নিজ নিজ কর্মফল অবশ্যই ভোগ করতে হবে

হেলাল চৌধুরী | বৃহস্পতিবার , ১৫ জুন, ২০২৩ at ৫:০০ পূর্বাহ্ণ

একটা গল্প বলি শুনুন। খুব কমন একটা গল্প। ইন্টারনেটের কল্যাণে হয়তো অনেকেই গল্পটা শুনে থাকবেন। অনেক মোটিভেশনাল স্পীকারকেও আমি গল্পটা বলতে শুনেছি।

কিন্তু আজ আমি গল্পটা আমার স্টাইলে বলছি।

নীতিন বাবু রগচটা টাইপের মানুষ। অল্পতেই মাথা গরম করেন। গঞ্জে তার একটা কাপড়ের দোকান আছে। একদিন অতি তুচ্ছ একটা কারণে দোকানের ম্যানেজারকে সবার সামনে একটা থাপ্পড় মেরে বসলেন তিনি।

থাপ্পড় খেয়ে রাগে অপমানে দোকানের ম্যানেজার হনহন করে দোকান থেকে বের হয়ে গেল। দোকানের পাশের গলিতেই তার বাসা। অসময়ে স্বামীকে বাসায় দেখে ম্যানেজারের বউ হন্তদন্ত হয়ে এক গ্লাস পানি নিয়ে আসলো। রাগের চোটে ম্যানেজার এক ঝটকায় গ্লাসটা মাটিতে ছুড়ে ফেলে তার বউকে সজোরে একটা থাপ্পড় লাগিয়ে দিলো।

বেচারি বউ, বিনা অপরাধে থাপ্পড় খেয়ে আর মেজাজ ধরে রাখতে পারলো না। বললো, ‘তোমার সংসার আর করবোনা’। এই বলে ব্যাগ গুছিয়ে বাপের বাড়ি চলে যাবার জন্য বেডরুমের দিকে যাচ্ছিল। হঠাৎ দেখলো, তার এসএসসি পরীক্ষার্থী বড় ছেলেটা লেখাপড়া বাদ দিয়ে রুবিক্স কিউব মিলাচ্ছে। আর যায় কোথায়…! এবার একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো ছেলেটার গালে।

আচমকা থাপ্পড় খেয়ে ছেলেটার মেজাজ গেল চটকে। পাশের রুমে ক্লাস এইটে পড়ুয়া তার ছোট ভাইটা তখন স্কুল থেকে ফিরে একটু রেস্ট নিচ্ছিল। ‘পড়ালেখার নাম নেই, সারাক্ষণ শুধু আরাম করিস!’ এই বলে ছোট ভাইকে একটা থাপ্পড় মেরে দিলো বড় ছেলেটা।

আহা বেচারা! সেতো বাড়ির সবচেয়ে ছোট সদস্য। সে কার উপর মেজাজ ঝাড়বে! রাগে দুঃখে চোখে জল নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল সে।

এদিকে এলাকার পাগলা কুকুরটা তখন তাদের উঠোনে লেজমুখ গুটিয়ে ঘুমাচ্ছিল। ছোট ছেলেটার সমস্ত রাগ গিয়ে পড়লো ঘুমন্ত কুকুরটার উপর। শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে কুকুরটাকে কষে একটা লাথি মেরে বসলো ছেলেটা।

ঘুমন্ত অবস্থায় প্রচণ্ড জোরে লাথি খাওয়া কুকুরটা ঘেউ ঘেউ করে তারস্বরে চিৎকার করতে করতে রাস্তায় পালিয়ে গেল। আহত কুকুরটা রাস্তায় নেমেই এক পথচারীকে কামড় দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করলো। কুকুরটা যে পথচারীকে কামড় দিয়েছিল, সে আর কেউ নয়.. ‘নীতিন বাবু’। কিছুক্ষণ আগে যিনি অতি তুচ্ছ কারণে দোকানের ম্যানেজারকে সবার সামনে থাপ্পড় মেরেছিলেন। একেই বলে কর্মফল! একেই বলে প্রকৃতির বিচার।

গল্পটা এখানে শেষ। এই গল্প থেকে আমরা কী শিখলাম!

একটা বিষয় সত্য এবং চিরন্তন। আর তা হলো… ‘আমাদেরকে আমাদের নিজ নিজ কর্মফল অবশ্যই ভোগ করতে হবে। করতে হবেই।’

প্রত্যেক ক্রিয়ার সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে’। নিউটনের এই সূত্র আমাদের সবারই জানা। এই পৃথিবী অনেকটা নিউটনের তৃতীয় সূত্র মেনেই চলে। এই পৃথিবী কাউকেই কখনো নিজ থেকে কিছু দেয় না। আবার কারো কাছ থেকে কোন কিছু কেড়েও নেয় না। এই পৃথিবী শুধু ফেরত দেয়। আমরা যা কিছু দেবো, ঠিক তাইই ফেরত পাবো। কখনো কখনো পৃথিবী আমাদেরকে সুদ সহ ফেরত দেয়। সোজা কথা, সিম্পল রুল… ‘জাস্ট গিভ এন্ড টেক!’

আপনি কাউকে ঘৃণা দিলে ঘৃণা পাবেন। ভালোবাসা দিলে বিনিময়ে ভালোবাসা পাবেন। অবহেলা দিলে অবহেলা পাবেন। আর কাউকে যদি ঠকান, তবে নিশ্চিত জেনে রাখুন, আপনিও বেদম ঠকবেন। এটা নিশ্চিত।

আমরা অনেকেই পরকালে বিশ্বাস করি। আমাদের বিশ্বাস, পরকাল বলে কিছু একটা আছে। যেখানে আমাদের ভালো এবং মন্দ কাজের জন্য আমাদেরকে পুরস্কৃত অথবা তিরস্কৃত করা হবে।

আমিও পরকালে বিশ্বাস করি। এই পরকালের বিশ্বাসের পাশাপাশি আমি এটাও বিশ্বাস করি যে, প্রতিটি মানুষকে তার ভালোমন্দ কাজের কর্মফল এই পৃথিবীতেই ভোগ করতে হবে। হবেই।

অতএব, সময় থাকতে আমাদের সবারই সাবধান হওয়া উচিত। অন্যের সাথে আমরা কী আচরণ করছি সেটাই ঠিক করে দেবেআসলে আমাদের ভাগ্যে কী ঘটবে!

আমাদের মনে রাখা উচিত, কাউকে কষ্ট দিয়ে, কাউকে অসম্মান করে, কারো অধিকার নষ্ট করে, কাউকে ঠকিয়ে আমরা কেউই কখনও বড় হতে পারবো না। জিততে পারবো না। লাভবান হতে পারবো না।

মানুষতো অনেকভাবেই বাঁচে। এই পৃথিবীতে কজন এমন ভাগ্যবান মানুষ আছে যারা মরে গিয়েও মানুষের ভালোবাসায় বেঁচে থাকতে পারে! জীবনতো একটাই। আসুন ভালোভাবে বাঁচি। ভালোবাসায় বাঁচি। মরে গিয়েও বেঁচে থাকতে বড় সাধ হয় মানুষের ভালোবাসায়।

লেখক : কবি ও গল্পকার

পূর্ববর্তী নিবন্ধহঠাৎ রাজনীতি
পরবর্তী নিবন্ধ‘দারুণ’ আছেন শর্মিলা