নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে সিএনজি চালক-যাত্রীর করুণ মৃত্যু

আর বাড়ি ফেরা হল না খাদিজার

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১ জুলাই, ২০২১ at ৬:৩০ পূর্বাহ্ণ

কয়েক মাস ধরে পেটের পীড়ায় ভুগছিলেন পটিয়ার ২নং বড় উঠান ইউনিয়নের দৌলতপুরের বাসিন্দা খাদিজা বেগম (৬৫)। স্থানীয়ভাবে অনেক ডাক্তার দেখিয়েছেন, কিন্তু কিছুতেই তিনি আরামবোধ করছিলেন না। শেষ পর্যন্ত স্থানীয় ডাক্তারের পরামর্শে চট্টগ্রাম শহরে উন্নত চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন। গত ১৭ জুন ২নং গেটের মেয়র গলিতে ছোট ভাইয়ের বাসায় উঠেছিলেন। ইতোমধ্যে ডাক্তারও দেখালেন, চিকিৎসা সংক্রান্ত সব রিপোর্টও ভালো ছিল। গতকাল সকালে চকবাজার এলাকায় চিকিৎসককে আরেকবার দেখিয়ে বাড়ি ফেরার কথা ছিল বৃদ্ধা খাদিজার। কিন্তু নিয়তি তাকে ‘না ফেরার দেশে’ পাঠিয়ে দিল। তবে অনেকটা সৌভাগ্যবশত বেঁচে গেলেন ছোট ভাইয়ের স্ত্রী তসলিমা আকতার, ডিগ্রি পড়ুয়া ভাতিজি সানজিদা এবং ১০ বছরের ভাতিজা মো. রাহাত।
উল্লেখ্য, গতকাল দুপুরে নগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন মেয়র গলির সামনে সড়কের এক পাশে ছোট্ট একটি সিঁড়িতে ধাক্কা লেগে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যাত্রীবাহী সিএনজি চশমা খালে পড়ে যায়। খালে প্রবল স্রোত থাকায় সিএনজিটি কিছুদূর ভেসে চলে যায়। কয়েকজন পথচারী তাৎক্ষণিক খালে ঝাঁপ দিয়ে তিনজন যাত্রীকে জীবিত উদ্ধার করলেও নিহত হন সিএনজি চালক মো. সুলতান (৩৫) এবং খাদিজা বেগম।
সিএনজি চালক সুলতান নগরীর কসমোপলিটন এলাকার বাসিন্দা। খাদিজা বেগম পটিয়ার ২নং বড় উঠান ইউনিয়নের দৌলতপুর এলাকার বাসিন্দা। বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই জহিরুল হক ভূঁইয়া বলেন, সিএনজি চালক ও বৃদ্ধ যাত্রীকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে নিয়ে আসে। চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। তবে বাকি ৩ যাত্রীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, স্বামী, তিন মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে বৃদ্ধা খাদিজার পরিবার। স্বামী ও ছেলে দুইজনই দুবাই প্রবাসী। গতকাল সকালে স্বামী ও ছেলের সাথে ভিডিও কলে কথা বলেছিলেন তিনি। বাড়িতে গিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ মতো বিশ্রাম নেয়ার কথা ছিল। কে জানতো তিনি চির বিশ্রামে চলে যাবেন।
দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া নিহত খাদিজার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী তসলিমা আকতার দৈনিক আজাদীকে বলেন, মনে হচ্ছে আমি ও আমার দুই সন্তান দ্বিতীয় জীবন পেয়েছি। পথচারীরা যদি ঝুঁকি নিয়ে আমাদের উদ্ধার না করতেন তাহলে নিশ্চিত আমাদেরও মৃত্যু হত। খালে ডুবে যাওয়ার সময় অনেক পানি খেয়েছি। আমার শুধু এটুকু মনে আছে একটা লোক আমার চুলের মুঠি ধরে টেনে উপরে তুলেছেন। সিএনজি দরজাতে আটকে গিয়ে আমি ও আমার ছেলে মেয়ে হাঁসপাশ করছিলাম। পরে জানতে পারলাম আমার স্বামীর বড় বোন মারা গেছেন। এই বলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়লেন।
ডিগ্রি পড়ুয়া সানজিদা জানান, আমি ঘটনার কিছুই মনে করতে পারছি না। এখনো আমার হাত পা কাঁপছে, গলা শুকিয়ে আসছে। আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া তিনি আমাদের বাঁচিয়েছেন। আমার ফুফুর জন্য খুব কষ্ট লাগছে। সুস্থ হতে শহরে এসে তিনি দুনিয়া থেকেই চলে গেলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্বপ্ন অধরাই রয়ে গেল রফিকুল দম্পতির
পরবর্তী নিবন্ধকঠোর লকডাউনে যা বন্ধ, যা খোলা