নির্বাচন ‘অবাধ ও অন্তর্ভূক্তিমূলক’ হয়নি : টিআইবি

| বৃহস্পতিবার , ১৮ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৮:০৯ পূর্বাহ্ণ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে ‘একপাক্ষিক ও পাতানো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ’ অ্যাখ্যা দিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশটিআইবি বলেছে, এই নির্বাচন ভবিষ্যতের জন্য অশনিসংকেত। নির্বাচন ‘অবাধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক’ হয়নি মন্তব্য করে সংস্থাটি বলছে, প্রাপ্তিঅপ্রাপ্তিসহ এই নির্বাচনের সার্বিক অভিজ্ঞতা বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ভবিষ্যতের জন্য অশনিসংকেত, গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনা ও স্বপ্নের সাথে সাংঘর্ষিক। ঢাকার ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে গতকাল বুধবার সংবাদ সম্মেলনে ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রক্রিয়া ট্র্যাকিং’ শীর্ষক গবেষণার এক প্রতিবেদন তুলে ধরে টিআইবি। খবর বিডিনিউজের।

এবারের নির্বাচনকে ঘিরে ২০২৩ সালের জুন থেকে মাঠ পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে টিআইবি। দৈবচয়নের ভিত্তিতে ৫০টি নির্বাচনি আসন বাছাই করে প্রত্যেক আসনে প্রধান তিন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনের ওপর তথ্য সংগ্রহ এবং সরাসরি পর্যবেক্ষণের কথা জানিয়েছে সংস্থাটি। গবেষণা পরিচালনা করেছেন মাহ্‌ফুজুল হক, নেওয়াজুল মওলা ও সাজেদুল ইসলাম।

টিআইবির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো মাহ্‌ফুজুল হক বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে দুই বড় দলের বিপরীতমুখী ও অনড় অবস্থানের কারণে অংশগ্রহণমূলক ও অবাধ নির্বাচন হয়নি। বিপরীতমুখী ও অনড় অবস্থানকেন্দ্রিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের লড়াইয়ে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জিম্মিদশা প্রকটতর হয়েছে। ক্ষমতায় অব্যাহত থাকার কৌশল বাস্তবায়নের একতরফা নির্বাচন সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছে, যার আইনগত বৈধতা নিয়ে কোনো চ্যালেজ্ঞ হয়ত হবে না, বা হলেও টিকবে না। তবে এ সাফল্য রাজনৈতিক শুদ্ধাচার, গণতান্ত্রিক ও নৈতিকতার মানদণ্ডে চিরকাল প্রশ্নবিদ্ধ থাকবে।

মাহ্‌ফুজুল হক বলেন, অর্থবহ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষহীন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সরকার দলের প্রার্থীর সঙ্গে একই দলের ‘স্বতন্ত্র’ ও অন্য দলের সরকার সমর্থিত প্রার্থীদের যে পাতানো খেলা সংগঠিত হয়েছে, তাতেও ব্যাপক আচরণবিধি লঙ্ঘনসহ অসুস্থ ও সহিংস প্রতিযোগিতা হয়েছে, যার সঙ্গে ক্ষমতার দ্বন্দ্বের বাইরে রাজনৈতিক আদর্শ বা জনস্বার্থের সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া কঠিন। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ও আইনগত সীমারেখার নামে কখনো অপারগ হয়ে, কখনো কৌশলে, একতরফা নির্বাচনের এজেন্ডা বাস্তবায়নের অন্যতম অনুঘটকের ভূমিকা পালন করেছে। অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা এবং প্রশাসনও অনুরূপভাবে একই এজেন্ডার সহায়ক ভূমিকায় ব্যবহৃত হয়েছে বা লিপ্ত থেকেছে।

২৪১টি আসনে নির্বাচন ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়নি’ মন্তব্য করে মাহ্‌ফুজুল বলেন, সারা দেশের অধিকাংশ কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ছাড়া অন্য দলের প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট না থাকা এবং প্রতিপক্ষ প্রার্থীর এজেন্টদের হুমকির মাধ্যমে অন্য দলের প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টকে কেন্দ্রে প্রবেশ করা থেকে বিরত রাখার তথ্য পাওয়া গেছে। স্বল্প ভোটার আসা ও ডামি লাইন তৈরি, বিভিন্ন আসনে অন্য প্রার্থীর এজেন্ট বের করে দেওয়া, ভোটের আগেই ব্যালটে সিল মারা, ভোট চলাকালে প্রকাশ্য সিল মারাসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ করেছেন খোদ আওয়ামী লীগ, জোট এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

প্রতিবেদনে ভোট পড়ার হার নিয়ে বলা হয়, ভোটের দিন বিকাল ৩টা পর্যন্ত ২৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ ভোট পড়ার কথা জানানো হয় নির্বাচন কমিশন থেকে। পরবর্তী এক ঘণ্টায় আরও ১৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ ভোটসহ মোট ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পড়ার ঘোষণায় বিতর্ক সৃষ্টি হয়। অনিয়মের অভিযোগে ১৩টি আসনে ৪২ জন প্রার্থী ভোট বর্জন করেছে বলেও জানান তিনি। এদের মধ্যে পাঁচজন জাতীয় পার্টি প্রার্থী, পাঁচটি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ভোট বর্জন করেন। নির্বাচনের আগের দিন রাতে ১৪ জেলায় ২১টি কেন্দ্রে অগ্নিসংযোগ করে দুবৃর্ত্তরা। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, গবেষণাটির প্রক্রিয়াটি চলমান রয়েছে। নির্বাচন শেষ হওয়ার এক মাস পর্যন্ত এটি চলবে। প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে এবং পুরো তথ্য নিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন পরবর্তীতে উপস্থাপন করা হবে।

তিনি বলেন, আমরা ইলেকশন মনিটরিং সংস্থা না। নির্বাচন পর্যবেক্ষণ বলতে যা বুঝায়, সেই কাজটি আমরা করি না। নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং এর মধ্যে যারা অংশীজন আছেন, তাদের ভূমিকা, তারা কতটুকু আইনসম্মতভাবে তাদের ভূমিকা পালন করেছে, তাদের নৈতিক দায়িত্ব পালন করেছে, সেটি ট্র্যাকিং করেছি আমরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১৬ জানুয়ারিকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা দিবস ঘোষণার দাবি
পরবর্তী নিবন্ধলোহাগাড়ায় অসহায় পরিবারের মাঝে টিন ও টাকা বিতরণ