অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কামরুজ্জামান বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করায় সাধারণ মানুষ কষ্টে দিনাতিপাত করছে। মানুষের কষ্ট লাঘবে নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অসাধু সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে।
গতকাল রোববার সকালে নগরীর সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মাসিক উন্নয়ন সমন্বয় সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের মূল্য সহনীয় রাখতে বাজার মনিটরিং কার্যক্রম আরো জোরদার করা হবে জানিয়ে মো. কামরুজ্জামান বলেন, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও প্রতিষ্ঠানগুলো পাইকারি ও খুচরা বাজারে একযোগে কার্যক্রম শুরু করেছে। অসাধু ব্যবসায়ীদেরকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করা হচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটগুলোর উৎস চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে বাজার ব্যবস্থা স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। কোনো সিন্ডিকেট, ব্যবসায়ী দল যাতে আপনাদের বাধা দিতে না পারে সেজন্য সরকার ও প্রশাসন সর্বোত্তম সহযোগিতা করবে। সভায় জেলা পুলিশ সুপার রায়হান উদ্দিন খান বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে জনগণ অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। বন্যার কারণে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি নাকি অসাধু সিন্ডিকেটের কারণে বৃদ্ধি পেয়েছে তা দেখতে হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণে উপজেলা প্রশাসন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করলে সেখানে সহযোগিতা করার জন্য থানা পুলিশের টিম থাকবে। এ বিষয়ে থানাগুলোর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জেলা পর্যায়ে মার্কেটে তদারকির জন্য একজন এডিশনাল এসপির নেতৃত্বে জেলা পুলিশের বিশেষ টিম থাকবে।
জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. দিদারুল আলম বলেন, বিভিন্ন উপজেলায় মডেল মসজিদের কার্যক্রমসহ জেলা পরিষদের সকল কার্যক্রম সুন্দরভাবে চলছে। কোনো প্রকল্পে যাতে অনিয়ম না হয় সে বিষয়টি নিরপেক্ষভাবে তদারকি অব্যাহত রয়েছে।
সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধের লক্ষ্যে সারা দেশের ন্যায় আগামী ২৪ অক্টোবর থেকে চট্টগ্রাম জেলায় অনুষ্ঠিত হবে মাসব্যাপী জাতীয় হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকাদান ক্যাম্পেইন। চলবে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত। শুক্রবার ও সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত মোট ১৮ দিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৫ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ছাত্রী/কিশোরী (১০–১৪ বছর) ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বহির্ভূত কমিউনিটির ১০–১৪ বছর বয়সী মোট ৩ লাখ ৫১ হাজার ৮৪৮ জন কিশোরীকে এইচপিভি প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সিটি কর্পোরেশন এলাকায়ও প্রায় ১ লাখ ৩১ হাজার কিশোরীকে এইচপিভি প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিশোরীদের বিনামূল্যে এই ব্যয়বহুল টিকা প্রদান করা হবে। ১৭ ডিজিটের জন্মনিবন্ধনের মাধ্যমে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন ও জন্মনিবন্ধনবিহীন কিশোরীদের হোয়াইট লিস্টিংয়ের মাধ্যমে ক্যাম্পেইনের প্রথম ১০ দিন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও স্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রসমূহে এবং পরবর্তী ৮ দিন স্থায়ী ও অস্থায়ী কেন্দ্রসমূহে টিকা দেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার প্রতিনিধিদের সমন্বিত উদ্যোগে জাতীয় এইচপিভি টিকাদান ক্যাম্পেইন সফল করা হবে। এ লক্ষ্যে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এইচপিভি টিকাদান ক্যাম্পেইন বাস্তবায়ন করতে সকল প্রস্তুতি রয়েছে। পাশাপাশি ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতায় সর্বত্র লিফলেট বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।
সমন্বয় সভায় জেলা পরিষদ, গণপূর্ত বিভাগ, পল্লী বিদ্যুৎ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও জেলা মৎস্যসহ বিভিন্ন দপ্তরের কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়। এ সময় বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিন (মীরসরাই), মিলটন বিশ্বাস (সাতকানিয়া), মোজাম্মেল হক (ফটিকছড়ি), ইনামুল হাছান (লোহাগাড়া), মাসুমা জান্নাত (কর্ণফুলী), জেসমিন আক্তার (বাঁশখালী), অংগ্যজাই মারমা (রাউজান), কে এম রফিকুল ইসলাম (সীতাকুণ্ড), এবিএম মশিউজ্জামান (হাটহাজারী), মাহমুদুল হাসান (রাঙ্গুনিয়া), হিমাদ্রী খীসা (বোয়ালখালী) ও ইশতিয়াক ইমন (আনোয়ারা)।