জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার কবলে থাকা দেশ থেকে পণ্য আমদানি এবং ওইসব দেশের জাহাজ বন্দরে ভিড়ানোসহ সব ধরনের সংশ্লিষ্টতা পরিহারের জন্য দেশের বন্দরসহ শিপিং সেক্টরকে কঠোরভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের নৌপরিবহন বিভাগ এক শিপিং সার্কুলারের মাধ্যমে দেশের সমুদ্র বাণিজ্যের সাথে জড়িত সকল পক্ষকে এই নির্দেশনা যথাযথভাবে মেনে চলার তাগাদা দেওয়া হয়। গতকাল মঙ্গলবার এই সার্কুলার (নম্বর ৩/২০২৪) জারি করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ওই সংস্থার সকল বিধিনিষেধ যথাযথভাবে পালন করে আসছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব দেশের সাথে যে কোনো ধরনের বাণিজ্য পরিচালনা থেকে সদস্য রাষ্ট্রগুলো বিরত থাকে। তবে গোপনে এবং ঘুরপথে বিভিন্ন দেশ নিষেধাজ্ঞার কবলে থাকা দেশগুলোর সাথে বাণিজ্য করে। তুলনামূলক কম দামে পণ্যসামগ্রী কেনার সুযোগ পাওয়ায় অনেক দেশ গোপনে এসব বাণিজ্য করে। এক্ষেত্রে কোনো কোনো দেশ নিষেধাজ্ঞার কবলে থাকা দেশ থেকে পণ্য তৃতীয় কোনো দেশের বন্দর ঘুরিয়ে আমদানি করে। অবশ্য প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলোর কোনো কোনোটি সরাসরি পণ্য কেনাবেচা করে। এতে নিষেধাজ্ঞা প্রদানকারী ওইসব দেশের সাথে অমান্যকারী দেশগুলোর সম্পর্কের টানাপোড়েন চলে। তবে শক্তিশালী দেশগুলো এসব টানাপোড়েনকে তেমন গুরুত্ব না দিলেও ছোট এবং তুলনামূলক দুর্বল দেশগুলোকে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হয়।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দরে আসা দুই জাহাজ এলপি গ্যাস নিয়ে হুলুস্থূল চলছে। প্রায় ৮২ হাজার টন এলপিজি নিয়ে আসা জাহাজ দুটি বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার কবলে থাকা ইরান থেকে আনা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। কয়েকটি সদস্য প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এলপিজি অপারেটর্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (লোয়াব) প্রেসিডেন্ট আজম জে চৌধুরী নৌপরিবহন উপদেষ্টা, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বরাবরে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানান। যদিও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, তারা ইরান থেকে কোনো এলপিজি আনেনি। দুবাই এবং ওমান থেকে এলপিজি আমদানি করেছে। একাধিক সদস্য প্রতিষ্ঠান এবং দেশের শীর্ষস্থানীয় একাধিক প্রতিষ্ঠানের মালিক লোয়াব প্রেসিডেন্ট আজম জে চৌধুরীর এই ধরনের চিঠি দেওয়ার অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং সমালোচনা করেন। তারা বলেছেন, আজম জে চৌধুরী ব্যক্তিগত লাভের আশায় সংগঠনকে ব্যবহার করে দেশের বিরুদ্ধে নেতিবাচক অপপ্রচার চালাচ্ছেন।
বিষয়টি নিয়ে দেশের এলপিজি অপারেটরদের মধ্যে বিরোধের মাঝে গতকাল নৌপরিবহন বিভাগ সার্কুলারটি জারি করে সকলকে জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে সতর্ক করে দেয়। নৌপরিবহন বিভাগের মহাপরিচালক কমডোর মোহাম্মদ মাকসুদ আলম সার্কুলারে স্বাক্ষর করেন।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশের জলসীমা, বন্দর বা শিপিং সেক্টরে কর্মরত সকল সংস্থাকে জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা অন্যান্য প্রাসঙ্গিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞার অধীনে থাকা জাহাজগুলোর সাথে জড়িত হওয়া কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার কবলে থাকা দেশ বা সংস্থাগুলোর সাথে বাণিজ্যে জড়িত জাহাজগুলো জাতীয় নিরাপত্তা এবং দেশের সামুদ্রিক খাতের সুনামের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করে বলে সার্কুলারটিতে সংশ্লিষ্টদের স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়।
বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা বা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে বিধিনিষেধের আওতায় থাকা পণ্যগুলোর উৎপত্তি বা গন্তব্য নির্বিশেষে বাংলাদেশের সীমানার মধ্যে লোড–আনলোড, ট্রানজিট বা সংরক্ষণ করার কোনো অনুমতি নেই। সার্কুলারে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে দায়ী সংস্থাগুলোকে জরিমানা, অপারেটিং লাইসেন্স স্থগিত এবং ফৌজদারি অভিযোগসহ গুরুতর জরিমানার সম্মুখীন হতে হবে বলে সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ মেরিটাইম কর্তৃপক্ষ নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নিশ্চিত করতে কঠোর নজরদারি অব্যাহত রাখবে। দেশের সামুদ্রিক শিল্পের সর্বোচ্চ মান বজায় রাখতে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে।