ ম নাছির উদ্দীন। সিদ্ধান্তসমূহের মধ্যে রয়েছে, আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় দারুল ফজল মার্কেট দলীয় কার্যালয়ে জমায়েত এবং সংসদীয় আসনের প্রার্থীদের সাথে নিয়ে কোর্ট বিল্ডিং বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে মনোনয়ন পেশ। এছাড়া ডিসেম্বরব্যাপী বেশ কিছু কর্মসূচি রয়েছে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নঈম উদ্দীন চৌধুরী, অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, এম জহিরুল আলম দোভাষ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ এমপি, কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আদনান, চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শফিকুল ইসলাম ফারুক, সৈয়দ হাসান মাহমুদ শমসের, অ্যাডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, চন্দন ধর, আহমেদুর রহমান সিদ্দিকী, হাজী মো. হোসেন, জালাল উদ্দীন ইকবাল, জোবাইরা নার্গিস খান, আবু তাহের, শহিদুল আলম, জহর লাল হাজারী, আবুল মনছুর, সৈয়দ আমিনুল হক, গাজী শফিউল আজিম, কামরুল হাসান বুলু, সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার, নজরুল ইসলাম বাহাদুর, মহব্বত আলী খান, আব্দুল লফিত টিপু, হাজী মো. ইলিয়াছ, . নিছার উদ্দীন আহমেদ মঞ্জু, হাজী বেলাল আহমেদ, মোর্শেদা আক্তার চৌধুরী প্রমুখ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিএনপির লজ্জাও হারিয়ে গেছে
পরবর্তী নিবন্ধস্থায়ী কমিটির সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত পুরোপুরি কার্যকর হয় না