নগরের চান্দগাঁও র্যাব ক্যাম্প কার্যালয়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় একজন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপারের (এএসপি) মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুর ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে। নিহত পলাশ সাহা (৩৫) র্যাবের চট্টগ্রাম অঞ্চলে (র্যাব–৭) সিনিয়র সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ওই পুলিশ কর্মকর্তা নিজেই মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেছেন। তবে পুলিশ মৃত্যুর কারণ তদন্ত করছে বলে জানিয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অভিযানের প্রস্তুতি নিয়ে নিজের অফিস কক্ষে প্রবেশ করেন র্যাব কর্মকর্তা পলাশ সাহা। কিছুক্ষণ পর গুলির শব্দ শুনে সহকর্মীরা গিয়ে দেখতে পান চেয়ারে পড়ে আছে পলাশ সাহার রক্তাক্ত দেহ। আর পাশের টেবিলে পাওয়া গেছে একটি চিরকূট। জানা গেছে, পলাশ সাহা বিসিএস ৩৭ ব্যাচের কর্মকর্তা ছিলেন। তার বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায়। তবে তার পরিবারের সদস্যরা ঢাকার সূত্রাপুরে বসবাস করেন।
নগর পুলিশের উপ–কমিশনার (উত্তর) আমিরুল ইসলাম জানান, র্যাবের চান্দগাঁও ক্যাম্প থেকে একজন এএসপিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক উনাকে মৃত ঘোষণা করেন। উনার মাথায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার চিহ্ন আছে। আত্মহত্যার ব্যাপারে তিনি বলেন, এটা তো তদন্তের আগে বলা সম্ভব নয়। আমরা বিষয়টি দেখছি।
জানা গেছে, ঘটনাস্থল থেকে পলাশ সাহার হাতে লেখা একটি চিরকূট উদ্ধার করা হয়েছে। এতে পলাশ সাহা ব্যক্তিজীবনের হতাশার পাশাপাশি মা ও স্ত্রীকে সুখী করতে না পারার আক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন। নিজের মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নন বলেও উল্লেখ করেন।
ওই চিরকুটে লেখা রয়েছে, ‘আমার মৃত্যুর জন্য মা এবং বউ কেউ দায়ি না। আমিই দায়ি। কাউকে ভালো রাখতে পারলাম না। বউ যেন সব স্বর্ণ নিয়ে যায় এবং ভালো থাকে। মায়ের দায়িত্ব দুই ভাইয়ের উপর। তারা যেন মাকে ভালো রাখে। স্বর্ণ বাদে যা আছে তা মায়ের জন্য। দিদি যেন কো–অর্ডিনেট করে।’
এএসপি পলাশ সাহার মেঝ ভাই নন্দ লাল সাহা গণমাধ্যমকে বলেন, দুই বছর আগে ফরিদপুরে চৌধুরীপাড়ায় পলাশের বিয়ে হয়। বিয়ের ৬/৭ মাস পর থেকে পারিবারিক কলহ লেগেই থাকতো। প্রতিদিন কিছু না কিছু নিয়ে পলাশের স্ত্রী সুস্মিতা সাহা পরিবারে ঝামেলা করতো। আমার মা আরতি সাহা পলাশের সঙ্গে চট্টগ্রামে থাকতো এটা পলাশের স্ত্রী মেনে নিতে পারতো না। সে সবসময় মাকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য পলাশকে চাপ প্রয়োগ করতো। পলাশ কিছুতেই মাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে চাইতো না। সে মা ও তার স্ত্রী দুজনকেই ভালোবাসতো। নন্দ লাল সাহা গণমাধ্যমকে আরও বলেন, বুধবার সকালে সামান্য বিষয় নিয়ে আমার মা আরতি সাহা ও ভাই পলাশ সাহার গায়ে হাত তোলে সুস্মিতা সাহা। এটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি আমার ভাই। আর এ কারণেই আমার ভাই পলাশ সাহা আত্মহত্যা করেছে বলে আমাদের ধারণা।
এদিন বিকালে র্যাব–৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) এ. আর. এম. মোজাফফর হোসেনের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে একটি বার্তা পাঠানো হয়। এতে বলা হয়েছে, এএসপি পলাশ সাহা ইস্যু করা অস্ত্র নিয়ে কার্যালয়ে নিজের কক্ষে প্রবেশ করে অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিছুক্ষণ পর ওই কক্ষ থেকে গুলির শব্দ শোনা যায়। তখন সহকর্মীরা গিয়ে কক্ষের ভেতর মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে দেখতে পান। পিস্তলটি নিচে পড়ে ছিল। টেবিলে একটি সুইসাইড নোট পাওয়া যায়। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ময়নাতদন্ত শেষে আরও বিস্তারিত জানানো হবে বলেও তাতে উল্লেখ করা হয়েছে।
বুধবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে এ. আর. এম. মোজাফফর হোসেন আজাদীকে বলেন, মরদেহ ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এখনো আমরা পাইনি। এখন মরদেহ আমাদের হেফাজতে রয়েছে। পরবর্তীতে তার পরিবার আসলে আমরা লাশ হস্তান্তর করবো। এরপর তার পরিবার কি সিদ্ধান্ত নেয় সে অনুযায়ী আমরা আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।