নিরাপত্তায় থাকবে পুলিশ ও অস্ত্রধারী আনসার

জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ ও ওয়ার্ডের কার্যক্রম স্বাভাবিক

জাহেদুল কবির | মঙ্গলবার , ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ৬:০৩ পূর্বাহ্ণ

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনার রেশ পড়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালেও। ঢামেক হাসপাতালে হামলার প্রতিবাদে গতকাল দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগ বন্ধ ছিল। তবে চমেক হাসপাতালে গতকাল জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগে সেবাপ্রার্থীদের কোনো ভোগান্তি পোহাতে হয়নি। এছাড়া হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডের কার্যক্রমও স্বাভাবিক ছিল।

তবে চিকিৎসকদের মন থেকে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা এখনো কাটেনি। বিশেষ করে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে অনেক চিকিৎসকই উদ্বিগ্ন। এ পরিস্থিতিতে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসকদের নিরাপত্তায় জোর দিয়েছে। হাসপাতালে এখন থেকে জরুরি বিভাগে প্রতিদিন তিন শিফটে ১২ জন অস্ত্রধারী আনসার ব্যাটেলিয়ন দায়িত্ব পালন করবে। পাশাপাশি তিনজন পুলিশও থাকবে। এছাড়া সেনা ও বিজিবি সদস্যরাও নিয়মিত টহল দিবে। আর কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে যেন পড়তে না হয়, সেজন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে বলে জানা গেছে।

চমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে ১০০ জন আনসার সদস্য ছিল। এরমধ্যে সম্প্রতি আনসারের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ৬০ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। বাকি ৪০ জনের মধ্যে ৫ জন কাজে যোগ দেয়নি। অর্থাৎ বর্তমানে হাসপাতালে আনসার সদস্য রয়েছে ৩৫ জন। এর সাথে আরো ৩৫ জন আনসার নতুন করে যোগ দেয়ার কথা রয়েছে।

চমেক হাসপাতালে মোট ৬০টি ওয়ার্ড রয়েছে। সবগুলো ওয়ার্ডে অবশ্য রোগী বা স্বজনদের চাপও থাকে না। বিশেষ করে চক্ষু, নাক কান ও গলা রোগ বিভাগ, এনডোক্রাইনোলজি বিভাগ, হেপাটোলজি, হেমাটোলজি এবং অনকোলজি বিভাগ অন্যতম। তবে ক্যাজুয়াল্টি ওয়ার্ড, হৃদরোগ ওয়ার্ড, তিনটি মেডিসিন ওয়ার্ড, নিউরোলজি ওয়ার্ড, অর্থোপেডিকস ওয়ার্ড, শিশুস্বাস্থ্য ওয়ার্ড, নবজাতক ওয়ার্ড, আইসিইউ, এনআইসিইউ, গাইনি ওয়ার্ড, সার্জারি ওয়ার্ড ও নিউরো সার্জারি ওয়ার্ডে রোগীদের চাপ সামলাতে অনেক সময় হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত আনসার সদস্যদের বেগ পেতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে হাসপাতালে আনসারসহ পর্যাপ্ত জনবল বাড়ানোর ওপর জোর দেন সংশ্লিষ্টরা।

চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগের একাধিক চিকিৎসক জানান, রোগীদের সেবা দেয়াটাই একজন চিকিৎসকের দায়িত্ব। যত কষ্টই হোক, কোনো রোগীকে আমরা হাসপাতাল থেকে ফেরত দিতে পারি না। আমরা ২৪ ঘণ্টা রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। অথচ রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চিকিৎসকের ওপর হামলা করা হচ্ছে। এটি অত্যন্ত অমানবিক। চিকিৎসকরা রোগীর সুস্থতার জন্য সেবা দিয়ে থাকেন। হাসপাতালে প্রতিদিনই কেউ না কেউ মারা যাচ্ছেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাচ্ছেন। আমরা চিকিৎসকরা তাদের চিকিৎসা দিয়ে বাঁচানোর চেষ্টা করি মাত্র। আবার অনেক রোগীর স্বজনরা বলেআমরা ভুল চিকিৎসা দিয়ে রোগী মেরে ফেলেছি। কোন চিকিৎসা সঠিক, কোন চিকিৎসা ভুলসেটি তো কোনো রোগীর স্বজন বুঝার কথা না। তারপরেও আমাদের এই অপবাদ নিতে হয়। এখন চিকিৎসক যদি কর্মস্থলে তার নিজের সুরক্ষা নিয়ে আতঙ্কে থাকে, তবে রোগীরা ভালো সেবা পাবে না। এজন্য হাসপাতালে ভর্তি প্রত্যেক রোগীর স্বজনকে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। নিজেদের সচেতন হতে হবে।

জানতে চাইলে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন আজাদীকে বলেন, চিকিৎসকদের নিরাপত্তায় আমরা কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। চিকিৎসকরা রাত দিন চিকিৎসা দিবে, আবার রোগীর স্বজনরা তাদের গায়ে হাত তুলবে, এটি হতে পারে না। হাসপাতালের সার্বিক নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক পুলিশের পাশাপাশি ১২ জন অস্ত্রধারী আনসার ব্যাটেলিয়নও দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়া সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্যরাও হাসপাতাল এলাকায় নিয়মিত টহলে থাকবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৫ ফুট খুলল কাপ্তাই বাঁধের ১৬ জলকপাট
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামের সার্বিক উন্নয়নে নিজের সবটুকু দিয়ে কাজ করব