শর্ত না মেনে নিয়োগ হওয়ায় চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) তিন কর্মকর্তাকে পূর্বের পদে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এছাড়া উচ্চ পদে থাকাকালে অতিরিক্ত যে পরিমাণ বেতন প্রাপ্ত হয়েছে সেটি ফেরত দিতে বলা হয়েছে। গত ৬ জুন সিভাসুর সিন্ডিকেটের ৬০তম সভায় তাদের ব্যাপারে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার সিভাসুর রেজিস্ট্রার (রুটিন দায়িত্বপ্রাপ্ত) নাসির আহমদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ শাস্তির কথা বলা হয়। গতকাল শনিবার বিষয়টি জানাজানি হয়। পদ অবনমনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিভাসুর উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান।
অবনমন হওয়া তিন কর্মকর্তা হলেন, ডা. আদিত্য চৌধুরী অভি, ডা. মো. তারিকুল ইসলাম ও পাপিয়া সেন। এ তিনজন ২০২২ সালে প্রথমে ৯ম গ্রেডে বিভিন্ন পদে যোগদান করেন। পরের বছর ২০২৩ সালে আবার আলাদা আবেদন করে একজন ষষ্ট গ্রেড ও অপরজন সপ্তম গ্রেডে যোগদান করেন। এ নিয়োগে যে শর্ত চাওয়া হয়েছিল সেটা পূরণ হয়নি। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন গত বছরের ডিসেম্বরে আপত্তি জানালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করে। এরপর সেই সুপারিশ ও সিভাসুর আইন অনুসারে সিন্ডিকেটে তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়। বিশ্ববিদ্যায় সূত্রে জানা যায়, ডা. আদিত্য চৌধুরী অভি প্রোডাকশন অফিসার (৯ম গ্রেড) পদে স্থায়ীভাবে যোগদান করেছেন ২০২২ সালের ১৬ মে। এরপর আলাদা বিজ্ঞপ্তিতে সিনিয়র ভেটেরিনারি সার্জন (৬ষ্ঠ গ্রেড) পদে যোগদান করেন ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী– সিনিয়র ভেটেরিনারি সার্জন পদের জন্য প্রথম শ্রেণির পদে ৫ বছরের অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়েছে। কিন্তু জীবনবৃত্তান্ত অনুযায়ী ডা. আদিত্য চৌধুরী অভির সে অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও নিয়োগ পাওয়ায় নিয়মের ব্যত্যয় হয়েছে। ডা. মো. তারিকুল ইসলাম প্রোডাকশন অফিসার (৯ম গ্রেড) স্থায়ী পদে যোগদান করেছেন ২০২২ সালের ১৬ মে। এরপর ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর সিভাসুর ম্যানেজার (ফার্ম) পদে যোগদান করেন। এ পদেও ১ম শ্রেণির পদে ৫ বছরের অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়েছে। কিন্তু ডা. মো. তারিকুল ইসলামের ক্ষেত্রেও সে শর্ত পূরণ না হওয়ায় নিয়মের ব্যত্যয় হয়েছে। পাপিয়া সেনও একাউন্টস অফিসার (৯ম গ্রেড) পদে স্থায়ীভাবে যোগদান করেছেন ২০২২ সালের ১৬ মে। তিনিও ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (৭ম গ্রেড) পদে যোগদান করেছেন আলাদা বিজ্ঞাপনের বিপরীতে আবেদন করার মাধ্যমে। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুসারে তারা প্রথমে যোগদান করা পদে ফিরে যাবেন।
জানা গেছে, পাপিয়া সেন সাবেক মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সহকারী রাহুল দাশের স্ত্রী। এছাড়া ডা. আদিত্য চৌধুরী অভি ও ডা. মো. তারিকুল ইসলাম সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও নওফেলের অনুসারী। নওফেলের সুপারিশে তাদের চাকরি হয়েছে। পরের বার যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও উচ্চ পদে চাকরি পান এ সূত্রেই।
এ বিষয়ে সিভাসুর উপাচার্য প্রফেসর ড. লুৎফুর রহমান আজাদীকে বলেন, তারা তিনজন ২০২২ সালে আবেদন করে ৯ম গ্রেডে যোগদান করেন। পরের বছর তারা ভিন্ন বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে উচ্চ গ্রেডে যোগদান করেন। ওইসব পদে যোগদান করার জন্য যেসব শর্ত দেওয়া হয়েছে সেটা পূরণ হয়নি। এ নিয়ে গত বছরের ডিসেম্বরে ইউজিসি আপত্তি জানালে আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্তের প্রতিবেদন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুসারে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।