নিদানতরানী ভরাট, অনিশ্চয়তায় তিন হাজার একর জমির লবণ উৎপাদন

ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া | শনিবার , ৩০ নভেম্বর, ২০২৪ at ৬:০৩ পূর্বাহ্ণ

বছরের পর বছর ধরে প্রতিনিয়ত পলি জমে একেবারে ভরাট হয়ে পড়েছে কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বহমান ‘নিদানতরানী খাল’। এই অবস্থায় নাব্যতা সংকটের কারণে সমুদ্র উপকূলের এই খালটি দিয়ে লবণাক্ত পানির চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ায় সেই প্রভাব পড়ছে লবণ উৎপাদনে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইতোমধ্যে শুরু হওয়া মৌসুমে লবণ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় সামুদ্রিক লবণাক্ত পানির সংস্থান না হওয়ায় অন্তত ৩ হাজার একর জমিতে লবণ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কায় মাথায় হাত উঠেছে ভুক্তভোগী অন্তত ১৫টি গ্রামের কয়েকশত চাষির।

ভুক্তভোগী লবণ চাষিরা জানিয়েছেন, সমুদ্র উপকূলের এই নিদানতরানী খালটি ভরাট হয়ে পড়ায় লোকালয়ে আসতে পারছে না লবণাক্ত পানি। এই পরিস্থিতিতে মধ্যম উজানটিয়ার ভেলুয়ার পাড়া, জয়েন উদ্দিন পাড়া, মৌলভীর পাড়া, ফেরাসিঙ্গা পাড়া, মিয়াজি পাড়া, ফকির পাড়া, ষাট দুনিয়া পাড়া, জালিয়া পাড়া, মিয়ার পাড়ার আংশিক, মালেক পাড়ার আংশিক, পেকুয়ার চরের আংশিকসহ আশপাশের এলাকার কয়েকশত লবণ চাষি তাদের জমিতে লবণ উৎপাদনে মাঠে নামতে পারেনি। কারণ একমাত্র নিদানতরানী খালের লবণাক্ত পানির ওপরই তাদের নির্ভর করতে হয় লবণ উৎপাদনের মাধ্যমে রুটিরুজির। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি একেবারে লবণ চাষিদের প্রতিকূলে। এক সময়ের প্রচণ্ড খরস্রোতার জোয়ারভাটার এই খালটি বর্তমানে মরা খালে পরিণত হয়েছে।

ভুক্তভোগী লবণ চাষি মিয়াজি পাড়ার মানিক মিয়া, লবণ ব্যবসায়ী কলিম উল্লাহ এবং সাবেক ইউপি সদস্য নুরুল আলম জানান, অতি দ্রুততার সাথে সমুদ্র উপকূলের এই নিদানতরানী খালটি খননের মাধ্যমে গভীরতা সৃষ্টি করতে হবে। যাতে জোয়ারভাটার সময় সামুদ্রিক লবণ পানির চলাচল সচল থাকে। তা না হলে চলতি মৌসুমে অন্তত ৩ হাজার একর জমিতে লবণ উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। যার রেশ পড়বে কয়েকশত লবণ চাষির পরিবারের রুটিরুজিতে।

সাবেক ইউপি সদস্য নাছির উদ্দিন ও জমির উদ্দিনের ভাষ্য, নিদানতরানী খালের দৈর্ঘ্য প্রায় চার কিলোমিটার। তবে অন্তত ২৫ থেকে ৩০ চেইন বা মিটার খনন করা হলেই প্রবহমান এই খালটি ফের প্রাণ ফিরে পাবে। এতে স্থানীয় অর্থনীতিতেও গতি ফিরবে। তাই লবণ শিল্পের সমৃদ্ধিতে খালটির নির্দিষ্ট অংশ খনন করে নাব্যতা ফেরানো জরুরি হয়ে পড়েছে।

প্রবহমান নিদানতরানী খাল ভরাট হওয়া নিয়ে পেকুয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও উজানটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক নূর পেয়ারা বেগম বলেন, বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। নিদানতরানী খালটির সার্বিক অবস্থা সরেজমিন পরিদর্শন করা হবে। সমুদ্র উপকূলের লবণাক্ত পানির চলাচল যাতে স্বাভাবিক হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে ভুক্তভোগী লবণ চাষিরা আরও জানিয়েছেন, সমুদ্র উপকূলের এই উজানটিয়া ইউনিয়নে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নিয়ন্ত্রণাধীন ৬৪/বি পোল্ডারের ৫২ নম্বর স্লুইচ গেটটিও অঁকেজো অবস্থায় রয়েছে। স্লুইচ গেটটির উভয়দিকে পানি চলাচলের মুখটিও একেবারে ভরাট হয়ে গেছে। এতে পলি মাটির কাঁদায় স্লুইচ গেটের দুটি নাঁশিও বিকল হয়ে পড়েছে। এ নিয়ে স্থানীয় লবণ চাষি হাবিব উল্লাহ বলেন, প্রায় ২০ বছর ধরে পাউবোর ৫২ নম্বর স্লুইচ গেটটির কোন সংস্কার কাজ বাস্তবায়ন হয়নি। এতে একেবারে বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে লবণ চাষে লবণাক্ত পানির সংস্থানে অতি প্রয়োজনীয় এই স্লুইচ গেটটি।

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড বান্দরবানের নির্বাহী প্রকৌশলী অরূপ চক্রবর্তী দৈনিক আজাদীকে জানান, মধ্যম উজানটিয়ার ৫২ নম্বর স্লুইচ গেটটির দুরবস্থার বিষয়ে অবগত রয়েছেন। সেটির সমস্যা দূর করতে মন্ত্রণালয়ে সংস্কার কাজের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ প্রাপ্তি সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ বাস্তবায়ন করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅনলাইন নিলামে উঠছে ফেব্রিক্সসহ ৪৯ লট পণ্য
পরবর্তী নিবন্ধবাংলাদেশের সংখ্যালঘু পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে ভারত : জয়শঙ্কর