নির্বাচনের সময় নির্ধারণ অভ্যন্তরীণ বিষয়, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার প্রয়োজন : ইইউ রাষ্ট্রদূত

| মঙ্গলবার , ৬ মে, ২০২৫ at ৭:২৯ পূর্বাহ্ণ

ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বলেছেন, বাংলাদেশে নির্বাচনের তারিখ নিয়ে ইউরোপীয় জোটের কোনো চাপ নেই। আর প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পর্যাপ্ত সময় দেওয়া দরকার বলেও তারা মনে করেন। বিএনপিসহ সমমনা কয়েকটি দল যখন এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের জোর দাবি জানাচ্ছে, তখন ইউরোপীয় এই কূটনীতিকের এমন বক্তব্য এলো।

গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিক্যাব) আয়োজিত ডিক্যাব টকে অতিথি হয়ে এসেছিলেন মিলার। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি মনে করি আমার বলা দরকার এ সিদ্ধান্ত (নির্বাচন কবে) বাংলাদেশের ব্যাপার। আমরা নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক পালাবদল দেখছি, যাতে একটি মাইলফলকে পৌঁছানো যায়। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন হিসাবে, সময়ের বিষয়ে আমাদের কোনো মতামত নেই এবং নির্দিষ্ট কোনো তারিখে ভোট আয়োজনে আমরা কাউকে চাপও দিচ্ছি না। আমরা মনে করি সংস্কার বাস্তবায়নে পর্যাপ্ত সময় দরকার এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনেই। সুতরাং এক্ষেত্রে শ্বাস নেওয়ার সুযোগ থাকা দরকার। খবর বিডিনিউজের।

ডিক্যাব টকে মাইকেল মিলার বলেন, ঐকমত্য কমিশন এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কতটা মতৈক্যে পৌঁছাতে পারে তা দেখার অপেক্ষায় আছেন তারা। মতৈক্য তৈরির চেষ্টায় এই কমিশন কঠোর পরিশ্রম করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উচ্চাভিলাষী সংস্কার উদ্যোগকে সমর্থন করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। আমরা আশা করি, সংস্কারগুলো খুবই স্পষ্টভাবে অগ্রাধিকারভিত্তিক এবং সুনির্দিষ্ট হবে। আমি যেভাবে বলেছি, এক্ষেত্রে আমাদের (ইইউ) অভিজ্ঞতা সহায়ক হতে পারে। এক্ষেত্রে আমাদের অর্থায়নেরও সুযোগ আছে, যা দিয়ে আমরা সহায়তা করতে পারি এবং পাশে দাঁড়ানোর রাজনৈতিক স্বদিচ্ছাও আছে।

অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাজ করার প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, নির্বাচন যেন আন্তর্জাতিক মানের হয়, সেই কার্যক্রম চলছে। আমরা চাই নির্বাচন যাতে অবাধ ও নিরপেক্ষ হয় এবং ফলাফল পুরোপুরি বিশ্বাসযোগ্য হয়। আমরা সেই সফলতার গল্প অংশ হতে চাই।

মিলার বলেন, নির্বাচন যারা পর্যবেক্ষণ করবে, সেইসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ইইউ চুক্তি করছে। জনগণকে ভোট এবং নির্বাচন বিষয়ে সচেতন করতেও কাজ চলছে। গত জুলাইআগস্টে ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ড নিয়ে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনকে সমর্থন করার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, তাদের প্রতিবেদনে বিষয়গুলো খুব স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। পরবর্তী ধাপে যারা অপরাধে অভিযুক্ত, তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার দায়িত্ব বাংলাদেশের বিচারিক কর্তৃপক্ষের। সুতরাং এক্ষেত্রে জবাবদিহিতা লাগবে। আমি যখন এখনকার পরিস্থিতি এবং পরবর্তী ধাপে রাজনৈতিক রূপান্তরের দিকে তাকাই, তখন কোনো ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করতে হলে সাক্ষ্যপ্রমাণ লাগবে। যদি সাক্ষ্যপ্রমাণ থাকে, তাহলে বিচারের আওতায় আনতে হবে। আর বিচার যখন শুরু হবে, তাতে অকারণ দেরি করা ঠিক হবে না।

মানবিক করিডোর প্রসঙ্গে : রাখাইনে মানবিক করিডোর নিয়ে এক প্রশ্নে রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, আন্তঃসীমান্ত সহায়তা পাঠানোর জন্য সরকারগুলোর সম্মতি এবং মানুষের নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানবিক অংশীদার হিসাবে শরণার্থীদের সহায়তার ক্ষেত্রে বাস্তববাদী থাকতে পেরে আমরা আনন্দিত। শরণার্থীরা এখানে থাকলে আমরা তাদের প্রয়োজন এখানে মেটাব। তারা যদি সীমান্তের অপর প্রান্তে থাকে, তাহলে আমাদের দেখতে হবে কীভাবে ওই প্রান্তেও সহায়তা পাঠানো যায়। কেননা এর মধ্য দিয়ে সেখানকার পরিস্থিতি ভালো হতে পারে। এটা আন্তঃসীমান্ত সহায়তাও হতে পারে। আমরা আন্তঃসীমান্ত সহায়তা পৃথিবীর নানা স্থানে করেছি এবং এটা কাজ করতে পারে। তবে এটা কেবল তখনই কাজ করতে পারে, যখন দুই প্রান্তের মানুষগুলো নিরাপদ থাকে এবং সরকারগুলো একমত হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমেয়রের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সের সৌজন্য সাক্ষাৎ
পরবর্তী নিবন্ধসাতটি স্তম্ভে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের সুপারিশ